সবজি গ্রাম আখাউড়ার কৃষ্ণনগর

ভোর থেকেই সব বয়সী মানুষের ছোটাছুটি সবজি ক্ষেতের দিকে। কেউ সবজি ক্ষেত ও চারা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন, কেউ সবজি বিক্রির উপায় খুঁজছেন। কারণ, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবজি কনতে বিভিন্ন স্থান থেকে আসবেন পাইকাররা। তাই বিক্রির জন্য সবজি প্রস্তুত রাখতে হয়। কেউ কেউ স্থানীয় বাজারেও উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে থাকেন। সবজি ঘিরেই কাটে তাদের দিন-রাত। এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামে। এখানকার বেশিরভাগ চাষিই সবজি চাষের যেন বিপ্লব ঘটিয়েছেন। মৌসুম হওয়ায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লালশাক, টমেটো, শিম, লাউসহ নানা জাতের দেশীয় সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ গ্রামের কৃষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

ফলন ভালো হওয়ায় এখানে বেড়েছে সবজির আবাদ। কৃষ্ণনগরের কেউ সবজি চাষ করে না এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া ভার। এসব কারণে গ্রামটি ‘সবজি গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে। নাম কৃষ্ণনগর হলেও এখন ‘সবজি গ্রাম’ হিসেবে চেনেন সবাই। এখানে উৎপাদিত সবজি নিজেদের, এমনকি উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।

খরচ কম কিন্তু লাভ বেশি হওয়ায় এ গ্রামের অধিবাসীরা ধানের বদলে সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তাই প্রতি বছর বাড়ছে সবজি চাষের পরিধি। বর্তমানে শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুম হওয়ায় দিগন্তজোড়া মাঠে শুধু সবজি আর সবজি। মন-প্রাণকে যেন কেড়ে নেয় সবুজ সবজির সমারোহ।

সরেজমিনে দেখা যায়, আবদুল মান্নান, আবদুল জলিল, ইউসুফ মিয়া, মো. হোসেন মিয়াসহ অনেক কৃষক সবজি পরিচর্যাসহ বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নারী ও শিশুরা তাদের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করছে। সফল সবজিচাষি আবদুল মান্নান বলেন, চলতি মৌসুমে দেশীয় পদ্ধতিতে ১৫০ শতক জমিতে ফুলকপি, মুলা, লালশাক, টমেটোসহ অন্যান্য জাতের সবজির আবাদ করেছি। ১০ হাজার ফুলকপির চারা লাগিয়েছি। সবজি গাছের অবস্থা এখন পর্যন্ত ভালো। প্রতিটি গাছে একটি করে ফুলকপি ধরে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে খরচ বাদে দুই লাখ টাকার বেশি আয় হবে বলে আশা করছি।

কৃষক আবদুল জলিল বলেন, ১৫ বছর ধরে সবজি চাষ করছি। এখানকার মাটি সবজি চাষের উপযোগী। সেচের সুবিধা রয়েছে, তাই বছরের বেশিরভাগ সময় সবজি চাষ করা যায়। এ বছর বীজতলাসহ প্রায় দেড় একর জমিতে বাঁধাকপি, লালশাক, মুলা, লাউসহ নানা জাতের শীতকালীন সবজির আবাদ করেছি। গত বছরের চেয়ে এবার অধিক মুনাফা করতে পারব বলে আশাবাদী। মো. হোসেন মিয়া বলেন, ১১ বছর ধরে সবজির চাষ করছি। এ বছর প্রায় ৪০ হাজার টাকার মূলা ও লালশাক বিক্রি করেছি। ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ফুলকপি বিক্রি করব। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে যাবতীয় খরচ বাদে এ মৌসুমে আড়াই লাখ টাকার বেশি আয় হবে বলে আশা করছি। মো. ইউসুফ মিয়া বলেন, সবজি চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও বছরে দেড় লাখ টাকার মতো আয় করি। দেশীয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এখানকার সবজির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, কৃষ্ণনগর সবজি চাষের জন্য উপযোগী। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কৃষক সবজি চাষ করে আসছেন। এসব এলাকার কৃষক নিজ উদ্যোগে দেশীয় পদ্ধতিতে সবজি আবাদে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। আবহাওয়া অনুকূল ও বাজারদর ভালো থাকলে তারা বেশ লাভবান হবেন। এছাড়া ফলন ভালো করতে কৃষককে পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০