নিজস্ব প্রতিবেদক : নানা অভিযোগে আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয়ের প্রেক্ষাপটে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আস্থার সংকট কাটাতে ইসিকে পরামর্শ দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনে দেয়া ক্ষমতা প্রয়োগে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতেও সংস্থাটিকে তাগিদ দিয়েছেন তারা।
শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট নাগরিক ও মুদ্রিত সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের সঙ্গে তিন দফা সংলাপের পর গতকাল সোমবার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে এ সংলাপে ৩৯ জন সম্পাদক ও সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে সংলাপে উপস্থিত হন ২৭ জন।
সংলাপে অংশ নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, বিশ্বাসযোগ্যতার একটা সংকট রয়েছে। সেটা যদি কাটিয়ে উঠতে পারেন, তাহলে সেটা হবে আপনাদের বড় সাফল্য। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের আপনাদের বিশ্বাস করতে হবে, গণমাধ্যমের আপনাদের বিশ্বাস করতে হবে। রাজনৈতিকগুলোকে আপনাদের ওপর আস্থা রাখতে হবে। তাহলে সবাই নির্বাচনে আসবে।
বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ও সিটিজেন টিভির সিইও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, এখানে দুটো বিষয় করতে হবে। একটা হলো আস্থার সংকট, আরেকটা ইভিএমের ত্রুটি। এগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে।
বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ মাসুদ কামাল আস্থার সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, সাধারণ মানুষ নির্বাচন কমিশনের কথা বিশ্বাস করে না। এ বিশ্বাসের পরিমাণ গত দুটো নির্বাচনে শূন্যের কোটায় পৌঁছেছে। সাধারণ মানুষের কাছে আপনাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না, আস্থা অর্জন করতে পারলেন কি না, জানতে জানতে আগের দুটো নির্বাচন মূল্যায়ন করেন।
মাছরাঙা টিভির হেড অব নিউজ রেজোয়ানুল হক রাজা বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, ইসির বিষয় নয়। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে আনার ক্ষেত্রে ইসির ভূমিকা থাকতে হবে। তিনি মনে করেন, ইভিএমের ‘পেপার ট্রেইল’ চালু করলে অর্ধেক সমালোচনা করে যাবে। দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে ইসি আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
ইনডিপেনডেন্ট টিভির চিফ নিউজ এডিটর আশিস সৈকত বলেন, নির্বাচনের কমিশনের দৃঢ়তাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানে ক্ষমতা দেয়া রয়েছে আপনাদের, সরকারে কে থাকল সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
সময় টিভির হেড অব নিউজ মুজতবা দানিশ বলেন, বড় দলগুলোর অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। যদি ভালো নির্বাচন করতে হয় দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। তাদের গুডবুকে না নিতে পারলে কাজ উঠবে না।
এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন বলেন, ইসি চায় নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ থাকুক। আমি আশা করি, আপনারা চেষ্টা করবেন যেন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেÑএরকম একটা আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করা। ইসি যেন সিইসিকেন্দ্রিক হয়ে না উঠে, সেদিকে দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
বাসসের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, দলকে আহ্বান করার দায়িত্ব ইসিরও না, সরকারেরও না। জামাই আদর করে নির্বাচনে ডেকে আনতে হবে না। কমিশনের দায়িত্ব নির্বাচন করা।
আলোচনায় আরও অংশ নেন ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক ও সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, গ্লোবাল টিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান, যমুনা টিভির প্রধান নির্বাহী ফাহিম আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ প্রমুখ।
সকালে সংলাপের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে সিইসি বলেন, আমরা চাই, আস্থার সংকট থাকলে তা কাটিয়ে উঠে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক। আপনাদের পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী কর্মকৌশল নেব।
সাংবাদিকদের বক্তব্য শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রচেষ্টা তারা অব্যাহত রাখলেও কাউকে ভোটে অংশগ্রহণে বাধ্য করা তাদের দায়িত্ব নয়। তিনি বলেন, আপনারা বলেছেন আগামীতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও সংলাপ করার, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের চেষ্টা করার কথা বলেছেন কেউ কেউ।
তিনি বলেন, কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, কী করবে না, সেটা ফোর্স করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব থাকবে সবাইকে আহ্বান করা, আপনারা আসেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।