Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 8:36 pm

সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন

সড়ক দুর্ঘটনা কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। ২০১৮ সালে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলো হলোÑচালক ও হেলপারদের (সহকারী) প্রশিক্ষণ দিতে হবে; দূরপাল্লার বাসযাত্রায় বিকল্প চালক রাখতে হবে; পাঁচ ঘণ্টা পরপর চালক পরিবর্তন করতে হবে; চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা বাধ্যতামূলক করতে হবে; চালকদের জন্য মহাসড়কের পাশে বিশ্রামাগার রাখতে হবে এবং অবশ্যই সিগন্যাল মেনে চলতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রতিপালিত হয়েছে, তা বলার সুযোগ নেই।

আজ ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’। এ উপলক্ষে সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক এক সংলাপে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) গবেষকরা বলেছেন, সোজা সড়কেই দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে, আর মূল কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো। সংলাপে সংগঠনটির গবেষণার ফল তুলে ধরা হয়।

একই দিন আরেক অনুষ্ঠানে যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলেছে, গত ছয় বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ হাজার ৮৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দেশের সড়কগুলোর ওপর দুই শতাধিক হাটবাজার রয়েছে। হাটবাজারের যানজটে পড়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় চালককে। পরে চালকরা সোজা পথ পেয়ে নষ্ট হওয়া সময় পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। চালকের চাকরির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে পারব না। গাড়ি মালিককে বললেই চাবি নিয়ে নেয় মালিক। চালকদের দাবি তাদের চাকরির নিশ্চয়তা নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যের বরাত দিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, সারাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৬৪ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান, আর আহত হচ্ছেন ১৫০ জনের বেশি। সংগঠনটি বলছে, ২০১৮ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জন মারা গেয়েন। পরের বছর মারা গেছেন ৭ হাজার ৮৫৫ জন।

সরকারপ্রধানের নির্দেশনার পরও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি, এটি দুঃখজনক। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ’র তথ্যমতে, দেশে ৪০ লাখ যানবাহন চলাচল করছে। এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা পাঁচ লাখের কাছাকাছি। বিভিন্ন শ্রেণির যানবাহনের জন্য চালক আছেন ২০ লাখ। অর্থাৎ ১৮ লাখ যানবাহন চলছে ভুয়া চালক দিয়ে।

২০১৫ সালে মহাসড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ওই বছর জাতীয় মহাসড়কে সিএনজিচালিত থ্রি হুইলার, হিউম্যান হলার, নছিমন, করিমন ও ভটভটি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, কিন্তু আইনের প্রয়োগ না থাকায়ই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না বলে সাধারণ মানুষের ধারণা।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো আমরা জানি। যেমন নির্দিষ্ট লেন ধরে গাড়ি না চালিয়ে সড়কের মাঝ দিয়ে গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো, চালকদের বেপরোয়া গতিসহ ভুলপথে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, যথেচ্ছ ওভারটেকিং প্রভৃতি। কিন্তু সম্ভবত সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, আইনের প্রয়োগে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও দুর্নীতি। চালকদের দক্ষতা বিচার করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া এবং এ ক্ষেত্রে যেন কোনো দুর্নীতি না ঘটে, সেটিও নিশ্চিত করা আবশ্যক।