হাইওয়ে পুলিশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সড়কে চাঁদাবাজির ক্ষেত্র ‘অনেক বেশি প্রসারিত’। দেশের গণমাধ্যম তার এ মন্তব্যকে শিরোনাম করেছে।
যতবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সংগঠনের বিভিন্ন সভায় অতিথি হিসেবে অংশ নিয়েছেন, অনেকবারই শুনতে হয়েছে কিছু অপ্রিয় কথা। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পণ্যের দাম বেশি হওয়ার একটা বড় কারণ পণ্য পরিবহনের পথে পথে চাঁদাবাজি। পণ্য পরিবহনের সময় প্রতিটি ট্রাকে রসিদ দিয়ে চাঁদা আদায় করা হয়। এটা হচ্ছে পুলিশের ছত্রছায়ায়। কিছু লোক ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবের অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি করেন কিন্তু পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করে না বা করতে পারে না, এটা যেমন সত্য, তার চেয়েও দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের একটা অংশের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির গুরুতর অভিযোগ আছে। সারাদেশে পুলিশ ৫০-১০০ টাকার জন্য গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে রাস্তা আটকে রাখে এমন অভিযোগও শুনতে হয়েছে। এবার খোদ মন্ত্রীই বলেছেন, সড়কে চাঁদাবাজির ক্ষেত্র ‘অনেক বেশি প্রসারিত’।
বাংলাদেশের যেকোনো সড়কে কিছু সময় দাঁড়ালেই খোলা চোখে দেখা যাবে পুলিশ কীভাবে ট্রাক, বাস আটকে চাঁদা ও উৎকোচ আদায় করে। শুধু তা-ই নয়, আড়ালে আবডালে সাধারণ মানুষের নজর থকে গাড়ির চালক-হেলপারের সঙ্গে লেনদেন করে কি না। পুলিশের কাজ অনিয়মের শাস্তি বিধান করা এবং সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। মাঝেমধ্যে পুলিশ সপ্তাহে পোস্টারও দেখা যায়, ‘সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ট্রাফিক আইন মেনে চলা’। পুলিশের কিছু কর্মকাণ্ডে এই সঠিক কথা নিয়েও সাধারণ ব্যঙ্গ করে। অনেকের মনে আছে, ২০১৩ সালে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদক বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে এক পণ্যবাহী ট্রাকের সহযাত্রী হয়ে দেখেছিলেন, ঘাটে ঘাটে কীভাবে পুলিশ চাঁদা নেয়। সে সময় বগুড়া থেকে চট্টগ্রামে ট্রাক ভাড়া ছিল ৩০ হাজার টাকা আর ঘাটে ঘাটে চাঁদা গুনতে হয়েছে ২২ হাজার টাকা।
গত এক যুগে পণ্য পরিবহনে প্রকাশ্য বা গুপ্ত চাঁদাবাজি কমেনি, বরং বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মনে রাখা প্রয়োজন, পরিবহনে যে চাঁদাবাজি হয়, সেটি ব্যবসায়ীরা পকেট থেকে দেন না। চূড়ান্ত বিচারে ভোক্তাকেই এর দায় বহন করতে হয়। জ্ঞানতাপস অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক পরীক্ষার হলে ইনভিজিলেটর হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এক নবীন প্রভাষককে পরামর্শ দিয়েছেন, নকল ধরতে হয় তাতে নাতে। আমরাও একই ধরনের আহ্বান জানাব সড়কের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের। গুপ্ত চাঁদাবাজি না হয় নিয়ে কারও ছত্রছায়ায় সংঘটিত হয়, কিন্তু প্রকাশ্য চাঁদাবাজির দায় তো নিতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে শূন্য সহনশীলতায় কঠোর ব্যবস্থা নেবে। তাহলে গণপরিবহনে চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধ করতে না হলেও কমিয়ে আনা যাবে।