সঞ্চয়পত্রের সুবিধা পাচ্ছে না প্রকৃত টার্গেট গ্রুপ

মাসুম বিল্লাহ: সমাজের অবহেলিত, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, শারীরিক প্রতিবন্ধী, মহিলা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনতে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলো চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সে লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না সঞ্চয়পত্র। অনেক ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ধনীদের দখলে চলে যাচ্ছে এটি। এ ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। আর এর সঠিক বণ্টন নিশ্চিতে একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ করার কথা ভাবছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এ বিষয়ে অর্থ বিভাগে সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় সঞ্চয়পত্রের ব্যবস্থাপনা ও কার্যক্রম আধুনিকায়নে বিনিয়োগকারীদের পূর্ণাঙ্গ ডেটাবেজ প্রস্তুত-সংক্রান্ত ওই সভায় উল্লেখ করা হয়Ñজাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলো সমাজের অবহেলিত, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, শারীরিক প্রতিবন্ধী, মহিলা ও শিশু, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার জন্য প্রণীত হলেও নানাবিধ কারণে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না। এতে আরও জানানো হয়, জাতীয় সঞ্চয় স্কিম প্রবাসীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে বৈদেশিক রেমিট্যান্স সংগ্রহে অনুঘটকের কাজ করে। এ ছাড়া জাতীয় বাজেট অর্থায়ন, মূল্যস্ফীতি প্রতিরোধ ও সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে এসব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সঞ্চয় স্কিম ও সঞ্চয়পত্রের প্রভাব প্রত্যক্ষ। সরকারের সার্বিক ঋণ ব্যবস্থাপনার গুণগত মানোন্নয়ন, সরকারের প্রতিটি আর্থিক লেনদেনে পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, জনগণকে প্রদত্ত আর্থিক সেবা উন্নত ও সহজকরণের লক্ষ্যে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের একটি ওয়েব-ভিত্তিক স্বয়ংসম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ তৈরি করা প্রয়োজন।

ক’বছর আগে জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল (এনএসএস) প্রণয়ন করেছিল পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিইডির সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য সঞ্চয় স্কিমের প্রয়োজনীয়তা অনেক। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যাদের এ থেকে সুবিধা পাওয়ার কথা, তারা যাতে এতে বিনিয়োগ করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কোনোভাবেই আসা ঠিক নয়।

অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই সভায় সঞ্চয়পত্র ইস্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডাকঘরসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের ব্যবস্থাপনা ও কার্যক্রম আধুনিকায়নে বিনিয়োগকারীদের পূর্ণাঙ্গ ডেটাবেজ প্রস্তুত-সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করতে হবে। ডেটাবেজ তৈরির জন্য কি ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট, জনবল ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজনÑতা কর্মসূচির পিপিএনবিতে সংযুক্ত করে পিপিএনবি সংশোধনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানো হবে। এটি একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ হবে; ফলে যে কোনো স্থান থেকে তথ্য সিস্টেমে এন্ট্রি করলে তা কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত হবে এবং শুধু অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই এ ডেটাবেজে প্রবেশাধিকার পাবে।

এদিকে সঞ্চয়পত্র সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচি হলেও তার সুফল প্রকৃত সুবিধাভোগীরা না পাওয়ার পেছনে কাঠামোগত দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা। সঠিক পর্যবেক্ষণ না থাকায় অনেক প্রাতিষ্ঠানও এখানে বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে বলে তারা মনে করেন। তাছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনার যে সীমা নির্ধারণ করা আছে, তাতে কেবল ধনীরাই সুযোগ নিতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সঞ্চয়পত্র সুবিধা যাদের প্রাপ্য, তাদের কাছে এটা পৌঁছে দিতে হলে পুরো প্রক্রিয়াটাই ডিজিটাইজড করতে হবে। এর সঙ্গে এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংযুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট আয়সীমা বেঁধে দেওয়া উচিত। যাতে উচ্চ আয়ের মানুষ এটি কিনতে না পারে। আর উচ্চ আয়ের মানুষ চিহ্নিত করতে এনবিআরের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।’ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যাতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে না পারে, তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করার ওপর জোর দেন তিনি।

সাধারণত ব্যাংক আমানতের সুদের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বেশি থাকে। সমাজে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলদের সুবিধা দিতেই সরকার এ বিনিয়োগের উচ্চ সুদ পরিশোধ করে। কিন্তু তার সুবিধা প্রকৃত টার্গেট গ্রুপ পাচ্ছে না।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০