সন্দেহজনক লেনদেনকারীদের আইনের আওতায় আনুন

 

দেশে আর্থিক খাতে বেনামি ও ভুয়া ঋণের সন্দেহজনক লেনদেন ও কার্যক্রম বেড়ে গেছে। মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেনামি ও ভুয়া ঋণের সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) ও সন্দেহজনক কার্যক্রম (এসএআর) প্রতিবেদন হয়েছে ৫২০টি। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৩৪১টি। এ ধরনের প্রতিবেদন বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিএফআইইউ বলেছে, ব্যাংক থেকে বেনামি ও ভুয়া ঋণ নিয়ে অনেকে দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এসব ঋণ বেশিরভাগ ব্যাংক পরিচালকদের অ্যাকাউন্ট হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। এছাড়া ঋণ আবেদন আসার আগে অনুমোদন হয়ে যাচ্ছে। আবার অনুমোদন হওয়ার আগে বিতরণ হয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করা হয়। কিছু দিন পর এসব ঋণের গ্রাহক খুঁজে পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সভা করে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইনডিকেটর সরবরাহ করা হয়, যাতে তারা বুঝতে পারে কোনো ধরনের ঋণ তুলে নিয়ে পাচার করা হচ্ছে। এমন সচেতনতায় এ ধরনের রিপোর্টিং বেড়ে গেছে। ওই দিন বিএফআইইউ বলেছে, এসটিআর মানেই যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা নিশ্চিত নয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে তথ্য খতিয়ে দেখা হয়। এসটিআরের বিপরীতে প্রমাণ পেলে বিএফআইইউ তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি নিয়ে রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন মর্মে সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বিশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশি এই রাজনীতিবিদের বিশাল সাম্রাজের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে। ব্লুমবার্গের ওই প্রতিবেদনের বিষয়টি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়েও উঠেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের সম্পর্কে যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সে বিষয়ে অবগত। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র। তিনি বলেন, … দেশটির আইন ও আর্থিক বিধিবিধান মেনে চলেন, তা নিশ্চিত করতে তারা বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করছেন।

এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থ পাচারে শীর্ষ ৩০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। যেভাবেই অবৈধভাবে দেশের অর্থ বিদেশে যাচ্ছে, তাতে নীরব থাকার সুযোগ নেই। এর আগে কানাডা-মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থই পাচার হয়েছে। অথচ পাচার হওয়া অর্থ দেশে উৎপাদশীল খাতে ব্যয় করা গেলে বিপুল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো, আমদানি ব্যয় কমত এবং রপ্তানি আয় বাড়ত। সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ত্বরান্বিত হতো। পাচার রোধে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা তথা সরকার নানাভাবে প্রচারণা চালায়, এ ধরনের অর্থ সাদা করার জন্য বিভিন্নভাবে ছাড় দেয়াসহ কত ধরনের ব্যবস্থা নেয়, তবু পাচার থামানো যাচ্ছে না বিদেশের ক্যাসিনোতে টাকা উড়ানোর খবর এখন পুরোনো। যারা বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়-অপব্যবহার করে, ঋণ পরিশোধ না করে কিংবা উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় না করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হচ্ছেন, বিদেশে পাচার করছে তারা রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দল, প্রভাব-প্রতিপত্তি বিবেচনা করে কোনোভাবেই অর্থ পাচারকারীদের ছাড় দেয়া উচিত নয়। সরকার সন্দেহজনক লেনদেনকারীদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনবে বলেই প্রত্যাশা।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০