শেয়ার বিজ ডেস্ক: ২০০৫ সালের পর চলতি বছর জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে রেকর্ডসংখ্যক বাড়ি বিক্রি হয়েছে। গত ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে দেশটির সব অঞ্চলে একেকটি বাড়ির দাম গড়ে দুই লাখ ৫৫ হাজার ৫৫৬ পাউন্ডের বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। খবর: দ্য গার্ডিয়ান।
যুক্তরাজ্যের বিল্ডিং সোসাইটির মতে, ২০০৫ সালের মতো আবাসন খাতে ২০২২ সালেও চাঙা ভাব দেখা গেছে। এ সময় বার্ষিক বাড়ি বিক্রির পরিমাণ ১১ দশমিক দুই শতাংশ বেড়েছে। জানুয়ারিতে দুই লাখ ৫৫ হাজার ৫৫৬ পাউন্ডের বেশি দামে বিক্রি হয়েছে একেকটি বাড়ি, যা টানা ছয় মাস ধরে বাড়ছে। ডিসেম্বরে ১০ দশমিক চার শতাংশ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে গত মাসে যোগ হয়েছে শূন্য দশমিক আট শতাংশ। এ হিসেবে আবাসন খাতে গত বছর জুনের পর জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
২০২১ সালে যুক্তরাজ্যে প্রথম বাড়ির মালিক হওয়া ক্রেতাদের সংখ্যায় উল্লম্ফন দেখা গেছে। গত বছর এমন ক্রেতাদের বাড়ি কেনার সংখ্যা চার লাখ ৯০০ হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এ সংখ্যা ২০০২ সালের পর সর্বোচ্চ। কভিড-১৯ মহামারি ও বাড়ির মূল্য বৃদ্ধির কারণে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও এমন ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে।
কভিডজনিত নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেকেই বাড়ি কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে রেখেছিল। গত বছর তারা বাড়ি কিনতে আগ্রহী হয়েছে। লকডাউন চলাকালে ব্যয় কমে যাওয়ায় ব্রিটিশদের হাতে অনেক সঞ্চয়ও জমেছিল। এছাড়া সুদের হার কম থাকার বিষয়টিও বাড়ি কেনায় ভূমিকা রেখেছে।
নেশনওয়াইডের প্রধান অর্থনীতিবিদ রবার্ট গার্ডনার বলেন, ‘বাড়ি কেনার চাহিদা আগের মতোই রয়ে গেছে। বন্ধকি ঋণের পরিমাণ কভিড-১৯ মহামারির আগের সময়ের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। এ কারণে ক্রেতাদের ওপর অতিরিক্ত করের চাপ পড়েনি। তাই তারা বাড়ি কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সত্যিই ২০০৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাড়ি বিক্রি হয়েছে গত বছর, মহামারি শুরুর আগের বছর ২০১৯ সালের তুলনায় যা ২৫ শতাংশ বেশি।’
নেশনওয়াইডের মতো অনেক পূর্বাভাসকারীর ধারণা, চলতি বছরও বাড়ি বিক্রি বাড়বে। বৈশ্বিক মহামারির কারণে ২০২০ সালে রিয়েল এস্টেট মার্কেট একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ে। সুদের হার কম, চাহিদার তুলনায় বাড়ির জোগান কম ও শহুরে জীবন থেকে কম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মানুষের বাড়ি কেনাকে ত্বরান্বিত করে মহামারি, ২০২১ সালে যা আবার শক্তি অর্জন করে। কেননা এ সময় চাহিদা বাড়ে। এর বিপরীতে যথাসময়ে সরবরাহ করতে সক্ষম হন আবাসন ব্যবসায়ীরা। মর্টগেজ রেট তুলনামূলক কম থাকায় প্রতি মাসের মর্টগেজ অ্যামাউন্ট অনেক ক্রেতার আয়ত্তের মধ্যে আসে। এ কারণে বাড়ি কেনার চাহিদা বাড়ে। মর্টগেজ দিতে না পারলেও ফর ক্লোজারে বাড়ি তোলা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় জোগান কমেছে। এভাবে মার্কেটই বাড়ির দাম নির্ধারণ করেছে।
উত্তর লন্ডনের এস্টেট এজেন্ট ও রয়েল ইনস্টিটিউশন অব চার্টার্ড সার্ভেয়ারসের সাবেক আবাসিক চেয়ারম্যান জেরেমি লিফ বলেন, উচ্চ সুদহার ও মূল্যস্ফীতি নিঃসন্দেহে বাড়ি কেনাবেচার ওপর প্রভাব ফেলেছে।
লন্ডনভিত্তিক এস্টেট এজেন্ট চেস্টারটনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গাই গিটিনসের মতে, চলতি বছর মাঝামাঝি পর্যন্ত একই ধারায় ঊর্ধ্বমুখী থাকবে দেশটির আবাসন খাত। অনেক ক্রেতার কাছে ২০২২ সাল চমক নিয়ে হাজির হয়েছে। তারা নতুন বছরে নতুন বাড়ি চাইছেন। এ কারণে অসংখ্য ক্রেতা বাড়ি কেনার জন্য নিবন্ধন করছেন।
তার মতে, একটু খোলামেলা পরিবেশে নিজের বাড়ি কেনার পাশাপাশি অনেক ক্রেতা শহরেও ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। এ ধরনের ক্রেতারা সাধারণত অফিসের কাছাকাছি বাসা নিতে চান। মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের পাশাপাশি তারা মেগাসিটিতে থাকার চুম্বক-আকর্ষণ থেকে বেরিয়ে আসতে চান না। তাই বাড়ির দাম কিছুটা কমলে তারা সহজে প্রেপার্টি মার্কেটের অফার লুফে নেয়ার চেষ্টা করবেন।