সরকারি কৃষি খামারে চাকরির সুবাদে ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি আগ্রহ জন্মে সেলিম বিশ্বাসের। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে রাস্তার ধারে সবজির আবাদ করে উপার্জনও করেন তিনি। বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি ১৯৭০ সালে তিনি চাষাবাদ শুরু করেন। ধান, গম ও ভুট্টার পাশাপাশি গড়ে তোলেন নানা জাতের আম, লিচু ও বড়ইয়ের বাগান।
সেলিম বিশ্বাসের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাইদঘাট গ্রামে।
আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য ২০০৩ সালের দিকে তিনি চুয়াডাঙ্গায় প্রথম রোটারের (মিনি ট্রাক্টর) ব্যবহার শুরু করেন। তার দেখাদেখি গ্রামের অনেক যুবক রোটার বা ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। তিনি কৃষকদের অর্থ সাশ্রয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য একটি হারভেস্ট মেশিন কেনেন, যা দিয়ে দিনে ছয় থেকে সাত বিঘার ধান মাড়াই ও কাটা যায়। এ কাজে তার ড্রাইভার এক হাজার থেকে দেড় হাজার আয় করেন।
তিনি বলেন, একজন শ্রমিক দিনে পরিশ্রম করে যা রোজগার করেন, তা দিয়ে ভালোভাবে জীবনযাপন করা কঠিন। আমি এলাকার কৃষক ও শ্রমিকদের ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই। বর্র্তমানে তিনি ইজারাসহ ২০০ বিঘা জমিতে ফসলের আবাদ করছেন।
থাই বারোমাসি আম (কার্টিমন), থাই পেয়ারা ৫’-এর মিশ্র ফল বাগানে ১০ বিঘা জমিতে সাথি ফসল হিসেবে নানা ধরনের সবজি, তেল ও মসলাজাতীয় ফসল আবাদ করেছেন। তিনি তার জমির পুরোটাই উৎপাদনের আওতায় এনেছেন। জমি ঘেরার কাজে ব্যবহার করেছেন ৩৭২টি সিমেন্টের খুঁটি। প্রতিটি খুঁটিতে রোপণ করেছেন তিনটি করে নানা জাতের ড্রাগনের কাটিং। দিয়েছেন তারের বেড়া। বেড়ার ধারে দুই ফুট পরপর রোপণ করেছেন টমেটোর চারা। ফার্মের নাম দিয়েছেন মায়ের নামে ‘জাহানারা অ্যাগ্রো ফার্ম’।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহিন রাব্বি বলেন, এ ফলবাগানে ৩৭২ খুঁটি রয়েছে। সেগুলোও সেলিম বিশ্বাস উৎপাদনের আওতায় এনেছেন। এ ধরনের সৃজনশীলতায় আমরা মুগ্ধ। জাহানারা অ্যাগ্রো ফার্মের পরিচর্যায় রয়েছেন ১০ শ্রমিক।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, মিশ্র ফলবাগান করে অনেকে লাভবান হচ্ছেন। এ এলাকায় একদিন কৃষি পর্যটনশিল্প গড়ে উঠবে। অনেকে এ ধরনের বাগান দেখতে এসে উদ্যোগী হয়ে বিনিয়োগ করছেন। এখানে উৎপাদিত ফল ও ফসল যেন নিরাপদ হয়, সে লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করছে। মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা