শেয়ার বিজ ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গতকাল শুক্রবারও সারাদেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং গুলির ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে হবিগঞ্জে একজন এবং খুলনায় এক পুলিশ সদস্যের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া রাজধানীর উত্তরায় তিনজন গুলিবিদ্ধ ও সারাদেশে কয়েকশ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশার মানুষ আহত হয়েছেন। শতাধিক আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, গতকাল সারাদেশে মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনা এবং জুমার নামাজ শেষে ছাত্র ও জনতার গণমিছিল করা হয়েছে।
উত্তরা: রাজধানীর উত্তরায় জমজম টাওয়ারের সামনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গতকাল বিকাল সোয়া ৪টায় ১১ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ার মোড়ে মাইলস্টোন কলেজের সামনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচি ঘিরে পুরো উত্তরায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বিক্ষোভকারীদের কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জমজম টাওয়ারের সামনে অবস্থান নেন। আর শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন মাইলস্টোন কলেজের সামনে। হঠাৎ আওয়ামী লীগের সমর্থকরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করলে শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া দেয়। এরপর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এরপর পুলিশ জমজান টাওয়ারের সামনে অবস্থান নেয়।
বিকাল ৫টায় শিক্ষার্থীরা আবারও প্রধান সড়কে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী দুলাল হাওলাদার জানিয়েছেন, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় তার মাথায় ইটের আঘাত লাগে। পরে তিনি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তাহমিদ হুজাইফা নামে এক শিক্ষার্থী রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হয়ে উত্তরার একটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। ১১ নম্বর সেক্টরে হঠাৎ হেলমেট পরা ও হাতে অস্ত্র-লাঠিসহ কতিপয় যুবক বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। তখন বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন সড়কে আশ্রয় নেন। তখন পুলিশও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি আরও জানান, এতে অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। তাদের একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তোহিদুল ইসলাম জানান, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ট্রেনিং স্কুলে আগুন দিয়েছে। টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। সংঘর্ষের জেরে উত্তরায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ঢাকা মহানগর: রাজধানীর একাধিক স্থানে গতকাল সকাল থেকে শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, চিকিৎসকেরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই তারা গণমিছিলসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে সকাল ১০টায় জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। শিক্ষার্থী হত্যার বিচারের দাবিতে তারা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেন। সেøাগানে সেøাগানে উত্তাল হয়ে ওঠে চারপাশ।
জুমার নামাজের পর রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। কয়েক ঘণ্টা অবরোধের পর তারা বিকাল ৪টার পর মিছিল নিয়ে শাহবাগে যান। বিকাল সাড়ে ৪টায় শাহবাড় মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। কাছাকাছি সময় ঢাকার ইসিবি চত্বরে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক’শ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের এসব অবস্থান থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেগুলোর বিচার দাবিতে নানা সেøাগান দেওয়া হয়। আটক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করেও সেøাগান দেন তারা।
বেলা সাড়ে ১১টার পরে আফতাবনগরে ব্র্যাক ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। বৃষ্টিতে ভিজে মিছিল নিয়ে তারা রামপুরা ব্রিজ পার হয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে আবার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। এছাড়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শত শত শিল্পী ও সাধারণ মানুষ ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতা হত্যার প্রতিবাদে শামিল হন। তারা নিহতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার এবং হত্যার দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগের দাবি করেন।
বাংলামোটরে পরিকল্পনাবিদরাও মানববন্ধন করেছেন। সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সাংস্কৃতিক শিল্পীগোষ্ঠী উদীচী। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে অন্য কয়েকটি সংগঠন। এ ছাড়া সকালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মেডিকেল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকেরা বিক্ষোভ করেছেন। সকালে বাংলামোটরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সামনে বিক্ষুব্ধ ‘কবি-লেখক সমাজ’ ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। দুপুরে বায়তুল মোকাররম ও প্রেস ক্লাব থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে বিক্ষোভ করেন।
অপরদিকে গতকাল বিকালে শহিদ মিনারে জনস্রোত তৈরি হয়েছে। মিছিল আসছে তো আসছেই। এর যেন শেষ নেই। লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। বেলা ৩টার দ্রোহযাত্রা পরিণত হয় জনসমুদ্রে, যাতে যোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ আপামর জনতা। গণগ্রেপ্তার বন্ধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, আটক শিক্ষার্থী-জনতার মুক্তি, কারফিউ প্রত্যাহার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া ও অসংখ্য শিক্ষার্থী জনতাকে হত্যার দায়ে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একত্র হন তারা। এরপর মিছিল নিয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে, টিএসসি থেকে শহীদ মিনারে এসে জড়ো হন। সেখানে চার দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। রোববারের মধ্যে এসব দাবি না মানলে ফের প্রেস ক্লাব থেকে গণপদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। দাবিগুলো হলো: গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে; কারফিউ তুলে দিতে হবে; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে এবং সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল জুমার নামাজ শেষে শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় যুবলীগের এক কর্মীকে প্রকাশ্যেই অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করতে দেখা গেছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষের এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। প্রকাশ্যেই অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করা ব্যক্তির নাম সুমন। তিনি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাউদ্দিন টিপুর গাড়িচালক।
হবিগঞ্জ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হবিগঞ্জে পুলিশ-আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকালে হবিগঞ্জ শহরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মোস্তাক মিয়া (২৪)। তিনি পেশায় শ্রমিক। মোস্তাকের সঙ্গে কাজ করেন মারুফ হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, মোস্তাক এখানে জুতা কিনতে এসেছিল। এসে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যায়। গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’ হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক বলেন, মোস্তাকের হাতে বড় ধরনের আঘাত ছিল। সেটা গুলি কি না, পরে জানানো যাবে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হবিগঞ্জ শহরের বোর্ড মসজিদ এলাকায় শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিলে পূর্ব টাউন হল এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন জেলা ছাত্রদল ও অন্য দলের নেতা-কর্মীরা। এরপর মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে টাউন হল এলাকায় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে সেখানে থাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু জাহিরের বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় পুলিশ সেখানে এলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। একপর্যায়ে দুই দিক দিয়ে আন্দোলনকারীরা পুলিশের দিকে আসতে থাকেন।
সিলেট: সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘গণমিছিল’ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীরা বাধা ডিঙিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে আটক করেছে। গতকাল বিকাল ৪টায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পার্শ্ববর্তী আখালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী, পুলিশ, সাংবাদিক ও পথচারী আহত হয়েছে। পুলিশের দাবি এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের আখালিয়া এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ তৈরি করেছিলেন। পুলিশ বারবার তাদের সরে যেতে অনুরোধ করেছে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শাবিপ্রবির প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশের বাধায় তারা সেখানে অবস্থান নিতে পারেননি। এরপর আখালিয়া এলাকার মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চাইলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
খুলনা: খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা গণমিছিল কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে বিশাল মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা গল্লামারী এলাকায় পৌঁছালে জিরো পয়েন্টের দিক থেকে পুলিশ টিয়ার শেল ছোড়ে। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের গল্লামারী, জিরো পয়েন্ট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বিকাল ৪টা নাগাদ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্ট দখল নেওয়ার পর পুলিশ আত্মসমর্পণ করার কথা জানায়। এর আগে অনেকেই পুলিশের রাবার বুলেটে গুরুতর আহত হয়েছে। তাদের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেয়া হয়। দুই শিক্ষার্থীকে খুলনার হরিণটানা থানায় পুলিশ আটকে রাখে। তাদের উদ্ধারের জন্য থানার সামনে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। এখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে সুমন নামে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তিনি পুলিশ লাইনসে কর্মরত ছিলেন। রাত পৌনে ৯টায় খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সংঘর্ষে আমাদের ২০-২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং পুলিশ লাইনসের কনস্টেবল মো. সুমন নিহত হয়েছেন। মোজাম্মেল হক বলেন, পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। অথচ আমার এক ভাইকে পিটিয়ে মেরে ফেলল।
অপরদিকে কুমিল্লায় শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে সড়ক অবরোধ করেছেন। তাদের উপর যুবলীগের সদস্যরা হামলা চালিয়েছেন। এছাড়া কিশোরগঞ্জ, নওগাঁও, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন। এছাড়া জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকারম থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে মিছিলটি পল্টন, প্রেস ক্লাব, হাইকোর্ট, মৎস্য ভবন ও শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ শাহবাগ থানার সামনে থেকে তাদের ঘুরিয়ে দেন। সহকর্মী হত্যার বিচার দাবিতে সাংবাদিকদের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক হাসান মেহেদীসহ অন্য সাংবাদিকদের হত্যার বিচার দাবিতে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিকরা। গতকাল দুপুর ১২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়ে ‘গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তার দাবি’তে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবি জানান।
এ সময় মানববন্ধনে অংশ নেয়া আহত সাংবাদিকরা নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ফটো সাংবাদিক শামিম আহমেদ বলেন, ‘মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় আমার ওপর একাধিকবার হামলা হয়েছে। আমার ওপর কোনো ছাত্র হামলা করেনি। বরং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের লোকজন আমাকে ঘিরে ধরে মারধর করেছে।’ যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার রাব্বি সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা সাধারণ সাংবাদিকরা কোথায় যাব? আমাদের নিরাপত্তা দেবে কে? আমরা আমাদের চার ভাইকে হারালাম। বহু ভাই-বোন আহত। রাষ্ট্র কি তাদের খোঁজ নিয়েছে? খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছি, ট্রমার মধ্যে আমরা প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী। আমরা প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্কে আছি। এটা কবে কাটবে?’
মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতাদের সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, ‘আমাদের যেসব সাংবাদিক নেতা আছেন, শুধু টেলিভিশিনের টকশোতে এসে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের গালগল্প করেন, সেটি শুধুই তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। বাস্তবে তারা কিছুই করেন না। বরং তারা মাঠের সাংবাদিকদের মাথা বিক্রি করে চলেন। বাস্তবে তারা সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে কিছুই করেন না।’ মানববন্ধনে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিপন দেওয়ান বলেন, ‘সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনে জড়িতদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চিহ্নিত করে তাদের বিচার করতে হবে।’ বেঁধে দেয়া এই সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেবেন বলে জানান গণমাধ্যমকর্মীরা।