বেপরোয়া গতিতে চলাচলকারী দুই গাড়ির ভয়াবহ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কানাইপুর এলাকার তেঁতুলতলা দিকনগরে। ঈদের আগে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। কিন্তু ঈদের আগে-পরে দেখা গেছে, বাড়তি ভাড়া ও বাস সংকটে লাখো মানুষ ট্রাক-পিকআপে চড়ছেন। এমন এক পিকআপ দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত হয়েছেন।
পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ইউনিক পরিবহনের বাসটি কোনো কারণে সড়কে আড়াআড়ি হয়ে যায়। তাতে ধাক্কা দেয় পিকআপ। এতে পিকআপের ১৬ যাত্রী সড়কে ছিটকে পড়েন। তাদের ১৪ জন নিহত হয়েছেন। চিকিৎসাধীন অপর দুই যাত্রীর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। পিকআপচালকের কেবিন দুমড়েমুচড়ে যায় এবং তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। বাসের কয়েকজন যাত্রীও আহত হয়েছেন। এ ছাড়া একই দিনে আট জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আরও ১১ জন।
ফরিদপুরে সংঘটিত দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি করেছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীর সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আপাতদৃষ্টিতে চালকের অসতর্কতা ও একই লেনে দুটি গাড়ি চলে যাওয়ায় দুর্ঘটনা হয়েছে।
ঈদের সময় দেশে ফিটনেসবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ যান দূরপাল্লার রুটেও চলাচল করে। ফরিদপুরে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি ফিটনেস ছাড়পত্র ও ট্যাক্স টোকেন ছাড়াই তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলাচল করছে। এমনকি যেই ঢাকা-মাগুরা রুটে দুর্ঘটনাটি সংঘটিত হয়, সেই রুটে বাসটির (ঢাকা মেট্রো-ব ১১-১৭৫৯) চলাচলের অনুমোদনও ছিল না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বাসটির চট্টগ্রাম-বগুড়া রুটে চালানোর অনুমোদন থাকলেও ২০২১ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে তা আর হালনাগাদ করা হয়নি। সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর বেশ কয়েকটি ধারা লঙ্ঘন করে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দূরপাল্লার এই বাসটি চলাচল করেছে।
পিকআপ ও ট্রাকে যাত্রী পরিবহন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব যানবাহন যাত্রী পরিবহনের উপযোগী নয়। গতিশীল অবস্থায় সামান্য ধাক্কায়ও পেছন থেকে যাত্রী ছিটকে পড়ায় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু প্রতি বছরই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে বিশেষ করে ঈদের আগে-পরে।
হয়তো তদন্ত কমিটি প্রকৃত কার্যকারণ চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে। তাতে কি ঝুঁকিপূর্ণ যান চলাচল বন্ধ হবে! হতে পারে পুলিশের চোখ এড়িয়ে অনেকে যাত্রী তুলছেন, কিংবা যাত্রীরাও উঠছেন। কিন্তু সবই কি পুলিশের চোখ এড়িয়ে?
গাড়িচালক ও যাত্রীর সচেতনতা ছাড়া এ সমস্যা শতভাগ নির্মূল করা সম্ভব নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ দায় এড়াতে পারে না। ফিটনেসবিহীন যান দাবড়ে বেড়াচ্ছে আর প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পরই সংস্থাটির কর্তাব্যক্তিরা ‘আবিষ্কার’ করেন সংশ্লিষ্ট গাড়িগুলোর কোনো কাগজপত্রই ছিল না।
ঈদের সময় বাসে অতিরিক্ত ভাড়া এবং গণপরিহনের অপ্রতুলতায় নিম্ন আয়ের মানুষ পণ্যবাহী যানে যাত্রী হন। পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও পরিবহন শ্রমিকরা বাড়তি আয়ের জন্য না হয় দায়িত্বশীল নন; কিন্তু বিআরটিএ’র কর্মীরা দায়িত্বশীল, সে প্রমাণও পাওয়া গেল না। দুর্ঘটনার জন্য কার দায় কতটা, তা উদ্ঘাটন করে শূন্য সহনশীলতায় আইনি ব্যবস্থা নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।