Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 8:59 pm

সন্তানের নিরাপদ জন্মে জন্য মায়ের সুস্থতার প্রয়োজন

আজ জাতীয় নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সাল থেকে এ দিবস পালন করে আসছে। মৃত্যুহার কমিয়ে নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। এদেশে অনেক মা অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতায় ভোগেন, যা মাতৃমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। এর পেছনে রয়েছে প্রচলিত সামাজিক কিছু কুসংস্কার। যেমন অনেক এলাকায় অনেক পরিবারে গর্ব অবস্থায় হাঁসের গোশত, মুরগির ডিম, মিরগেল মাছ, অনেক পুষ্টিকর খাবার খেতে দেয়া হয় না। এমনকি গর্ভকালীন মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক পরিচর্চার ক্ষেত্রেও অবহেলা করা হয়। সেবা করার পরিবর্তে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দেয়া হয় না। কর্মজীবী নারীদের সমস্যা আরও প্রকট। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি থাকলেও বেসরকারি পর্যায়ে মায়েরা অনেক ক্ষেত্রে ছুটি থেকে বঞ্চিত হয়। অবশ্য কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ছুটি দেয়া হলেও বেতন মিলছে না। বিশেষ করে পোশাকশিল্পের নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এই আচরণ বেশি করা হচ্ছে।

মাতৃমৃত্যু কমাতে মিডওয়াইফ বা ধাত্রীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তারা পরিবার পরিকল্পনা সেবা ও সন্তান প্রসবকালীন দক্ষ প্রসব সহায়তাকারীর মাধ্যমে প্রসব করানোর সেবা সম্প্রসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ সরকার মিডওয়াইফের মাধ্যমে নিরাপদ মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি এবং জরুরি প্রসব সেবাসহ প্রসবকালীন জটিলতায় সঠিক রেফারেল সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ জাতীয় মাতৃসেবা কৌশল ২০২২ থেকে ২০৩০ সাল অনুযায়ী সরকারের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব ৪৭.১ থেকে ৮৫ শতাংশে উন্নীত করা এবং দক্ষ ধাত্রীর মাধ্যমে প্রসবের হার ৫০ থেকে ৯০ শতাংশে উন্নীত করা। পাশাপাশি এ কৌশলের আরও একটি লক্ষ্য হলো মাতৃমৃত্যুর হার ১৭২ থেকে ৭০ হ্রাস করা (প্রতি হাজার জীবিত জম্মে) এবং নবজাতকের মৃত্যুহার ১৭ থেকে ১২-তে কমিয়ে আনা। পাশাপাশি গর্ভকালীন সময় কমপক্ষে চারবার গর্ভকালীন সেবা গ্রহণের হার ৩৭.২ থেকে শতভাগে উন্নীত করা।

সব নারীর মাতৃত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মিডওয়াইফদের সক্ষমতা বাড়ানো এবং প্রমাণভিত্তিক অনুশীলনের মাধ্যমে মিডওয়াইফদের মাধ্যমে নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধি, নিরাপদ প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এবং সবার জন্য পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান, এনজিও দাতা সংস্থা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, নারীজীবনে গর্ভকালীন অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা। এ সময় একই দেহে দুটি প্রাণ। জš§দান জটিল প্রক্রিয়া। আমাদের দেশে মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার আগের তুলনায় অনেক কমেছে, কিন্তু এখন যে পর্যায়ে আছে তা উদ্বেগের। গর্ভকালীন মায়ের বাড়তি যতœ নিতে হবে তার পরিবারকে। কখনও কাজ করতে দেয়া যাবে না। এ সময় পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। মায়ের ও অনাগত শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জটিল কোনো সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে জরুরিভাবে গর্ভবতীকে নিয়ে শরণাপন্ন হতে হবে মা ও শিশু-বিষয়ক চিকিৎসকের। এছাড়া গর্ভকালে টিটি টিকা দেয়া, ওজন মাপা, স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয়া, রক্তস্বল্পতা বা শরীরে রক্ত কম কি না, তা পরীক্ষা করা, রক্তচাপ পরীক্ষা করা, পা অথবা মুখ ফুলে গেলে পানি আছে কি না দেখা, শারীরিক অন্য কোনো অসুবিধা আছে কি-না তা পরীক্ষা করা, পেট পরীক্ষা করা, উচ্চতা মাপা প্রভৃতি নিয়মিত পরীক্ষা করা জরুরি।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, বস্তুত মায়ের সুস্থতার ওপর নির্ভর করে সন্তানের নিরাপদ ও সুস্থ জীবন। তাই মায়ের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিরাপদ স্বাস্থ্য মায়ের অধিকার। আর এ অধিকার আদায়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমসহ সমাজসচেতন সবাইকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

মোস্তফা কামাল

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়