Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:00 am

সব জেলা পরিষদে একই সংখ্যার সদস্য নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : সব জেলা পরিষদে একই সংখ্যার সদস্য না রেখে বিদ্যমান আইন সংশোধনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় সংসদ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম গতকাল বুধবার ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল, ২০২২’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগের বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করা হয়।

গত ২৩ জানুয়ারি বিলটি সংসদে তোলার পর তা পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। বিদ্যমান আইনে প্রতি জেলায় ১৫ সাধারণ সদস্য এবং পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকার বিধান রয়েছে। তা সংশোধন করে প্রত্যেক উপজেলায় (জেলার মোট উপজেলার সমানসংখ্যক) একজন করে সদস্য এবং চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ (নিকটবর্তী পূর্ণসংখ্যা) ও কমপক্ষে দুই নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে।

এদিকে বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনকে ভোটার তালিকা তৈরির কথা বলা থাকলেও পাস হওয়া বিলে নির্বাচন কমিশনকে বাদ দেয়া হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনায় সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে।

জেলা পরিষদের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, জেলার অন্তর্গত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলররা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা জেলা পরিষদের ভোটার।

বিলে নতুন উপধারা যুক্ত করে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে পরিষদের সভায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন, তবে তাদের ভোটাধিকার থাকবে না।

বিলে জেলা পরিষদের কার্যক্রম সরকারের নিবিড় পর্যাবেক্ষণে আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের ৩৭ ধারার পর ৩৭ক যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরিষদ প্রতি অর্থবছর শেষে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে সম্পাদিত কার্যাবলির ওপর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল করবে।

বিদ্যমান আইনে কেবল নতুন জেলা পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগের বিধান থাকলেও চলমান কোনো পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসক নিয়োগের বিধান নেই। বিলে জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ যুক্ত করা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে ৮২ নম্বর ধারা সংশোধন করে বলা হয়েছে, এতে কোনো জেলা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে এবং পরবর্তী পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পরিষদের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনো কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে। সরকার প্রশাসকের মেয়াদ নির্ধারণ এবং তাকে অব্যাহতি দিতে পারবে।

বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যমান আইনে জেলার আয়তন, জনসংখ্যা ও উপজেলার সংখ্যা প্রভৃতি নির্বিশেষে সব জেলা পরিষদে সমসংখ্যক মোট ২১ সদস্য রয়েছে, কিন্তু বৃহৎ আয়তনের তুলনায় ক্ষুদ্র আয়তনের জেলা পরিষদগুলোর রাজস্ব আয়ের সংস্থান খুবই কম। ফলে ক্ষুদ্র জেলার পরিষদের পক্ষে সদস্যদের সম্মানী পরিশোধ ও অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহের পর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ সম্ভব হয় না। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে প্রত্যেক জেলা পরিষদের সদস্যসংখ্যা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

এদিকে পাস হওয়া এই বিলে প্রশাসক নিয়োগের বিধানের বিরোধিতা করেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। তারা বলেন, প্রশাসক নিয়োগের বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, প্রশাসক নিয়োগের বিধান সংবিধানের ‘মূল চেতনার বিরোধী’। এই বিল পাস হওয়ার আগেই বাতিল হয়ে যেতে পারে। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ যদি আমলে নেয়া হয়, তাহলে এটা বাতিল হয়ে যাবে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রশ্ন তুলে বলেন, জেলা পরিষদে কাজ কী, তা আইনে বলা নেই। এই সংগঠনকে শক্তিশালী করার দাবি জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া এক দিনও রাখা ঠিক হবে না। ভোট না করে কেন প্রশাসক থাকবে?

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রশাসকের বিধান রাখা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ আছে। জেলা পরিষদের কাজ কী? এটা দুর্নীতির আখড়া। এর কাজ কী? এই আইনটি ত্রুটিপূর্ণ। যারা সদস্য হবেন তাদের কাজ কী?

গণফোরামের মোকাব্বির খানও বিলটিকে সংবিধানের সঙ্গে ‘সাংঘর্ষিক’ বলে মত দেন। এসব কথার জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, সরকার সবসময় জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব দেয়। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করতে সরকার কাজ করছে।