নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং মূলধারার ব্যাংকিংকে টেকসই করতে সহযোগিতা করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ কারণে আগামীতে এ ধরনের ব্যাংকিংয়ে কর্মকর্তাদের আরও বেশি জোর দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের টেকসই ব্যাংকিং কার্যক্রম’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় বক্তারা এ পরামর্শ দেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এসএম মনিরুজ্জামান। কর্মশালায় উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টেকসই ব্যাংকিং কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক এবং গ্রাহকেরও টেকসই ও সবুজ ব্যাংকিং কার্যক্রম বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মতামত উঠে আসে ওই প্রতিবেদনে।
আলোচকদের মতে, টেকসই ব্যাংকিং নিশ্চিত করতে হলে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশ এ তিন ক্ষেত্রেই যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। আর তা করা সম্ভব হবে ব্যাংক খাতে সুশাসন, নেতৃত্ব ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে। আগামী দিনে টেকসই ব্যাংকিংয়ের আওতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র্য, শস্যগুদাম ঋণ ও গ্রিন ট্রান্সপোর্টেশন খাতে অর্থায়ন গুরুত্ব পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক বছর ধরে টেকসই ব্যাংকিং নিয়ে কাজ করছে। মূলত সবুজ ব্যাংকিং, প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায় (সিএসআর) ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। সবুজ ব্যাংকিংয়ের উদ্যোগ ব্যাংকার ও গ্রাহকের মধ্যে পরিবেশের ঝুঁকি বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করেছে। এতে এখনও এগিয়ে রয়েছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিএসআরের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ ও দুর্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বিআইবিএমের চেয়ার অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংক খাতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে। এজন্য দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা প্রয়োজন। ব্যাংককর্মীদের প্রশিক্ষণের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, টেকসই ব্যাংকিং কার্যক্রম জোরদার করতে পারলে এসডিজি অর্জনে সহায়ক হবে।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, টেকসই ব্যাংকিংয়ের অর্থ এ নয় যে, ব্যাংক সেখানে কম মুনাফায় অর্থায়ন করবে। টেকসই ব্যাংকিং যেন লাভজনক হয়, সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এজন্য পণ্যে বৈচিত্র্য থাকতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সাবেক সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, টেকসই ব্যাংকিংয়ের নামে কোনো অপচয় করা যাবে না। টিকে থাকতে হলে অযাচিত পরিচালন ব্যয় কমাতে হবে। এজেন্ট ব্যাংকিং টেকসই ব্যাংকিংয়ের একটি বড় উপায় বলে মনে করছেন সাবেক এই কেন্দ্রীয় ব্যাংকার।
ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জিয়াউল হাসান মোল্লা বলেন, অর্থনীতিতে টেকসই ব্যাংকিং খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের সব ধরনের বাণিজ্যিক ব্যাংককে বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে বিশ্বের কাছে এটি একটি মডেল হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার মোর্শেদ মিল্লাত বলেন, টেকসই ব্যাংকিংয়ের জন্য প্রথমে ব্যাংক কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে মানসিকভাবে তৈরি করতে হবে।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের মহাপরিচালক মুহা. নাজিমুদ্দিন। কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক ও পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। এছাড়া কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তৌহিদুল আলম খান, বিআইবিএমের অধ্যাপক মো. নেহাল আহমেদ।