আহসান রনি ও তার দল ‘সনেকশন’ সামাজিক উদ্যোগের মূল সমস্যা ও সমাধান খুঁজে বের করতে গিয়ে কিছু বিষয় শনাক্ত করেন। বিষয়গুলো ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত রিয়াও ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ সামিটে তুলে ধরেই জিতে নেন সেরা অ্যাকশন প্ল্যান অ্যাওয়ার্ড। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মাসুদ আনসারী
সারা বিশ্বের তরুণদের মাঝে যোগাযোগ স্থাপন ও পৃথিবীর জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাতে আয়োজিত এ সম্মেলনে ২১টি দেশের প্রায় ১৫০ জন তরুণ উপস্থিত হন। সামাজিক উদ্যোগবিষয়ক একটি প্ল্যান তৈরি এবং তা বাস্তবায়নের রূপরেখা তুলে ধরার জন্য ছয়টি দেশের ১২ সদস্যের এ দল সেরা অ্যাকশন প্ল্যান জিতে নেয়। ‘সনেকশন’ অ্যাওয়ার্ড জয়ী প্ল্যান এবং বাস্তবায়নের রূপরেখাটি ছিল প্রয়োজন অনুযায়ী ফান্ড, সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য, সঠিক তথ্য, করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ, দীর্ঘদিন একটি উদ্যোগ টিকিয়ে রাখা, সবার সঙ্গে যোগাযোগ। বিষয়গুলো সামাজিক উদ্যোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সেরা অ্যাকশন প্ল্যান জেতার গল্প শোনালেন আহসান রনি। ‘আমাদের গ্রুপ ছিল সামাজিক উদ্যোগ গ্রুপ। আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সামাজিক উদ্যোগের মূল সমস্যা ও এর সমাধান খুঁজে বের করতে। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সামাজিক উদ্যোগের কিছু সমস্যা খুঁজে বের করি।’ তিনি আরো জানান, এসব সমস্যা সমাধানের একটি পথও খুঁজতে থাকি। তখনই ঠিক হয় আমরা এমন একটি ওয়েবসাইট করবো, যেটি সামাজিক উদ্যোগগুলোর সব সমস্যার সমাধান হিসেবে কাজ করবে। আর্থিক থেকে প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা, পারিপার্শ্বিক সমস্যা, সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের সমস্যা সবকিছু দূর করে এদের মধ্যে কানেকশন তৈরি করবে। কানেকশন শব্দটিকে গুরুত্ব দিই আমরা। ফলে গ্রুপের নামও নির্ধারণ করি কানেকশন গ্রুপ। যেহেতু সামাজিক সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করছি তাই পরামর্শের ভিত্তিতে ওয়েবসাইটের নাম দিই ‘সনেকশন’। সামাজিক উদ্যেগের সমস্যা ও সমাধানের সংক্ষিপ্ত বিবরণী দেখে রিয়াও ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ সামিট কর্তৃপক্ষ আমাদের আমন্ত্রণ জানায়, বলছিলেন আহসান রনি।
৬ ডিসেম্বর আহসান রনিসহ বাংলাদেশের আরও ছয় তরুণ যোগ দেন এ সম্মেলনে। সেখানকার মুহূর্তগুলো ছিল দারুণ উপভোগ্য। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পেয়ে বিভিন্ন দেশের ১৫০ জন তরুণ যোগ দেন এ সম্মেলনে। চার দিনব্যাপী আয়োজিত ইয়ুথ সামিট সম্মেলনের প্রথম দিন পেকানবারু শহর গভর্নরের সৌজন্যে ছিল নৈশভোজ ও অভ্যর্থনা। এরপর দ্বিতীয় দিন থেকে সামিট সম্মেলনের মূল কাজ শুরু হয়। অনুষ্ঠানের ফাঁকে পেকানবারু শহর ঘোরাঘুরি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করার সুযোগ পান অংশগ্রহণকারীরা। পরে ১৫০ জন তরুণকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে শিক্ষাব্যবস্থা এবং উদ্যোগবিষয়ক নতুন আইডিয়া খুঁজে বের করে তা বাস্তবায়নের উপায় বের করতে বলা হয়।
বাংলাদেশি তরুণ আহসান রনি উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে চাইলে তাকে উদ্যোগ দলে দেওয়া হয়। এ দলে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মেক্সিকো ও ইন্দোনেশিয়ার ১২ জন সদস্য ছিলেন। তারপর আহসান রনি ও তার দল আলোচনা করে ‘সনেকশন’ নামের একটা উদ্যোগ বের করেন। সনেকশন হচ্ছে সামাজিক উদ্যোগের আর্থিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও নেটওয়ার্কিং সহযোগিতা দেওয়ার পূর্ণাঙ্গ অনলাইন প্লাটফর্ম। এ আইডিয়া তিনি উপস্থাপন করেন প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে। সব দলের আইডিয়া প্রেজেন্টেশনের মধ্যে আহসান রনির দল সেরা অ্যাকশন প্ল্যান অ্যাওয়ার্ডের জন্য বিজয়ী হয়।
বর্তমানে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটি ওয়েবসাইট তৈরির কাজ করছেন আহসান রনি। সেখানে প্রতিবন্ধীদের সব ধরনের সহায়তা থাকবে। এছাড়া সনেকশন নিয়ে কাজ করতে তা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতেও থাকবে তার প্রচেষ্টা। এভাবেই পরিকল্পনার কথা জানান আহসান রনি।