সঞ্চয়ের মানসিকতা তৈরি করুন

বিপদে না পড়লে কে শুভাকাঙ্খী, আর কে শুভাকাঙ্খী নয়, তা বোঝা যায় না। আমরা অনেক সময় হিসাব নিকাশ না করে অনেকের কাছে টাকা জমা রাখি, এটা ঠিক নয়। অনেকেই অবার নামসর্বস্ব ভুয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট অতি উচ্চ মুনাফার আশায় কষ্টের অর্থ জমা রাখেন। কিছুদিন পরে দেখা যায়, ভুয়া প্রতিষ্ঠানটির দরজায় বড় একটা তালা ঝুলছে। চোখের জল হয় একমাত্র সম্বল।

কে আপনার দুর্দিনে উপকার করবে, কার কাছ থেকে আপনি সাহায্য পাবেন, সেই প্রত্যাশা করা ছেড়ে দেন। যদি বিপদের সময় সহায়তা পান, তবে অবশ্যই ভালো। কিন্তু যদি না পান, তবে নিজের সম্বল দিয়েই বিপদ থেকে উতরে যাবার উদ্ধার পাবার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া, আমাদের আরও মনে রাখতে হবে, সুযোগ কখনো বলে কয়ে আসে না। অনেক সময় সঞ্চিত অর্থের অভাবে অনেক বড় সুযোগও হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই, সবসময় মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষদের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। এতে করে, সুযোগের সদ্ব্যবহারের পাশাপাশি অনেক ধরনের বিপদ থেকেও পার পাওয়া যায়।

মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য সঞ্চয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনি মাসে ৫০,০০০ টাকা আয় করেন কিন্তু মাস শেষে আপনার কোন সঞ্চয় নেই, তাহলে এই আয়ের কোন মূল্য নেই। কিন্তু আপনি মাসে ২০,০০০ টাকা আয় করে ৪,০০০ টাকা সঞ্চয় করেন, সেটা অবশ্যই ইতিবাচক এবং আয়েরও মূল্যায়ন থাকে। সঞ্চয়ের যদি কোন প্রকার সুযোগ না থাকে, সেটা ভিন্ন কথা। তবে আমাদের আমাদের দেশের মানুষের অপব্যয়ের একটা বাতিক রয়েছে। অনেকেই লোক দেখানো খরচ করতে অভ্যস্ত। দিন শেষে যে তারই ক্ষতি হলো, সেই বিচার বিবেচনাবোধটুকুও নষ্ট হয়ে গেছে। তবে আমাদের আমাদের দেশের মানুষের অপব্যয়ের একটা বাতিক রয়েছে। অনেকেই লোক দেখানো খরচ করতে অভ্যস্ত। দিন শেষে যে তারই ক্ষতি হলো, সেই বিচার বিবেচনাবোধটুকুও নষ্ট হয়ে গেছে।

অনেক সময় দেখা যায়, একজন ব্যক্তি ভালো বেতনে চাকরি করেন। কিন্তু আত্মীয়-স্বজন,পরিবারের অনেক অন্যায় আবদার মেটাতে যেয়ে তার সঞ্চয়ের ঝুলি শূন্য থেকে যায়। বড় ধরনের বিপদে পড়লে, অন্যের অনুগ্রহের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আবার অনেকেই আছেন, তাদের মাসিক সামান্য সঞ্চয় দিয়ে ডিপিএস করে মোটামুটি বড় অংকের টাকা জমিয়ে ফেলেন। সেই টাকা দিয়ে তারা নিজেদের কিংবা পরিবারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।

একটা ঘটনা দিয়ে লেখাটা শেষ করব। ১৯৯৬ কিংবা ১৯৯৭ সালের কথা। রশিদা বেগম (ছদ্মনাম) মানুষের বাড়ি বাড়ি ছুটা বুয়ার কাজ করে। মধ্য বয়সী এই নারীর স্বামী রিক্সা চালায়। রশিদা যে বাসায় কাজ করত, সে বাড়ির গৃহকর্ত্রী রশিদাকে ব্যাংকে ডিপিএস খোলার পরামর্শ দিল। এতে করে কিছু টাকা ব্যাংকে জমা হবে। পরে একটা কাজে আসবে। সে সময় যারা কিছুটা বোঝে অর্থাৎ ১৯৯৬, ১৯৯৭ সালের দিকে, সবাই ডিপিএস খোলার জন্য ব্যাংকের কাউন্টারে লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকত।

বলা যায়, ডিপিএস খোলার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল সে সময়। কিন্তু সমস্যা ছিল অন্যখানে। রশিদা কিংবা তার স্বামী শুধু নাম লিখতে পারত। আর কিছুই জানতো না। যাই হোক, সেই বাড়ির গৃহকর্তা রশিদার স্বামীকে নিয়ে সোনালী ব্যাংকে যেয়ে সকল ফরম পূরণ করে মাসিক ৫০০ টাকার একটি ডিপিএস খুলে দিলেন। রশিদার স্বামী লেখাপড়া জানা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে টাকা জমার ফরম পূরণ করে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে আসতো।

এভাবে ১০ বছর প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে জমা দিয়ে ১০ বছর পর তিনি খুব সম্ভবত ১,২৫,০০০ টাকা পেলেন। ২০০৭ সালে সেই টাকা দিয়েই ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠালেন। এখন তাদের অবস্থা পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গেছে। রশিদা বেগমকে আর মানুষের বাসায় কাজ করতে হয়না। স্বামী একটা মুদি দোকান চালায়। অভাব অনটন আর স্পর্শ করতে পারেনি । এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি ডিপিএস টা না থাকতো, তবে রশিদার পরিবারের পক্ষে একসাথে লক্ষাধিক টাকা জমানো কখনো সম্ভব হতো না। অল্প অল্প সঞ্চয়, একটা সময় ভাগ্য ফেরাতে সহায়তা করেছে।

লেখক-রিয়াজুল হক, অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০