সঞ্চয়পত্র থেকে মে মাসে ৫৫১ কোটি টাকা ঋণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মূল্যস্ফীতির চাপ, আর্থিক সংকট ও বিনিয়োগে নানা শর্তের কারণে কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। নিন্ম ও মধ্যবিত্তদের আয়ের মানুষরা সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে বেশি পরিমাণে ভাঙানোর দিকে ঝুঁকছেন। তবে ঋণাত্মক ধারা কাটিয়ে কিছুটা সামনে এগিয়েছে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করে কিছুটা উদ্বৃত্ত রয়েছে, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৫৫১ কোটি। কিন্তু মার্চে এ খাত থেকে ঋণ পেলেও উল্টো চার হাজার ১৬১ কোটি টাকা সরকারকে তার কোষাগার ও ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করতে হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ছয় হাজার ৬৮০ কোটি টাকার। বিপরীতে ওই মাসে মূল ও মুনাফা বাবদ সরকারকে পরিশোধ করতে হয়েছে ছয় হাজার ১২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৫৫১ কোটি টাকায়।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ৭৪ হাজার ৭১৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৭৭ হাজার ৭৭৮ টাকা। সব মিলিয়ে ১১ মাসে যা বিনিয়োগ হয়েছে তার চেয়ে তিন

হাজার ২৯ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছে সরকার। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার কোনো ঋণ পায়নি। উল্টো আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের নগদায়নের চাপে মূল ও মুনাফাসহ ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব রকম সঞ্চয়পত্রের সুদহার দুই শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগসীমা কমিয়ে আনা হয়। এছাড়া ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। দুর্নীতি বা কালো টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধে ক্রেতার তথ্যের একটি ডেটাবেস তৈরি হয়েছে। এসব কড়াকড়ির প্রভাবে বর্তমানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে ঠেকেছে।

বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৫২, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৭৬, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮, তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। কয়েক দফায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হলেও এখনও তা ব্যাংকের তুলনায় বেশি।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একসময় কোনো স্কিমের মেয়াদ শেষ হলে আবার সেখানেই বিনিয়োগ করতেন বেশিরভাগ গ্রাহক। তবে এখন যাদের সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, তারা আর নতুন করে এখানে বিনিয়োগ করছেন না। ফলে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, যার কারণে বিক্রির চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ বেশি করা হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০