সবচেয়ে বিপজ্জনক মানসিক রোগ

মানসিক রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম সিজোফ্রেনিয়া। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করে না। তার চেতনা ও কাজকর্মে অসঙ্গতি দেখা দেয়। বোধশক্তি লোপ পায়। আচরণে দেখা দেয় ত্রুটি। এ রোগের ধরন ও চিকিৎসা নিয়ে লিখেছেন হাসান আদিল

সাধারণত তিন ধরনের সিজোফ্রেনিক রোগী দেখা যায়

প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া: এ ধরনের সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি অতিমাত্রায় চিন্তা করেন। তার মধ্যে সন্দেহ করার প্রবণতা বেড়ে যায়। সন্দেহপ্রবণতার কারণে তিনি অভ্যস্ত পরিবেশেও অনিরাপত্তায় ভোগেন। কল্পনায় যা ভাবেন, বাস্তবে তা দেখতে চান। অন্যথায় তিনি শঙ্কিত হয়ে পড়েন। ভাবনা ও বাস্তবতার তফাৎ তাকে উত্তেজিত করে ফেলে। এমন পরিস্থিতিতে আক্রান্ত রোগী কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে সামান্যতম দ্বিধাবোধ করেন না। এ ছাড়া তিনি সব সময় মনে করেন কেউ তার ক্ষতি করতে চাইছে বা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

ক্যাটাটনিক সিজোফ্রেনিয়া: এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগী অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকেন। তিনি থামতে জানেন না। কোনো বিষয় একবার শুরু করলে তা বারবার করতে থাকেন। যেমন কোথাও বসলে বিন্দুমাত্র নড়াচড়া করেন না। দীর্ঘক্ষণ একই স্থানে একই ভঙ্গিতে বসে থাকেন। আবার অনেক সময় কোনো কিছুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। বিড় বিড় করে একই কথার পুনরুক্তিও করতে থাকেন।

 ডিসঅর্গানাইজড সিজোফ্রেনিয়া: এ ধরনের সিজোফ্রেনিক রোগী মূলত কল্পনার জগতে বসবাস করেন। তার কথাবার্তা, চলাফেরা, আচার-আচরণ বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি চান সবাই তার কথা মন দিয়ে শুনুক। অন্যথায় ক্ষেপে ওঠেন। এ ধরনের রোগী খিটখিটে মেজাজের হয়ে থাকেন। অকারণে বকাবকি করা, কারণ ছাড়া হাসতে থাকা এ রোগের লক্ষণ।

 কারণ:

বংশগত কারণে এ ধরনের রোগ হতে পারে। ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক অথবা পেশাগত জীবনে কোনো দুর্ঘটনা থেকে অনেকে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন। আবার কোনো বিষয়ে ট্রমা, অতিরিক্ত মাদক গ্রহণ, অর্থনৈতিক সমস্যা ও বেকারত্বের কারণেও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে যে কেউ।

 বুঝবেন কীভাবে:

সিজোফ্রেনিক রোগীর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তার কথা-বার্তা, আলোচনার অধিকাংশ জুড়ে থাকে ‘আত্মহত্যা’। তিনি আত্মহত্যা নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন। এমনকি অনেক সময় আত্মহত্যার পরিকল্পনাও করেন।

আক্রান্ত ব্যক্তি ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় ভোগেন। জীবন নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন। অকারণে ভ্রান্ত ধারণা পুষে রাখেন। সবসময় অলীক কল্পনায় বুঁদ হয়ে থাকতে ভালোবাসেন। এলোমেলো কথাবার্তা বলেন, নানা ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করেন। সব ধরণের সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিন।

 

চিকিৎসা:

এ রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে ‘অ্যান্টিসাইকোটিক মেডিকেশন’। পরিপূর্ণ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীকে মানসিকভাবে শক্ত রাখা প্রয়োজন। তাকে সামাজিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে।

এ ধরনের রোগীকে কখনো হেয় করা যাবে না। অপমান করা যাবে না। বরং বন্ধু হয়ে তার পাশে থাকতে হবে। এ জন্য কাউন্সেলিংয়ের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মানসিক এ রোগের চিকিৎসার জন্য অকুপেশনাল থেরাপির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০