নিজস্ব প্রতিবেদক: গত অর্থবছরের শুরু থেকে সরকার কৃচ্ছ সাধন নীতি গ্রহণ করে। ডলার সংকটে আমদানি নিয়ন্ত্রণের সব ধরনের উদ্যোগই নেয়া হয়। এলসি খোলা কঠোর করা ছাড়াও যাচাই-বাছাই বাড়ানো হয়। এর ফলও পেয়েছে সরকার। ২০২২-২৩ অর্থবছর আমদানি কমে গেছে ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এ সময় চাল ছাড়া বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ও খাতেই আমদানি কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছর মোট আমদানি ব্যয় ছিল ৭৫ দশমিক ০৬১৬ বিলিয়ন ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছর যা ছিল ৮৯ দশমিক ১৬২৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আমদানি ব্যয় কমেছে ১৪ দশমিক ১০০৭ বিলিয়ন ডলার বা ১৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। এ সময় শুধু চাল ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য আমদানি বেড়েছে। বাকি গুরুত্বপূর্ণ সব পণ্যেরই আমদানি ব্যয় হ্রাস পেয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছর চাল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৫৭১ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার, আগের অর্থবছর যা ছিল ৪২৬ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছর চাল আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১৪৪ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ডলার বা ৩৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে গত অর্থবছর পরিমাণের দিক থেকেও চাল আমদানি বেড়েছে। খাদ্য অধিদপ্তর বলছে, বিদায়ী অর্থবছর চাল আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছর যা ছিল ৯ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন।
চাল বাড়লেও বিদায়ী অর্থবছর গম আমদানি কমেছে। এ সময় গম আমদানি করা হয়েছে ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। এর আগের অর্থবছর গম আমদানির পরিমাণ ছিল ৪০ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন। অর্থের হিসাবেও ২০২২-২৩ অর্থবছর গম আমদানি ব্যয় কমেছে। গত অর্থবছর এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২ দশমিক ০২৭৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছর এ ব্যয় ছিল ২ দশমিক ১৩৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছর গম আমদানি কমেছে ১০৭ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার বা পাঁচ শতাংশের কিছু বেশি।
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছর ভোজ্যতেল আমদানি ব্যয় সামান্য পরিমাণ কমেছে। ওই সময় এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২ দশমিক ৮৯২৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছর ভোজ্যতেল আমদানি ব্যয় ছিল ২ দশমিক ৮৯৩১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ নামমাত্র আমদানি ব্যয় কমেছে। যদিও এ সময় চিনি আমদানি কমেছে ১৯ শতাংশের বেশি। এ পণ্যটি আমদানিতে বিদায়ী অর্থবছর ব্যয় হয়েছে ১ দশমিক ০২৯৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে যে ব্যয় ছিল ১ দশমিক ২৭৫৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আমদানি ব্যয় কমেছে ২৪৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি।
এছাড়া গত অর্থবছর অন্যান্য খাদ্যপণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ১ দশমিক ৭২৯৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছর যে ব্যয় ছিল ১ দশমিক ৬১০৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ খাতে আমদানি ব্যয় ১১৯ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে। তবে এর উল্টো চিত্র ছিল জ্বালানি তেল আমদানিতে। ২০২২-২৩ অর্থবছর এ পণ্যটি আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৬২৭ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছর এ খাতে আমদানি ব্যয় ছিল ৯৩৫ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছর ৩০৮ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলারের বা প্রায় ৩৫ শতাংশ আমদানি ব্যয় কমেছে জ্বালানি তেলের।
খাদ্য ও জ্বালানির পরই আসে শিল্পের কাঁচামালের বিষয়টি। বিদায়ী অর্থবছর এ খাতের সবকিছুতেই ব্যয় কমেছে। এর মধ্যে তুলা আমদানি ব্যয় কমেছে প্রায় তিন দশমিক ৭১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছর এ পণ্যটি আমদানি হয়েছে ৪ দশমিক ২৭৩৮ বিলিয়ন ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছর যা ছিল ৪ দশমিক ৪৩৮৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আমদানি কমেছে ১৬৪ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ডলার।
যদিও তুলার চেয়ে বেশি কমেছে টেক্সটাইল ও সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি ব্যয়। এ খাতে বিদায়ী অর্থবছর ব্যয় হয়েছে ৭ দশমিক ৯৪৩৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছর এ ব্যয় ছিল ৯ দশমিক ৯৩৬৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার বা ২০ শতাংশের বেশি কমেছে টেক্সটাইল ও সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি ব্যয়। আর অন্যান্য কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী শিল্পপণ্য আমদানি ব্যয় কমেছে ২১ শতাংশের বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছর এ খাতে ব্যয় হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৮৮১২ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছর সে ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৪২৪৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ৮ দশমিক ৪৫৬৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় কমেছে।
২০২২-২৩ অর্থবছর মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৪ দশমিক ৮৪৭৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছর এ খাতে ব্যয় হয়েছিল ৫ দশমিক ৪৬৩২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যয় কমেছে প্রায় ৬১৬ মিলিয়ন ডলার বা ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর বাইরে অন্যান্য মূলধনি পণ্য আমদানি ব্যয় কমেছে ২০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছর এ খাতে আমদানি ব্যয় ছিল ৮ দশমিক ৭৩৩৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছর এ ব্যয় ছিল প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ খাতে আমদানি ব্যয় কমেছে ২ দশমিক ২৩৭৩ বিলিয়ন ডলার।
খাদ্য, শিল্প ও কাঁচামালের বাইরেও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করা হয়। বিদায়ী অর্থবছর এ খাতে আমদানি ব্যয় কমেছে আড়াই শতাংশের কিছুটা বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছর অন্যান্য খাতে আমদানি ব্যয় ছিল ৮ দশমিক ৯৫৯৯ বিলিয়ন ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছর যা ছিল ৯ দশমিক ১৯৫১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আমদানি ব্যয় কমেছে ২৩৫ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার।