সব পরিকল্পনা শিশুদের দিকে তাকিয়েই: শেখ হাসিনা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার যে পরিকল্পনা ধরে এগোচ্ছেন, তার কেন্দ্রে শিশুরাই বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে গতকাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, শিশুর জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে যেতে চাই। তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে দিয়ে গেলাম। সূত্র: বিডি নিউজ।

‘হƒদয়ে পিতৃভূমি’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই মর্যাদা ধরে রেখে আগামী দিনে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবÑএটাই আমাদের অঙ্গীকার। ২০৭১-এ স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন করব। সেই সঙ্গে ২১০০ সাল পর্যন্ত এই বাংলাদেশ কীভাবে উন্নত হবে সেই পরিকল্পনা আমি প্রণয়ন করে দিয়ে গেছি। শিশুদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েই আমাদের সব কর্মপরিকল্পনা।’

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা ‘ছাড়পত্র’ থেকে আবৃত্তি করে বাংলার ছাত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলে যাবÑতবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল/এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’

বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানাদিক তুলে তিনি বলেন, ‘মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে তিনি কেবল এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাত। আমি আর আমার ছোট বোন রেহানা বেঁচে গিয়েছিলাম। আমার ছেলে জয় (সজীব ওয়াজেদ) এখানে উপস্থিত, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এখানে উপস্থিত। স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে রিফিউজির মতো দেশ-বিদেশে কাটাতে হয়েছে।’

বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই দেশে ফেরার কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এমন একটি অবস্থায় যেখানে ঘাতক, যুদ্ধাপরাধী, আল-বদর, রাজাকারদের রাজত্ব ছিল। তবু আমি ফিরে এসেছিলাম, আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। এদেশের শিশুদের যেন আগামী দিনে আমাদের মতো স্বজন হারার বেদনা নিয়ে বাঁচতে না হয়, তারা যেন সুন্দর জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়, যে শিশুদের জাতির পিতা অত্যন্ত ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন বলেই ২১ বছর পর যখন সরকার গঠন করি, তখন ১৭-ই মার্চকে শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা দিই।’

শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরতে গিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তিনি শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার পরপরই আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। শিশু অধিকার আইন সে সময় করে দিয়েছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের বিভিন্ন সময় শিশুদের অধিকার রক্ষায় সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় স্কুল বন্ধ ছিল। আল্লাহর রহমতে এখন সব স্কুল খুলে গেছে। কাজেই এখন স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ আবার এসেছে। তারা পড়াশোনা করবে, সেটাই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। শিখনমূলক নানা ধরনের গ্রাফিকস ও কার্টুনগুলো আমরা করেছি। যখন করোনা ছিল, আমরা অনলাইনে ক্লাস নিয়েছি। শিশুরা যাতে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করে দিচ্ছি। যেখানে শিশুরা খেলাধুলা করতে পারবে।’

বাঙালিদের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকে সেই বাঙালিদের হাতেই প্রাণ দিতে হয়েছিল, সেই নির্মমতার কথাও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায়। তার কথায়, ‘জাতির পিতা এদেশের শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন। আমার ছেলে জয়ের সৌভাগ্য হয়েছে আমার বাবার কোলে চড়ে খেলা করতে। তিনি যখন বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতেন মনে হতো তিনি নিজেই যেন শিশু। এটাই ছিল তার চরিত্রে সব থেকে বড় দিক; তার সরলতা। দুর্ভাগ্য ৭৫-এ শিশুরা মুক্তি পায়নি। কারবালার ময়দানেও এমন ঘটনা ঘটেনি। এই বাংলার মাটিতে যাদের জন্য আমার বাবা জীবন উৎসর্গ করেছেন, বছরের পর বছর কারাগারে ছিলেন, যাদের একটি জাতি হিসেবে মর্যাদা দিয়ে গেছেন, সেই বাঙালিদের হাতে তাকে জীবন দিতে হয়েছে, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে কষ্ট সবচেয়ে দুঃখ।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা তুলে ধরেন তিনি। এবারের আয়োজন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘একেকটা সংগঠন এই টুঙ্গিপাড়ায় আসবে। ১৮ থেকে ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ প্রত্যেককে আলাদা আলাদা তারিখ দেয়া হয়েছে। তারা টুঙ্গিপাড়ায় অনুষ্ঠান করবে।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, তার বোন শেখ রেহানার নির্দেশে টুঙ্গিপাড়ায় ‘মুজিব লোকজ মেলা’ করা হবে। তিনি বলেন, ‘২১ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠে মুজিববর্ষ লোকজ মেলা আয়োজন করা হয়েছে। গ্রামবাংলায় চিরায়ত বৈচিত্র্য তুলে ধরতে নানা ধরনের আয়োজন থাকবে। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে।’

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান থেকে এই মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সভামঞ্চের পেছনের অংশ বঙ্গবন্ধুর আদি বাড়ির আদলে করা হয়েছে।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ ফারুক খান, মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, উত্তর গোপালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শেখ মুনিয়া ইসলাম।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০