মেহেদী হাসান, রাজশাহী: সপ্তাহ ব্যবধানে রাজশাহীতে ফের বেড়েছে মুরগির দাম। গতকাল শনিবার স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারিতে কেজিপ্রতি সব ধরনের মুরগিতে গড়ে ১০ টাকা বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে ডিমের দামও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের শুরু থেকে কয়েক দফায় মুরগির দাম বেড়ে চলতি সপ্তাহে ফের বেড়েছে দাম। সরবরাহ ঘাটতি এবং চাহিদা বৃদ্ধির কারণে মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে বলে মনে করা হয়।
স্থানীয় পোলট্রি খামারিরা জানান, শীতের শুরুতেই মুরগি উৎপাদন শুরু করেন রাজশাহীর খামারিরা। কভিডের প্রভাবে দীর্ঘদিন উৎপাদন-বাজারজাত ব্যাহত হওয়ায় সম্প্রতি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে খামারে বাচ্চা তোলেন তারা। শুরুর দিকে মুরগির দাম ছিল। কিন্তু বর্তমানে বাজারে মুরগি আমদানি কম থাকায় দাম বাড়তে শুরু করেছে। ফলে রাজশাহীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে দেশি ও ব্রয়লার মুরগি ছাড়াও সব ধরনের মুরগির দাম বেড়েছে।
রাজশাহীর সাহেববাজার মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারের পাইকারি মুরগি বিক্রেতা মিঠুন মিয়া শেয়ার বিজকে বলেন, মুরগির দাম উঠানামা করছে। সব ধরনের মুরগির দামই সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়ছে। ক’দিন আগে সোনালি মুরগির দামটা একটু চড়া ছিল। তারপর মুরগি মোটামুটি কম দামে বিক্রি করেছি। আবার বাড়তে শুরু করেছে।
এ ব্যবসায়ী জানান, গত সপ্তাহে বড় ব্রয়লার কেজিপ্রতি ১৩৫ টাকা ছিল বর্তমানে বিক্রি করছি ১৫০ টাকা। ছোট ব্রয়লার ১৫৫ টাকা কেজি, সোনালি ২৪০ থেকে আড়াইশ’ টাকা, লেয়ার সাদা ২০০ টাকা, লেয়ার লাল ২২০ টাকা, যা আগে ছিল ১৯০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও দাম কমে যাওয়ার সময় ছিল সাড়ে ৩০০ টাকা।
স্থানীয় আরেক ব্যবসায়ী নাদের হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে। আর বাড়বে বলে মনে হয় না, যা দাম আছে এ দামেই চলবে। আবার বলাও যায় না, বাজার টান পড়লে দাম বাড়ে। দেখতেই পাচ্ছেন তো বাজারে মুরগি কম। কাঁচামালের বিষয়ে বলা মুশকিল।
এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে বাজারে ডিমের দাম হালিতে বেড়েছে দুই টাকা। পাইকারি পর্যায়ে ৯০ পয়সা বাড়লেও খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে দুই টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ডিম ব্যবসায়ী শামীম হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ডিমের দাম আর দু-এক টাকা বাড়তে পারে। শীতে ডিমের দাম কিছুটা বাড়ে। কাঁচাবাজারের ঠিক নাই। মাল (ডিম) একটু টান পড়লে দাম বাড়ে আবার ক্রেতা কমে গেলে বা চাহিদা না থাকলে দাম কমে যায়। শীতের সময় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ডিম বিক্রি হওয়ায় চাহিদা একটু বাড়তিই থাকে। তবে, ডিমের দাম সর্বোচ্চ আর এক থেকে দুই টাকা বাড়তে পারে। তিনি জানান, প্রতি হালি লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকায়। সাদা ডিম ৩২ টাকা ও হাঁসের ডিম ৫০ টাকা হালি দরে বিক্রি করছেন।
ডিমের দাম ও মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্যের এবং বাচ্চার দাম বেশি। বস্তাপ্রতি খাদ্যেও দাম ফের বাড়ানো হয়েছে ৫০-৭৫ টাকা। দাম বাড়ার কারণে মূলত বাচ্চা তুলছেন না খামারিরা। কভিডের ভয়ে কয়েকমাস আগে খামারিরা বাচ্চা না তোলার কারণে এখন তৈরি মুরগি বাজারে টান পড়ে। এ কারণেই মূলত দাম বেড়ে ৩০০ টাকা কেজি লাগে। এখন মুরগির বাজার আস্তে আস্তে কমবে। তবে, এখন যে বাজার আছে তাতে আমাদের লাভ হচ্ছে। কমে গেলে লাভ থাকে না।
রাজশাহী পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, রাজশাহীতে ৬০ ভাগ খামার ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। বার্ড ফ্লু রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মুরগি মারা গেছে। ভয়ে আর নতুন বাচ্চা তুলেননি খামারিরা। যেসব খামার বন্ধ ছিল তারা উৎপাদনে ফিরেছেন তাই একটু দাম কমেছে। তবে, আবার দাম বাড়তে পারে। কঠিন শীতে খামারিরা বাচ্চা তোলেন কম। কারণ বাচ্চা মৃত্যুর হার এ সময় বেড়ে যায়।
ডিমের দাম আরও বাড়বে কি নাÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিমের দামও বাড়বে। অনেক লেয়ার খামারি মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন। খাদ্যের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৪০০ টাকা। এ দাম বাড়ানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। বৈশ্বিকভাবে দাম ১২ টাকা থেকে ১৩ টাকা বাড়লে বাংলাদেশে সিন্ডিকেটে দাম বাড়ায় ৭০-৮০ টাকা। এটা কোনো নীতি-নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। ডিমের দাম বাড়ানো প্রয়োজন। সর্বনি¤œ ৩৬ টাকা হালি লাল ডিম থাকা প্রয়োজন।
বাজারে মাছের দামও বেশ চড়া হয়েছে। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন মাছের আমদানি বেশ ভালো। বিক্রি হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি। প্রতি কেজি রুই আকার ভেদে ছোট থেকে বড় সর্বনি¤œ ২০০ টাকা এবং তিন কেজি ওজনের রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। কাতল ২৮০, তেলাপিয়া ১৪০, চিংড়ি ৮০০, বোয়াল ৬০০, পাবদা সাড়ে ৪০০, সিলভার কার্প ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও বাজার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, শীতকালীন সবজির দাম মধ্যম পর্যায়ে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে অনেক আগেই। অনেক বেশি আমদানি হলে দাম আরও কমে যাবে।
