Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 3:42 am

সঠিক চাষে বেশি ফলন

গভীর, সুনিষ্কাশিত, উর্বর দো-আঁশ মাটি আম চাষের জন্য ভালো। বর্ষা শুরুর আগে গর্ত করতে হবে। পানি দাঁড়ায় না এমন উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। কয়েকবার চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল এবং আগাছামুক্ত করতে হবে। ৭৫ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতায় গর্ত করতে হবে। গর্তের উপরের অর্ধেক অংশের মাটি এক পাশে এবং নিচের অংশের মাটি অন্য পাশে রাখতে হবে। গর্ত থেকে মাটি উঠানোর পর ১০ দিন পর্যন্ত গর্তটিকে রোদে শুকাতে হবে।
চারা রোপণের সময় চারার গোড়ার বলটি যেন ভেঙে না যায় এবং চারা গোড়াটি প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাটির নিচে যেন ঢুকে না যায়। রোপণের পর চারাটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে। বিকেলের দিকে চারা অথবা কলম রোপণ করা ভালো। রোপণের পর সেচ দিতে হবে।
দ্রæত বর্ধনশীল আমের জাত বা বড় আকৃতির গাছ সাধারণত ১২ মিটার দূরত্বে লাগাতে হয়। এক বিঘা জমিতে ৯টি গাছ লাগানো যাবে। মধ্যম আকৃতির গাছ ১০ মিটার দূরত্বে লাগানো যাবে। এক বিঘা জমিতে ১৩টি গাছ লাগানো যাবে। খাটো আকৃতির জাত বারি আম-৩ সাধারণত ৬ থেকে ৮ মিটার দূরত্বে লাগানো যায় এবং এক বিঘা জমিতে ২০ থেকে ২৭টি গাছ লাগানো যায়। রোপণ দূরত্ব নির্ভর করে আমের জাতের ওপর।

সার
প্রতি গর্তে ১০ কেজি গোবর সার, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ৫০ গ্রাম জিংক সালফেট ও ১০ গ্রাম বোরিক এসিড উপরের অংশের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। উপরের অর্ধেক অংশের মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট না হলে প্রয়োজনে পাশ থেকে উপরের মাটি গর্তে দিতে হবে। গর্তের নিচের অংশের মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করা যাবে না।
সেচ
চারা গাছের দ্রæত বৃদ্ধির জন্য ঘন ঘন সেচ দিতে হবে। ফলন্ত গাছে মুকুল ফোটার শেষ পর্যায়ে ১ বার। পরে আম যখন মোটর দানার আকৃতি ধারণ করে তখন আরও একবার সেচ দিতে হবে। রিং অথবা বেসিন পদ্ধতি আম গাছে সেচ প্রদানের জন্য উত্তম।

ছাঁটাইকরণ
গাছের প্রধান কাণ্ডটি যাতে সোজাসুজি এক থেকে এক দশমিক পাঁচ মিটার হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে গাছের গোড়ার সব ডাল ছেঁটে দিতে হবে। গাছ রোপণের পর গাছের বয়স চার বছর না হওয়া পর্যন্ত গাছের মুকুল ভেঙে দিতে হবে। নাহলে গাছটি দুর্বল হয়ে যাবে।

রোগ
অ্যানথ্রাকনোজ নামক রোগের আক্রমণে গাছের পাতা, কাণ্ড, মুকুল ও ফলে ধুসর বাদামি রঙের দাগ পড়ে। এ রোগে আক্রান্ত মুকুল ঝড়ে যায়, গায়ে কালচে দাগ হয়। আম পচে যায়।
প্রতিকার
গাছে মুকুল আসার পর ফুল ফোটার আগে প্রতি লিটার পানিতে শূন্য দশমিক ৫ মিলি. টিল্ট-২৫০ ইসি মিশিয়ে অথবা ডাইথেন
এম-৪৫,২ গ্রাম স্প্রে করতে হবে। আমের আকার মোটর দানার মতো হলে দ্বিতীয় বার স্প্রে করতে হবে।

ফল সংগ্রহ
আমের বোটায় হলুদাভ রং ধারণ করলে বা গাছ হতে এক থেকে দুটি আধাপাকা আম পড়া আরম্ভ করলে আম সংগ্রহ করতে হবে। আম ঝাকি দিয়ে না পেড়ে জালিযুক্ত বাঁশের কোটার সাহায্যে সংগ্রহ করা উত্তম। সংগ্রহের পর বোটাটি নিচের দিকে রাখলে বোটার কশ আমের গায়ে লাগবে না। বোটার কষ গায়ে লাগলে আমের উপরিভাগ আঠালো হয়ে যায়। পাকা আমের ওপর তেল চিটচিটে ছোপ পড়ে।

শিপন আহমেদ