নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ রেলওয়ে লোকবল নিয়োগ মন্ত্রীর নিজ হাতে নিয়ন্ত্রণ এবং রেলের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ নিয়োগ কমিটির সদস্যদের নিয়ে মন্ত্রীর ঢাকার বাসায় চূড়ান্ত করা হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক মোখলেছুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েতে লোকবল নিয়োগের সরকারি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা আছে। এ ধারাবাহিকতায় কমিটি গঠন করা হলেও এ প্রক্রিয়া শুধু নিয়মের জন্য বহাল রেখে রেল মন্ত্রণালয়ের নগ্ন হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নিয়োগ করা হচ্ছে। এতে একটি মহলের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে। তাতে যোগ্যতম প্রার্থী ও রেলপোষ্যরাও চাকরি পাচ্ছে না। বর্তমানে ৮৬৫ জন খালাসি নিয়োগ প্রক্রিয়া ঢাকায় মন্ত্রীর বাসায় চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এজন্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. আবদুল হাই, নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (পশ্চিম) মিজানুর রহমান, কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলামকে ডেকে নিয়ে গত শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মন্ত্রীর বাসায় বৈঠক করেন। সেখানে মন্ত্রীর দেওয়া তালিকায় স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
২০১৫ সালে চতুর্থ শ্রেণির খালাসি পদে নিয়োগ বাছাই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পদে ৮৬৫ জনকে নিয়োগের কথা রয়েছে। মামলা জটিলতার কারণে প্রায় তিন বছর পরও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি। এরপরও মন্ত্রী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ব্যবস্থা না নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করতে সময়ক্ষেপণ করছেন বলেও অভিযোগ করেন এ শ্রমিক নেতা।
মোখলেছুর রহমান বলেন, লিখিত পরিক্ষার প্রশ্ন ফাঁস এখন আইনে পরিণত হয়েছে। বিগত দিনে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ওই সময় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে সদ্য সমাপ্ত অফিস সহকারী, কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট ও মেটারিয়াল চেকার পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হতো না। এছাড়া মন্ত্রীর আশপাশের লোকজনের গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট পুরো নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করছে। সব নিয়োগেই তাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী চূড়ান্ত করতে হচ্ছে। ফলে এ নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে রেলে দক্ষ জনবল তৈরি হচ্ছে না। ফলে দেশের সবচেয়ে বড় পরিবহন খাত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
তিনি রেলওয়ের প্রকল্পগুলোর দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ২২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম সার্কুলার লাইন পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করা হয়। তিন মাস ডেমা ট্রেইন চালিয়ে তা বাতিল করা হয়। এর জন্য নতুন নির্মিত স্টেশনগুলো ইতোমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে, যা এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে চট্টগ্রাম স্টেশনে ম্যাক্সের প্রজেক্টটি কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখেনি। এ প্রজেক্টে অর্থব্যয় করে অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। তাছাড়া দুর্বল চুক্তির মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে খুলসী এলাকায় রেলের জায়গা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট কাজ নিচ্ছে। কিন্তু সঠিকভাবে কাজ না করে রেলের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে বড় ধরনের সংকটে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে রেলওয়ে স্টাফ শ্রমিক-কর্মচারী কমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুস ছবুর, রফিক চৌধুরী, কাজী আনোয়ারুল হক, মাহবুবুর রহমান মিন্টু, মো. ফারুক আলম, এসকে বারী উপস্থিত ছিলেন।