সব হাসপাতালে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ঢাকা শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শুক্রবার দুপুরের পর অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটের ৪০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণ শেষে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার বলেন, দেশের সেরা শিশু হাসপাতালটিতে ফায়ার এক্সটিংগুইশার ছাড়া অগ্নিনির্বাপণ সামগ্রী কিছুই নেই। সেখানে পানির ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় পাশের মানসিক হাসপাতালের রিজার্ভ থেকে পানি আনা হয়। ছিল না পর্যাপ্ত ফায়ার হাইড্রেন্ট। ফলে কার্ডিয়াক আগুন নির্বাপণ করতে কিছুটা সময় লেগেছে।

আগুন লাগার পরই আইসিইউয়ে থাকা রোগী ও অন্যদের সরিয়ে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীর স্বজনরা। ফলে তেমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। কার্ডিয়াক আইসিইউতে থাকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে (এসি) বিস্ফোরণে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্তের পর ঘটনা সম্পর্কে পুরোপুরি জানা যাবে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে হয়েছে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয়  অব্যবস্থাপনা  ও দায়িত্বহীনতার শিকার। এমন নয় যে, এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটেছে। এর আগেও হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এবং তাতে প্রাণহানি ঘটেছে। বেশি দিন আগের কথা নয়, শিশু হাসপাতালের অনতিদূরে ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগুন লাগার পর রোগী স্থানান্তরকালে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সন্ধ্যায় হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে আগুন দেখতে পেয়ে রোগী ও স্বজনরা চিৎকার শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো হাসপাতাল ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, রোগীর স্বজন এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হাসপাতালে ভর্তি প্রায় এক হাজার ২০০ রোগী বাইরে বের করে আনেন। এরপর পরের বছর ২৭ মে দেশের অন্যতম সেরা ও ব্যয়বহুল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনের শিকার হয়ে পাঁচজন মারা যান। তাদের তিনজন ছিলেন অতিমারি কভিডে আক্রান্ত। তারা বাঁচার জন্য গিয়েছিলেন হাসপাতালে। দুঃখজনক বিষয় হলো, তারাসহ মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয় আগুনের ঘটনা বা দুর্ঘটনায়।

অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট আগুন আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য কঠিন বা জটিল কোনো বিষয় নয়। কিন্তু জানা যায়, ইউনাইটেড হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ সামগ্রী ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। আর সোহরাহওয়ার্দী হাসপাতালের ঘটনায়ও জানা যায়, নিচতলার স্টোররুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। সেখানে হাসপাতালের বিভিন্ন সরঞ্জাম, জরুরি ওষুধ, অক্সিজেনের সিলিন্ডার, স্পিরিটসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ ছিল।

আমাদের অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা নিবেদিতপ্রাণ। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অগ্নিনির্বাপণ কাজে অংশ নেন; অনেক সাফল্যও রয়েছে তাদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কীভাবে অগ্নিঝুঁকি এড়াব, উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করব, সে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। কিন্তু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকায় ঝুঁকি থেকেই যায়। কেন হাসপাতালে পর্যাপ্ত আগুন নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র ও সামগ্রী থাকবে না; থাকবে না পানির পর্যাপ্ততা। ব্যয়বহুল বেসরকারি কিংবা সাশ্রয়ী সরকারি হাসপাতালই হোক, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত অগ্নিদুর্ঘটনার যুগোপযোগী ব্যবস্থা নেয়া।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০