নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাকাল সাধারণ মানুষ। ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে আয় বাড়েনি। বেশি বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত তথা সীমিত আয়ের মানুষ। জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে বাধ্য হচ্ছে সবাই। এ অবস্থায় বাজারে দাম বেড়েছে বেশিরভাগ সবজির। এটি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবেই কষ্ট বাড়াবে সাধারণ মানুষের।
গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘কাঁচামরিচের কেজি ৪০০ টাকা, দাম বাড়তি শসা-গাজর-আলুর’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কাঁচামরিচের দাম বাড়ছেই। গত সপ্তাহে ২৬০-২৮০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি হলেও এখন তা ৪০০ টাকা ছুঁয়েছে। একই সঙ্গে দাম বেড়েছে আলু, শসা ও গাজরের। সরবরাহ কম থাকায় বাজারে সবজির দামও চড়া। আর বাজারে তুলনামূলকভাবে গরু ও মুরগির মাংসের চাহিদা কম থাকলেও দাম আকাশছোঁয়া। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় হু-হু করে কাঁচামরিচের দাম বাড়ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে কাঁচামরিচের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সবজি বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের মধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে মরিচ ঢাকায় না আসায় দামটা একটু বেশি বেড়েছে। দু-তিন দিনের মধ্যে কিছুটা কমে যাবে।
সন্দেহ নেই, ঈদ ঘিরে সরবরাহ ও পরিবহনে বিঘ্ন ঘটেছে। তাই সবজির দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দাম বাড়লে তা দুঃখজনক। এমন বিপর্যয়ের দিনে অসাধু সুযোগসন্ধানীদের নিবৃত্ত করতে হবে। এ লক্ষ্যে বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে। সবজি সরবরাহ ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত যানবাহনগুলোর স্বাভাবিক চালাচল নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের অবশ্যই মাঠপর্যায়ে যেতে হবে। যেমন, পণ্যবাহী ট্রাক থেকে পুলিশের বখরা আদায় বন্ধ করতে হবে। পথে পথে রাজনৈতিক কর্মীদের চাঁদাবাজিও বন্ধ করতে হবে।
টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পেঁয়াজ, রসুন ও আদাসহ নিত্যপণ্য বিক্রি করলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির লাঘব হবে। কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, রসুন ও আদা ব্যবসায়ীদের গুদামগুলোয় নজরদারি করতে হবে, যাতে তারা কারসাজি করতে না পারে।
অন্তত ঈদের আগে ও পরে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সাময়িকভাবে কৃষকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে সরাসরি সব পণ্য কেনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সরকারি পরিবহনের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করতে হবে। এসবের পাশাপাশি বেসরকারি বাজারগুলোকেও কড়া নজরদারিতে রাখতে হবে। কৃষকরা ভালো দাম পাবেনÑএ বিবেচনায় সবজির দাম বৃদ্ধি একদিক থেকে প্রত্যাশিতও বটে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা লাভবান হচ্ছেন না। তাদের বেচা দামের চার-পাঁচগুণ দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে রাজধানীতে। সরবরাহ ও পরিবহন-শৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটায় সবজির দাম কতটা বাড়তে পারে, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ব্যবসায়ী কিংবা মধ্যস্বত্বভোগীর কারসাজিতে দাম বাড়লে তা দুঃখজনক। সাধারণ মানুষের আয় আগের অবস্থায় ফেরেনি। এমন প্রতিকূল সময়ে অসাধু চক্রকে নিবৃত্ত করতে হবে। এ লক্ষ্যে বাজারে নিয়মিত বাজার তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে।