সঞ্চয়পত্রই বিনিয়োগে বড় বাধা

সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে এটি কমানোর জন্য আলাপ-আলোচনা হয়েছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। কারণ সঞ্চয়পত্রের নিশ্চিত লাভ, কেন বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে আসবেন? এ সঞ্চয়পত্রই বাজারে বিনিয়োগে বড় বাধা। বর্তমান অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন সঞ্চয়পত্রের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা হবে কিন্তু সেটি কতটুকু পালন করা হবে সেটাই দেখার বিষয়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সিনিয়র নিউজ কনসালটেন্ট রায়হান এম চৌধুরী এবং ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট সাইফ ইসলাম দিলাল।
রায়হান এম চৌধুরী বলেন, ব্যাংক খাতের যে অবস্থা তাতে এ খাতের কোনো উন্নয়ন দেখা যাচ্ছে না। একদিকে তারল্য সংকট অন্যদিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক। ইতোমধ্যে সরকার দেশ, অর্থনীতি এবং ব্যাংকের উন্নয়নের স্বার্থে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজে আসছে না। কারণ গত ছয় মাসে ব্যাংক খাতে আরও বেশি তারল্য সংকট দেখা গেছে। যদি ব্যাংক খাতের মূল সমস্যা সমাধান না করা যায়, সেক্ষেত্রে এ খাতে উন্নয়নে যতই পদক্ষেপ বা উদ্যোগ নেওয়া হোক কোনো কাজে আসবে না। আর স্বল্প সময়ে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। ব্যাংক খাতের আরেকটি বড় সমস্যা সুশাসনের অভাব। শুধু ব্যাংক নয়, দেশের প্রত্যেকটি আর্থিক খাতসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে এ সমস্যা রয়েছে। যদি প্রত্যেকটি খাতে সুশাসন নিশ্চিত না করা যায়, এ সমস্যা রয়েই যাবে।
তিনি আরও বলেন, গতকাল বাজার সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি সাময়িকভাবে বাজারকে ইতিবাচক রাখতে পারে। দুই থেকে তিন সপ্তাহ ভালো থেকে আবার যাতে বাজার পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে না আসে সেজন্য সঠিকভাবে নজরদারি রাখতে হবে। এর পাশাপাশি বাজারের মূল বিষয়গুলোর প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিশেষ করে কোম্পানিগুলোর সুশাসন, বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। যাতে কোনো খারাপ মানের কোম্পানি না আসতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। আর ভালো মানের কোম্পানি বাজারে আনার চেষ্টা করতে হবে। দেশে ভালো মানের কোম্পানি অনেক রয়েছে।
সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হচ্ছে না। দীর্ঘদিন এটি কমানোর জন্য অনেক আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। কথা হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের নিশ্চিত লাভ, কেন বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে আসবেন। এ সঞ্চয়পত্রই বাজারে বিনিয়োগে বড় বাধা। বর্তমান অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন সঞ্চয়পত্রের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা হবে কিন্তু সেটি কতটুকু পালন করা হবে সেটাই দেখার বিষয়। আবার ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক। বেশিরভাগ ব্যাংকই এখন বেহাল অবস্থা। আর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ জনগণের টাকা দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সময় এসেছে।
তিনি আরও বলেন পুঁজিবাজারের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। বাজারকে কীভাবে ভালো করা যায়, এ জন্য সম্মিলিতভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সরকারের উচ্চ মহল এগিয়ে আসতে হবে। যদি সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, দেশের বড় মেগা প্রকল্প ও শিল্পায়ন পুঁজিবাজার নির্ভর করতে হবে, ব্যাংকনির্ভর নয়। যদি দীর্ঘমেয়াদি অর্থ পুঁজিবাজার থেকে নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের দিকে না গিয়ে বাজারের প্রতি ঝোঁক বেশি থাকবে। বিনিয়োগকারীর কাছে পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে। ফলে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে এবং বাজার সম্প্রসারিত হবে। আর ব্যাংক হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা এবং পুঁজিবাজার হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা। কিন্তু ব্যাংক স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় বিনিয়োগ করে। এতে ব্যাংক খাতে একটা অস্থিরতা বিরাজ করে। ব্যাংক খাতের এ বিষয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ১৯৯৬ সালে বাজার ধসের পর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কী উন্নয়ন হয়েছে। হ্যাঁ, তবে বাজারের কাঠামোগত কিছু উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারী এখন থেকে কোনো লাভ নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারছে না বরং আরও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০