সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে ১৩ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সঞ্চয়পত্রের পেছনে সরকারের ব্যয় বেড়েই চলেছে। আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে যে বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হয়েছে, তা চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রাক্কলিত বরাদ্দের তুলনায় ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আর অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও এর সুদহার না কমালে ভবিষ্যতে এটি সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যার পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শুধু সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধেই ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ বাড়ছে। আর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার চেয়ে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হচ্ছে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে ১৬ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছিল ১৪ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছর যা ছিল ১০ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্রের বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার নির্দিষ্ট কোনো সীমারেখা নির্ধারণ না করায় এটির বিক্রি ব্যাপকহারে বাড়ছে। বাজেট ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্য নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত এ লক্ষ্যের চেয়ে অনেক বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসেই এ ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। মূলত ব্যাংক আমানতের সুদের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদ অনেক বেশি হওয়া এবং পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো না থাকায় সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে বাজেটের পর ব্যাংক আমানতের সুদের সঙ্গে সমন্বয় করে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে আনা হবে বলে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিত। তিনি জানান, সঞ্চয়পত্রের সুদ ব্যাংক আমানতের সুদের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকা দরকার। তবে সেটা আমানতের সুদের সঙ্গে এর ব্যবধান ১ থেকে দেড় শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম শেয়ার বিজকে বলেন, কম খরচে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সরকার বেশি ব্যয়ের সঞ্চয়পত্র থেকেই অর্থ সংগ্রহ করে চলেছে। তাছাড়া একজন মানুষের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে সর্বোচ্চ যে সীমা রয়েছে তা অনেক বেশি। এটি আরও কমানো উচিত। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্র মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষদের সুবিধা দেওয়ার জন্য চালু করা হলেও তারা সে সুবিধা পাচ্ছে না। বরং উচ্চবিত্তরাই এটিতে বিনিয়োগ করছেন। এমনকি অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও এখানে বিনিয়োগ করছে। সঞ্চয়পত্রের পেছনে সরকারের ব্যয় এভাবে অব্যাহত থাকলে তা আমাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১