জীবনের কোনো না কোনো সময়ে কোমরে ব্যথা অনুভব করেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। চিকিৎসাশাস্ত্র মতে, মেরুদণ্ডের নিচের হাড়ের মধ্যবর্তী ডিস্কের পরিবর্তনের ফলে কোমর ব্যথার সূত্রপাত। বয়স বাড়ার সঙ্গে এ রোগটি জেঁকে বসে।
কারণ
# ভারী বস্তু তোলা
# মেরুদণ্ডের অতিরিক্ত নড়াচড়া
# একটানা বসে থাকা
# একটানা দাঁড়িয়ে কাজ করা
# মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়া
# মেরুদণ্ডের মাংসপেশি, লিগামেন্ট মচকানো বা আংশিক ছিঁড়ে যাওয়া
# দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্কে সমস্যা
# কশেরুকার অবস্থান পরিবর্তন
# বয়সজনিত মেরুদণ্ডে ক্ষয় বা বৃদ্ধি
# অস্টিওআথ্রাইটিস বা গেঁটেবাত, অস্টিওপোরোসিস, এনকাইলজিং স্পনডিলাইটিস
# মেরুদণ্ডের স্নায়ুবিক সমস্যা
# টিউমার, ক্যানসার, বোন টিবি
# কোমরের মাংসে সমস্যা
# বিভিন্ন ভিসেরার রোগ বা ইনফেকশন
# স্ত্রীরোগজনিত সমস্যা
# মেরুদণ্ডের রক্তবাহী নালির সমস্যা
# অপুষ্টি
# মেদ বা ভুঁড়ি, অতিরিক্ত ওজন
লক্ষণ
# অনেকক্ষণ বসে কিংবা দাঁড়িয়ে থাকা
যায় না
# ব্যথার সঙ্গে পায়ে শিনশিন বা
ঝিনঝিন-জাতীয় ব্যথা নামতে বা
উঠতে পারে
# ব্যথা ধীরে ধীরে বাড়তে পারে
# হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে
# নড়াচড়া বা কাজকর্মের সময় ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে
# কোমরে থাকতে পারে বা কোমর থেকে পায়ের দিকে নামতে পারে ব্যথা
# হাঁটতে গেলে পা খিচে আসে বা আটকে যেতে পারে
# ব্যথা দুই পায়ে হতে পারে বা যে কোনো এক পায়ে
# অনেক সময় বিছানায় শুয়ে থাকলে ব্যথা কিছুটা কমে আসে
এভাবে চলতে চলতে একসময় রোগীর কোমর ও পায়ের মাংসপেশির ক্ষমতা কমে আসে। মাংসপেশি শুকিয়ে যেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারেন।
প্রতিকার
চিকিৎসাবিজ্ঞানে ফার্মাকোথেরাপি, ফিজিওথেরাপি, সার্জারি প্রভৃতির উল্লেখ রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসকরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। তবে জীবনাচরণে পরিবর্তন এনে কোমরা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যেমন:
# দৈনন্দিন কাজে সতর্ক হতে হবে। কোমর ভাঁজ করে কিংবা ঝুঁকে কোনো বস্তু না তুলে হাঁটু ভাঁজ করে তুলুন
# কিছু বহন করার সময় ঘাড়ের ওপর তোলা যাবে না
# পিঠের ওপর ভারী কিছু বহন করার সময় সামনের দিকে ঝুঁকুন
# বসে থাকার সময় চেয়ারটি টেবিল থেকে বেশি দূরে নেবেন না
# সামনে ঝুঁকে কাজ করা যাবে না
# কোমরের পেছনে সাপোর্ট নিতে পারেন
# এমনভাবে বসুন যেন উরু মাটির সমান্তরালে থাকে
# নরম গদি বা স্প্রিংযুক্ত সোফা বা চেয়ারে বসা ভালো নয়
# ১০ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে থাকা উচিত নয়
# হাঁটু না ভেঙে সামনের দিকে ঝুঁকবেন না
# দীর্ঘক্ষণ হাঁটা বা দাঁড়ানোর প্রয়োজন হলে উঁচু হিল পরবেন না
# অনেকক্ষণ দাঁড়াতে হলে কিছুক্ষণ পরপর শরীরের ভর এক পা থেকে অন্য পায়ে নিন
# দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলে ছোট ফুট রেস্ট ব্যবহার করতে পারেন
# উপুড় হয়ে শোবেন না
# ভাঙা খাট, ফোম বা স্প্রিংয়ের খাটে শোওয়া যাবে না
# সমান তোশক ব্যবহার করতে হবে
#বিছানা শক্ত, চওড়া ও সমান হতে হবে
# গাড়ি চালানোর সময় স্টিয়ারিং হুইল থেকে দূরে সরে বসবেন না। সোজা হয়ে বসুন
# ভ্রমণের সময় লাম্বার করসেট ব্যবহার করুন
খাদ্যাভ্যাস
গরু ও খাসির মাংস খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিন। একই সঙ্গে ডাল, মিষ্টিজাতীয় ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। শাকসবজি, তরিতরকারি, ফলমূলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা বাড়িয়ে দিন। দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে বাদ দিন।