সড়কে নিহতদের স্মরণে ঢাকায় পদযাত্রা মৃত্যুর মিছিল বন্ধের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সড়কে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে রাজধানীতে পদযাত্রা করেছে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ)। এ পদযাত্রা থেকে সড়ক নিরাপদ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধে কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ চেয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের চতুর্থ বার্ষিকীতে গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ডের পদচারী সেতুর নিচ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হয়।

পদযাত্রা থামে এমইএস বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন কুর্মিটোলা এলাকায়। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই এখানকার ফুটপাতে বাসচাপায় নিহত হয়েছিল শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া। তারা যেখানে নিহত হয়েছিল সে স্থানে সড়কে নিহত সবার স্মরণে আজ একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়।

সহপাঠীর মৃত্যুর পর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমেছিল। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই শুরু হওয়া আন্দোলন ধীরে ধীরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় থেকে বড়দের ভুলত্রুটি ও বিশৃঙ্খলা ধরিয়ে দেয়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে মন্ত্রিসভার সদস্য, রাজনীতিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের বক্তব্য ছিলÑ‘শিশুরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে, বিবেককে জাগ্রত করেছে।’ তখন দায়িত্বশীল সবাই সড়ক নিরাপদ ও বিশৃঙ্খলামুক্ত করতে নানা আশ্বাস দেন। এই আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যায়। তবে সড়কে আগের মতোই দুর্ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় পদযাত্রাটি শুরু হয়। কয়েয়কজন শিক্ষার্থী সাদা কাপড় পরে ‘সড়কে লাশের মিছিল’ লেখা ব্যানার নিয়ে পদযাত্রার সামনে অংশ নেন। পদযাত্রায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের হাতে ‘বি অ্যালার্ট, রোড ইন বিডি ইজ নট সেফ’, ‘গণপরিবহন বৃদ্ধি করো’, ‘জেব্রাক্রসিংয়ের সংখ্যা বাড়াও’, ‘যানজটমুক্ত সড়ক চাই’, ‘আইন প্রয়োগে সরকার ব্যর্থ কেন?’ প্রভৃতি লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল।

শিক্ষার্থীরা নিজেদের দাবি-দাওয়ার কথা জানিয়ে সেøাগানও দেয়। তাদের সেøাগানগুলোর মধ্যে ছিলÑ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘সড়কে ছাত্র মরে, প্রশাসন কী করে?’, ‘পুলিশের গাড়িতে ছাত্র মরে, প্রশাসন কী করে?’, ‘প্রশাসন করে কী, খায়-দায়-ঘুমায় নাকি?’, ‘যে হাত ছাত্র মারে, সে হাত ভেঙে দাও’ প্রভৃতি।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের (নিসআ) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৮ সালে আমরা ৯ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলাম। সেই আন্দোলনের চার বছর পেরিয়ে গেছে। এখনও আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। কোনো দফা এখনও পূরণ হয়নি। তাই বারবার আমাদের রাস্তায় নেমে আসতে হচ্ছে।’

শাহীদুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলিস্তানে পুলিশের রেকার গাড়ির চাপায় এক শিক্ষার্থী নিহত হয়। যে পুলিশের দায়িত্ব নাগরিকদের রক্ষা করা, সেই পুলিশের গাড়ির চাপায় যদি শিক্ষার্থী নিহত হয়, তাহলে তারা কার কাছে বিচার চাইবে? এই দায় সরকারের, প্রশাসনের। সরকার ও প্রশাসন পদক্ষেপ নিলে আর কোনো শিক্ষার্থী সড়কে নিহত হতো না।

পদযাত্রায় অংশ নেয়া রাজধানীর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পদযাত্রায় অংশ নেন নীপা ওয়াহিদ নামের এক অভিভাবক। তিনি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা।

নীপা বলেন, ‘একজন অভিভাবক হিসেবে আমি যদি আমার সন্তানের ন্যায্য দাবির এই আন্দোলনে শামিল না হই, তাহলে সাধারণ মানুষ সচেতন হবে না, সড়কে মৃত্যুও বন্ধ হবে না। পাশাপাশি আমাদের সন্তানদের সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০