পাঠকের চিঠি

সন্তানের মোবাইল ফোন ব্যবহার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে

তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর দেশ। যে কোনো প্রয়োজনে গুগল করলেই হাজারো তথ্যের সমারোহ। দিন দিন সমাজ নির্ভরশীল হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির দিকে। নিঃসন্দেহে এর যেমন আশীর্বাদ আছে ঠিক তেমনি ক্ষতির ঝুড়িটাও ছোট নয়।

আজকাল কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ কেউই থাকতে পারছে না এসবের বাইরে। এটা এমনই এক প্রযুক্তি যেখানে কোনো কিছু চাহিবা মাত্রই পাওয়া যায়। প্রয়োজন শুধুই ইন্টারনেট কানেকশন।

আর এমনভাবেই সেন্সর করা এসব যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা যখন যেটা খুঁজতে থাকে তখন সেটাই সবচেয়ে বেশি আসে এবং ধারাবাহিকভাবে আসতেই থাকে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এখানে কাটিয়ে দিতেও ক্লান্তি অনুভব হয় না একজন ব্যবহারকারীকে।

আমাদের দেশে তরুণ প্রজন্মের বৃহৎ একটা অংশ আজকাল মোবাইল ইউস করে। মোটামুটি কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই বলা যায় বেশিরভাগ ইউজার অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন। তবে যে বিষয়টা করোনাকাল সময়ে আমাদের দেখিয়েছে সেটা হলো প্লে থেকে সব স্টুডেন্ট অনলাইন ক্লাস করার কারণে ফোন ব্যবহার করছে।

যে বিষয়টা সবচেয়ে আশঙ্কাজনক হাড়ে বাড়ছে, সেটা হলো শিক্ষার্থীরা সবসময় মোবাইল ফোন হাতে রাখে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় নিয়ে ব্যবহার করে। যার ফলে গেমস থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমের ওপর তাদের একটা আধিপত্য থাকে। এ বয়সের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সব অ্যাকাউন্ডসহ লাইকি, টিকটক, ব্যবহার করে। একটা পর্যায়ে তাদের এগুলোর মোহে নেশা জেগে যায়। ধারাবাহিকভাবে সম্পূর্ণ পড়াশোনাবিমুখ হয়ে যায়। পরবর্তী আর এগুলো ছেড়ে থাকতে পারে না। অনবরত পড়ার টেবিলে পড়ে আর মোবাইল স্কল করে। হুট করেই মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইন্সট্রাগ্রামের টুংটাং শব্দে একবার মোবাইলে চোখ রাখলে চোখের পলকে আধা ঘণ্টা এক ঘণ্টা চলে যায়। কখনও কখনও এভাবেই কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর ফিরে তাকানো হয় না বইয়ের পৃষ্ঠায়। দিনশেষে এগুলো চরম বিপদের সম্মুখীন সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিঃসন্দেহে ফোনের বিকল্প নেই; তবে পরিবারের পক্ষ থেকে সবসময় তদারকি রাখা উচিত। নির্দিষ্ট সময়ে ফোন দেয়া উচিত সবসময় ফোন হাতে না দিয়ে।

অভিভাবক সন্তানের হাতে ফোন তুলে দেন নানান প্রয়োজনে, সংকট থেকে মুক্তি পেতে। সে ক্ষেত্রে বাটন ফোন দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। কেননা একজন শিক্ষার্থী ইচ্ছে করলে ২৪ ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারে অ্যান্ড্রেয়েট ফোনে যেটা বাটন ফোনে সম্ভব না।

স্মার্টফোনের কবলে আজ লাখ লাখ শিক্ষার্থী বিভ্রান্ত। তারা এই জগতে নিয়মিত হয়ে পরিধি বাড়িয়ে দিন দিন বিভিন্ন সংকটে পড়ছে। বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে রাতারাতি যুক্ত হচ্ছে এবং এর মাধ্যমেই তৈরি হচ্ছে বড় বড় কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন সংগঠন। আর এসবের সঙ্গেই যুক্ত হয়ে প্রতিনিয়ত নিজেদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। নষ্ট হচ্ছে মা-বাবার স্বপ্ন এবং দেশ হারাচ্ছে তার মেধাবী মুখ, ভবিষ্যতের কর্ণধার।

সাম্প্রতিক সময়ে সবার নজর কাটছে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানকে ঘিরে। বেশ কিছুদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছয়লাব ছিল পরীক্ষার্থীদের টিকটক দিয়ে। নানা ভাষা এবং নানান ভঙ্গিতে। এটা যেমন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যায় না ঠিক এর ক্ষতিটা ও দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে দিনদিন। এর সঙ্গে জড়িয়ে আজকাল অনেক শিক্ষার্থী নানাজনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে এবং নানা অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছে।

কুচক্রী মহল শিক্ষার্থীদের কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে। নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটায়। এ পর্যন্ত তো অনেক শিরোনাম হয়েছে টিকটকের বা এসব মাধ্যমের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীকে ধর্ষণ অথবা পাচার করে দিচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে।

একজন শিক্ষার্থীর জন্য এইচএসসি পর্যন্ত কঠিন একটা সময়। এ সময় যেমন পড়াশোনা করে ভবিষ্যতের বীজ রোপণ করা হয়, ঠিক তেমনি এই সময়টা আবেগ দিয়ে তাদের অনেক কিছু করা যায় বা অনেক কিছুট মোহ তাদের আকৃষ্ট করে। এই আকৃষ্ট কতটুকু ভালো বা খারাপ এগুলো বুঝে উঠতে না উঠতেই অনেক সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে যায়।

ফলে চারপাশের একটা চাপের সম্মুখীন হতে হয়। হয়তো রেজাল্ট ভালো হয় না অথবা ভালো কোথায় চান্স হয় না অথবা পরিবার থেকেও কোনো কিছু নিয়ে আর তলব করা হয় না। এভাবেই সন্তান হয়ে যায় নেশায় আসক্ত। হয়ে যায় অন্ধকার জগতের একজন নিয়মিত সদস্য।

সুতরাং অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের দিকে নজর দেয়া। তাদের বাটন ফোনের সঙ্গে পরিচিতি করা। অতি প্রয়োজন না হলে সন্তান থেকে মোবাইল ফোন দূরে রাখা। পাশাপাশি নিয়মিত তাদের ফোন তদারকি করা। তারা কোন কোন অ্যাপসগুলো ব্যবহার করছে, কোন সাইটগুলো সচরাচর ব্রাউজ করছে এবং যোগাযোগ মাধ্যমে কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে প্রতিনিয়ত।

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে পরিবেশ এবং সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে নিঃসন্দেহে। তবে এ চলাচলের যেন একটা লাগাম থাকে। লাগামহীন হলেই নেমে আসবে আগামীর শিক্ষার্থীদের জীবনে অমানিশা অন্ধকার। আর এ লাগামটা ধরে রাখার দায়িত্ব পরিবার, সমাজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।

শিক্ষার্থীরা একটা সুন্দর পরিবেশে বেড়ে উঠুক এবং তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবে এটাই কামনা করছি। প্রযুক্তির বদৌলতে তাদের সঠিক পরিবর্তনটা হোক। প্রযুক্তির কল্যাণে বা বদৌলতে তারা যেন পৃথিবীর বড় আইটি কোম্পানিগুলোর কর্ণধার হতে পারে সেই কামনা করি।

অনাকাক্সিক্ষত কোনো কার্যকলাপে যেন জড়িয়ে না যায় সেদিকে সবসময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনের উপকার, ক্ষতিকর দিকগুলো এবং কীভাবে মোবাইল ফোনের যথোপযুক্ত ব্যবহার করা যায় সেসব বিষয়ে নিয়মিত কাউন্সিল করতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তিদের।

সায়েদ আফ্রিদী

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০