Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 4:21 pm

সবচেয়ে অনিশ্চিত স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি এবং অর্থনৈতিক হুমকি

গত ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে উত্থিত কভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী মহামারির কারণে বিশ্ব মারাত্মক এবং তীব্র জনস্বাস্থ্য জরুরি ও অর্থনৈতিক হুমকিতে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে কভিডকে বিশ্বব্যাপী মহামারি হিসাবে ঘোষণা করেছে। এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে আর্থিক বাজারগুলো হুড়োহুড়ি শুরু করে। এ মহামারির কারণে বড় প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে তাদের পূর্বাভাস কমিয়েছে।

কভিড-১৯ বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট এবং বৃহত্তম অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, যা বিশ্ববাসী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯১৮ এর স্প্যানিশ ফ্লু-য়ের সময় মোকাবিলা করেছিল, যেটা ১৫ মাস স্থায়ী হয়েছিল। এটি ৫০ কোটি মানুষকে সংক্রমিত করেছিল, ৫০ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল, যা তৎকালীন বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছিল। ১৯১৮ সালের সেই ভাইরাস অদ্যাবধি রয়ে গেছে মহামারি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস হিসেবে, এ ভাইরাসে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য মৃত্যু ঘটে। বিশ্বে এত উন্নয়ন হয়েছে অথচ দুর্ভাগ্যক্রমে এখনও স্বাস্থ্য খাত অবহেলিত রয়ে গেছে।

এ মহামারির ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকট, অরক্ষিত জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করা এবং দীর্ঘস্থায়ী পুনরুদ্ধারে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য সংকট অবসান হওয়ার পর উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, অনানুষ্ঠানিকতার দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা এবং শক্তিশালী ও টেকসই বৃদ্ধিকে সমর্থন করবে এমন সংস্কার বাস্তবায়ন করা জরুরি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে নি¤œ আয়ের এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর বিপজ্জনক অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে, উন্নত অর্থনীতিগুলো মন্দায় পিছলে যাওয়ার ফলে পণ্যগুলোর দাম হ্রাস পাবে এবং এসব দেশের রপ্তানি আয়ের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তরঙ্গের মতো চলমান মহামারিটিকে মোকাবিলার জন্য রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা, লকডাউন, যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা, ভ্রমণকে সীমাবদ্ধকরণ, নাগরিকদের বিচ্ছিন্নকরণ এবং বৃহত্তর জমায়েত বাতিল করে ভাইরাসের বিস্তারকে কমিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

মহামারিটির মেয়াদ দীর্ঘায়িত হলে ব্যাপক বেকারত্বের সৃষ্টি হতে পারে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে। কিছু শিল্প, যেমন পর্যটন এবং বিমান, অবশ্যই সমস্যায় পড়বে। এটি এমন এক ঝুঁকির তৈরি করেছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। অন্যদিকে, সামাজিক দূরত্বের প্রয়োজনীয়তার কারণে প্রচুর ইভেন্ট বাতিল  হয়েছে, ভ্রমণ ব্যবসা ধ্বংস হয়ে গেছে, ব্যবসা-বাণিজ্য, রেস্তোরাঁ এবং শপিংমল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক উন্নত দেশই অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে জরুরি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কভিড-১৯ এ কতজন আক্রান্ত হয়েছে, শুধু এটাই বিবেচ্য নয়। এর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাটাও জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমরা একটি নতুন বিশ্ব দেখব, যা অনেক আলাদা ও অজানা। বিশ্বনেতাদের মানবতাকে  রক্ষায় একত্র হতে হবে, ভবিষ্যতে এ মহামারি মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ও ওষুধের বিকাশের জন্য আরও বেশি অর্থ বরাদ্দের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

আইসিসিবি ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়