Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:53 am

সড়ক দুর্ঘটনা ও সাবডুরাল হেমাটোমা

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় মাথার ত্বককে স্কাল্প বলা হয়। স্কাল্পের নিচে যে হাড় রয়েছে, সেটি স্কাল বা করোটি। সাধারণের কাছে এটা খুলি নামে পরিচিত। আর স্কালের ঠিক নিচেই রয়েছে মস্তিষ্কের বিশেষ পর্দা-ডুরা ম্যাটার। এটি মস্তিষ্ককে ঢেকে রাখে। বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে। ডুরা ম্যাটার ও মস্তিষ্কের মধ্যে যদি কোনো কারণে রক্তক্ষরণ হয়, তখন তাকে বলা হয় সাবডুরাল হেমাটোমা।

কারণ ও প্রকারভেদ: সাবডুরাল হেমাটোমার কারণ বাইরে থেকে মাথায় কিংবা মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়া। এ থেকে করোটির অভ্যন্তরে বাড়তি চাপ তৈরি হতে পারে। আর বাড়তি চাপের ফলে মস্তিষ্কে টিস্যু সংকুচিত কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সাবডুরাল হেমোটোমায় রোগীরা প্রাণ হারাতে পারেন। তবে দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা করা গেলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

দ্রুত অস্ত্রোপচার জরুরি: সাবডুরাল হেমাটোমার পুরুত্ব ১ সেন্টিমিটারের বেশি হলে রোগীর মস্তিষ্কে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অস্ত্রোপচার করতে হয়। চিকিৎসকদের মতে, অ্যাকিউট সাবডোরাল হেমাটোমা শনাক্তের চার ঘণ্টার মধ্যে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হলে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৭০ জন রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। আর চার ঘণ্টার বেশি সময় পর অস্ত্রোপচার করা হলে মাত্র ১০ শতাংশ রোগীর জীবন বাঁচানো যায়।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে মানুষের মারা যাওয়ার বড় একটি কারণ তীব্র সাবডুরাল হেমাটোমা। এ ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগী শেষ পর্যন্ত মারা যান। এর বিপরীতে মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রোগী মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ফিরে পান। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার মানুষ এতে বেশি ভোগেন। তাই মোটরসাইকেল যাত্রায় চালক ও আরোহীকে অবশ্যই হেলমেট পরতে হবে।

বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি: ক্রনিক সাবডুরাল হেমাটোমা সাধারণত বয়স্কদের হতে দেখা যায়। বৃদ্ধ বয়সে মস্তিষ্ক বেশি ক্ষয় হয়। এ সময় মস্তিষ্কের রক্তনালিগুলো ভঙ্গুর থাকে। এর ফলে খুব অল্প আঘাতেই রক্তনালি ছিঁড়ে যেতে পারে। রক্তক্ষরণ হতে পারে। মাথাব্যথা, স্মৃতিভ্রম, কথা বলতে সমস্যা হওয়া, হাত-পা অবশ হয়ে আসা, প্যারালাইসিস হওয়া, খিঁচুনি ইত্যাদি লক্ষণ নিয়ে ক্রনিক সাবডোরাল হেমাটোমার রোগীরা চিকিৎসকের কাছে আসেন। সিটি স্ক্যান করে এ রোগ নির্ণয় করা হয়। শনাক্তের চার ঘণ্টার মধ্যেই অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন।

ডা. হারাধন দেবনাথ

অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা