মার্জিন ঋণে চড়া সুদ

সতর্ক অবস্থানে লোকসানি বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে পতনের জের ধরে লোকসানে রয়েছেন অধিকাংশ বিনিয়োগকারী। এদিকে এখন বাজারে অধিকাংশ শেয়ার ও ইউনিট ক্রয়যোগ্য অবস্থানে রয়েছে। এই অবস্থাকে বিনিয়োগের যোগ্য সময় বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি সম্পর্কে বিনিয়োগকারীরা অবগত থাকলেও অর্থের অভাবে তারা বিনিয়োগ করতে পারছেন না। অন্যদিকে চড়া সুদে মার্জিন ঋণ তাদের লোকসান আরও ভারী করতে পারে, এই ভয়ে ঋণের ক্ষেত্রে সতর্ক রয়েছেন তারা।
ঋণ না নেওয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে মার্জিন ঋণের অনুপাত দশমিক পাঁচ। অর্থাৎ এক লাখ টাকা থাকলে ওই বিনিয়োগকারীকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হচ্ছে। তবে ঋণপ্রবাহ নির্ভর করছে হাউজ কর্তৃপক্ষের ইচ্ছার ওপর। কোনো কোনো হাউজে ঋণের হার শূন্য দশমিক ২৫ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এক লাখ টাকায় একজন বিনিয়োগকারী ২৫ হাজার টাকা ঋণ পাবেন। আর এ ঋণের বিপরীতে সুদ গুনতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৮ শতাংশ হারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজে ঋণের অনুপাত বিভিন্ন রকমের, যেখানে সুদ হিসাবে নেওয়া হচ্ছে ১১ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে তিন শতাংশ সার্ভিস চার্জ। অর্থাৎ যিনি ১১ শতাংশ সুদে ঋণ নিচ্ছেন, তার সুদ (সার্ভিস চার্জসহ) গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ১৪ শতাংশ। আর যিনি ১৫ শতাংশ হারে ঋণ নিচ্ছেন, তার সুদ হচ্ছে ১৮ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের মতে, এত উচ্চমূল্যে ঋণ নিয়ে তা দিয়ে ব্যবসা করে লাভবান হওয়া কষ্টকর, যে কারণে মার্জিন ঋণ থেকে দূরে সরে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ঋণ নিয়ে নয়, ব্যবসা করবেন নিজের পুঁজিতে। বর্তমানে এ মনোভাবে রয়েছেন তারা। মার্জিন ঋণে আগ্রহ নেই তাদের। বিশেষত আগের মার্জিনধারী অ্যাকাউন্টে ঋণ নেওয়া থেকে বিরত থাকছেন তারা। কারণ এমনিতেই তাদের ঋণের বোঝা অনেক ভারী। তার ওপর নতুন ঋণ নিয়ে এ বোঝা আরও ভারী করতে চান না তারা।
জানা যায়, বাজার কিছুটা গতিশীল হওয়ায় আগের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা যারা পুঁজিবাজারে ফিরে এসেছেন, বাজারে বেশিরভাগ শেয়ার ক্রয়যোগ্য হলেও ঋণ নিয়ে এ শেয়ার ক্রয় করতে চাচ্ছেন না তারা। বিনিয়োগকারীদের মতে, সুদের হার অনেক বেশি। অন্যদিকে পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক পরিবেশও চরম বৈরী। এ পরিস্থিতিতে তারা ঋণ নিয়ে ঝুঁকি বাড়াতে যাচ্ছেন না।
এ প্রসঙ্গে বিনিয়োগকারী আবুল হাসান বলেন, ‘হাউজগুলোতে মার্জিন ঋণের হার অনেক। অন্যদিকে বাজারের অবস্থাকে এখনও ভালো বলা যায় না। ফলে এ অবস্থায় কেউ ঋণ নিতে সাহস পাচ্ছেন না। কারণ এ মার্কেট থেকে ব্যবসা করে লোন শোধ করা কঠিন।’ মার্জিন ঋণের সুদের হার আরও কমানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত বছরের শুরুর দিকে বিনিয়োগকারীরা মার্জিন ঋণে কিছুটা আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তারা সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। বাজারের বৈরী আচরণে কেউ আর মার্জিন ঋণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অন্যদিকে হাউজগুলোও ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে হিসাবি হয়েছে। গ্রাহক যাতে বিপদে না পড়ে, সেজন্য অনেক হাউজ ঋণ দেওয়া বন্ধ রেখেছে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেয়ার বিজকে বলেন, ঋণ নেওয়ার বেলায় এখন বিনিয়োগকারীরা খুবই হিসাবি। কারণ বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী ২০১০ সালের ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সাম্প্রতিক ধসেও তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। সে কারণে তারা আর নতুন করে ঋণ নিতে যাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, এখন বাজারের যে সার্বিক পরিস্থিতি তাতে মার্জিনধারীরা কতটুকু লাভবান হতে পারবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সে কারণে আমরা তাদের উৎসাহিত করছি না।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, মার্জিন ঋণে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে চড়া সুদ আদায় করা হয়, যে কারণে তারা ঋণবিমুখ। সুদ কম হলে হয়তো এ অবস্থার পরিবর্তন হবে। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা নিজের টাকায় ব্যবসা করতে চান, এটা ভালো কথা। এখানে তাদের ঝুঁকি কম। আমি মনে করি এটা তাদের ভালো সিদ্ধান্ত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০