শেয়ার বিজ ডেস্ক: কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের সমেষপুর গ্রাম। এ এক গ্রামেই কয়েক কোটি টাকার শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদিত হয়। এখানকার কমপক্ষে শতাধিক পরিবার প্রতি বছর জুলাই মাসের শেষ সময় থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চারা উৎপাদন করছেন। এ সময়ে এ গ্রামটিতে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা মূল্যের কপি চারাসহ নানা সবজির চারা বিক্রি হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে এ চারা উৎপাদনে জড়িত শতাধিক পরিবার। খবর : বাসস
সমেষপুর এলাকার কৃষকরা জানান, কৃষিনির্ভর এ এলাকায় সুপ্রাচীনকাল থেকেই কৃষকরা নানাজাতের শাকসবজি, তরিতরকারী উৎপাদন করে আসছে। তবে বিগত শতাব্দির ৮০’র দশকের মাঝামাঝি থেকে এ এলাকার কৃষকরা ব্যাপক শীতকালীন জনপ্রিয় সবজি ফুল ও বাঁধাকপির চারা উৎপাদন শুরু করে। এক সময়ে সারাদেশে চারার জন্য এ এলাকার নাম ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষকরা চারার জন্য ছুটে আসেন।
সমেষপুর গ্রামের কপিচারা উৎপাদনকারী কৃষক সোলেমান, আমিরুল ইসলাম, সাইফুল, কামরুল ইসলাম বাসসকে জানান, প্রতি বছর জুলাই মাসের শেষ দিকে ময়নামতি এলাকার এ উঁচু জমিতে কপি চারা উৎপাদনের জন্য প্রথমে জমি তৈরি করা হয়। এরপর প্রতিটি লম্বায় ১২ ফুট এবং প্রস্থে ৪ ফুট আকারের ছোট ছোট জমিতে টুকরা করা হয়। স্থানীয় ভাষায় যাকে বীট বলে। এরপর বীজ রোপণ করে। বীজ বপনের ৩-৪ দিনের মধ্যেই চারা গজাতে থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যেই চারা বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে।
কৃষক জহিরুল বাসসকে বলেন, আগস্টের শুরুতে প্রতি হাজার কপি চারা গড়ে দেড় হাজার টাকা বিক্রি করি। পরে চারার মূল্য কিছুটা কমে আসে। কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ গ্রামে প্রায় ৫০ একর জমিতে ১০০ কৃষক পরিবার প্রতি বছর শীতকালীন বিভিন্ন সবজির চারা উৎপাদন করে। গুণগত মান ভালো হওয়ায় এ চারার চাহিদা সারাদেশে রয়েছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও যাচ্ছে এ চারা। প্রতি সিজনে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা মূল্যের চারা এখানে ক্রয়-বিক্রয় হয়।
শুধু সমেষপুর গ্রাম নয়, জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় শীতকালীন নানা সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। যার চাহিদা রয়েছে দেশের অন্যান্য জেলাগুলোতেও। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, জেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং, দেবিদ্বার, চান্দিনা, বরুড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদিত হয়।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, দেশের সবজির চাহিদার বড় একটা অংশের উৎপাদন হয় কুমিল্লার বুড়িচং থেকে। এখানে সবজির আবাদের জন্য যে চারাটা লাগে সেটা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা শীতকালীন নানা সবজির চারা উৎপাদন করে থাকে। গত বছরে শুধু ময়নামতির সমেষপুর গ্রামের কৃষকরা প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার চারা বিক্রয় করে। পুরো জেলায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা মূল্যের সবজির চারা উৎপাদিত হয় আমরা এ চারা উৎপাদনে কৃষকদের যেসব উপকরণ লাগে তার সরবরাহ নিশ্চিতে কাজ করে থাকি।