সন্দেহজনকভাবে শেয়ারের দাম বৃদ্ধিতে তদন্তের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে লভ্যাংশ না দেয়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। দেখা যাচ্ছে, মাত্র এক মাসের মধ্যে এ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তাই কোম্পানির শেয়ারের দাম এমন সন্দেহজনকভাবে বাড়ার বিষয়টি তদন্ত করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। ডিএসইকে চিঠি জারির ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে এমারেল্ড অয়েলের শেয়ারের দাম ও লেনদেন উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়ে ৩০ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৫২ টাকা ৩০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। মাত্র ২৫ দিনের মধ্যে (২ থেকে ২৬ এপ্রিল) ৬৯ দশমিক ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে মনে করছে বিএসইসি।

বিষয়টি কমিশনের নজরে আসায় কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের বিষয়ে ডিএসইকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যা চিঠি পাওয়ার ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে বিএসইসি।

তথ্য পর্যালোচায় দেখা যায়, গত ২ এপ্রিল কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩০ টাকা ৮০ পয়সা। গতকাল মঙ্গলবারের লেনদেন শেষে প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৬৪ টাকা ৯০ পয়সায়।

শেয়ারের দাম এভাবে বাড়লেও ২০১৬ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। সম্প্রতি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালের লভ্যাংশ-সংক্রান্ত ঘোষণা দিয়েছে। লোকসানে থাকায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ তিনটি বছরে কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অপরদিকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের পর কোম্পানিটি আর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।

উল্লেখ্য, তালিকাভুক্ত হওয়ার তৃতীয় বছরে কারখানা বন্ধ করে মালিকপক্ষের আত্মগোপনে যাওয়ার ওই সময়টায় ব্যাপক লোকসান হয়েছে কোম্পানির। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ঘোষণা না দিয়ে কোম্পানি বন্ধ করে দেয়ার বছরে ব্যাপক লোকসান হয়েছে। প্রায় ৬০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানি ওই বছর লোকসান দিয়েছে ২০৫ কোটি পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৫৯০ টাকা। তাতে শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় ৩৪ টাকা ৩৪ পয়সায়। ওই লোকসানের কারণে শেয়ারপ্রতি সম্পদ কেবল শূন্যে নয়, নেতিবাচক অবস্থানে চলে যায়। আগের বছর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ১৭ টাকা ২৩ পয়সা। পরের বছর শেয়ারপ্রতি দায় দাঁড়ায় ১৭ টাকা ৪৬ পয়সায়।

২০১৪ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা তুলে নেয়। ২০১৬ সালে এমারেল্ড অয়েল ১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা লাভ করে এবং ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। ওই বছরই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দুদকের মামলায় জেলে যেতে হয় কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ হাসিবুল গণি গালিবকে। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে দেশের বাইরে চলে যান তিনি। বন্ধ হয়ে যায় কারখানা। বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাঁচ বছর পর গত বছর উৎপাদনে ফেরে এ কোম্পানি। ২০২০ সালে বিএসইসির নেতৃত্বে পরিবর্তনের পর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিগুলো নতুন করে চালু করতে পর্ষদ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০