Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 3:54 am

সবজিসহ নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে জোর দিন

সবজির বাজারে স্বস্তি ফিরেছেÑএমন খবর প্রকাশিত হচ্ছে গণমাধ্যমে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম আরও কমেছে। দাম কমার এ তালিকায় রয়েছে ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংস। তবে চালের দাম কমেনি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পণ্য পরিবহনে গত কয়েক দিন ধরে তাদের কোনো চাঁদা দিতে হচ্ছে না। এমনকি বাজারে আগে বিভিন্ন সংগঠনকে চাঁদা দিতে হতো, এখন সেসবেরও উৎপাত নেই। এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পণ্যের সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলেও এখন তা নেই। এসব কারণে পণ্যের দাম কমছে। এদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার তদারকিতে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। তারা বাজারে পণ্যের মূল্য তালিকা টানানো হয়েছে কি না, ব্যবসায়ীরা যৌক্তিক দামে পণ্য বিক্রি করছে কি নাÑএসব দেখার পাশাপাশি ট্রেড লাইসেন্স ও দোকানের সামনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও দেখছেন।

শিক্ষার্থীদের এ কাজকে বিক্রেতাদের পাশাপাশি বাজার করতে আসা ক্রেতারাও বেশ প্রশংসা করছেন। শিক্ষার্থীদের এ সচেতনতামূলক বাজার তদারকি কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে আমাদের। বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙার সময় এখনই। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাজার তদারকি শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। তাদের কার্যক্রম সাময়িক। এখন শিক্ষা নিতে পারি। কেন বাজারে স্বস্তি বিরাজ করছে। আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, ‘১০ টাকার লাউ কীভাবে ৫০ টাকা হয়ে যায়’ ধরনের খবর।

বাজারে স্বস্তি ফেরার পেছনে বড় কারণÑপথে পথে চাঁদাবাজি নেই এবং সংঘবদ্ধ চক্রের দৌরাত্ম্য কমছে। কিন্তু রাজনৈতিক সরকারের আমলে চাঁদাবাজ নেই এবং সংঘবদ্ধ চক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা সম্ভব নয়? সাধারণ মানুষের ধারণা অবশ্যই সম্ভব। দলীয় দুর্বৃত্ত এবং ব্যবসায়ীদের থামাতে পারলে বাজারের স্থিতিশীল দীর্ঘমেয়াদি করা সম্ভব। যারা বাজার তদারকি ও ব্যবস্থাপনায় থাকনে তাদের উদাসীনতা কিংবা যোগসাজশ থাকলে বাজারে দুর্বৃত্তপনা থেকেই যাবে। রাজনৈতিক সরকারের দায়ও কম নয়। তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বই দেয় না। সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে বাজারের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা হয় না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় সরকারের ওপর দিয়ে সরকার যদি চটে যায়! গণমাধ্যম কতটা জনগণের ভোগান্তি নিয়ে বলার বা লেখার সুযোগ পায়, সেটি কখনও বিবেচনা করা হয় না, যদি সরকার রুষ্ট হয়ে যায়।

পর্যবেক্ষণপূর্বক ব্যবস্থা নিতে হবে যেন চাঁদাবাজরা রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্রয় না পায়। রাষ্ট্রও সরবরাহ-শৃঙ্খলের প্রতিটি স্তরে নজরদারি করতে পারে। উৎপাদক, সরবরাহকারী, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতার যেন বাইরে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী না থাকে। সবজিপণ্যের রুটগুলোয় চাঁদাবাজি বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে। ভোজ্যতেল ও চিনির বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন সরকারি সংস্থার সঙ্গে দরকষাকষি করেই মূল্য নির্ধারণ করে। পরে দেখা যায়, নির্ধারিত মূল্য মানছে না তারা। দায়িত্ববোধের জায়গায় শক্ত অবস্থানে না থাকলে বাজারে স্থিতিশীলতা আনয়ন সম্ভব নয়।