সমন্বয়হীনতায় অস্থির ডলার বাজার

রোহান রাজিব: দেশে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলছে ডলার সংকট। তা সামাল ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য একটা সময় ডলার বিনিময় হার নির্ধারণের দায়িত্ব দেয়া হয় দুই সংগঠন বাফেদা ও এবিবিকে। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে এই দুই সংগঠন ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করছে। তবে সংকট না কেটে ক্রমেই তা ঘনীভূত হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, এক্সচেঞ্জ হাউস, বাফেদা ও এবিবির সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলতে পারছে না। ফলে ডলার বাজার নিয়ে আরও জটিলতা বাড়ছে। এতে বারবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে পরিবর্তন করা হচ্ছে ডলারের দাম। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েও তা বাতিল বা স্থগিত করা হচ্ছে।
ডলারের দাম নির্ধারণ নিয়ে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা চলছে। রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বৃদ্ধি, পরে তা বাতিল, ব্যাংকগুলোকে ইচ্ছামতো প্রণোদনা দেয়ার স্বাধীনতা, আবার সে স্বাধীনতায় লাগাম টানাÑএসব নিয়ে বিশৃঙ্খল একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে ব্যাংক রেটের সঙ্গে খোলা বাজারে ডলারের রেটে ১৫-১৬ টাকার ব্যবধান তৈরি হয়ে গেছে। এভাবেই সমন্বয়হীনতায় চলছে বর্তমানে ডলার বাজার। তবে এভাবে চলতে থাকলে সংকট আরও বাড়বে বলে মত দিয়েছেন ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা ও বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, গত ২২ অক্টোবর এবিবি ও বাফেদার অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয় ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ডলার কিনবে। তবে সরকারের ঘোষিত আড়াই শতাংশের সঙ্গে আরও আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দিতে পারবে ব্যাংকগুলো।
২৩ অক্টোবর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ায় আট দিনের মাথায় তা পরিবর্তন করা হয়। ৩১ অক্টোবর আবার এবিবি-বাফেদার মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স আয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার সীমা তুলে নিয়ে ইচ্ছামতো প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারবে। তবে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা।
ইচ্ছামতো প্রণোদনা দিয়ে কিছু ব্যাংক ১২২-১২৪ টাকা দামে প্রবাসী আয় কিনছে। যেসব ব্যাংকের আমদানি দায় মেটানোর চাপ আছে, তারা এই দামে ডলার কিনে দায় মেটাচ্ছে। এতে ডলারের দাম এক ধাক্কায় ১২-১৩ টাকা বেড়ে যায়। আবার কিছু ব্যাংক বাড়তি কোনো প্রণোদনাই দেয়নি রেমিট্যান্সে।
বাড়তি দামে ব্যাংকগুলোর ডলার কেনার খবর গণমাধ্যামে প্রকাশ হওয়ার পর গত বুধবার জরুরি সভা ডাকে বাফেদা ও এবিবি। সেখানে ৩১ অক্টোবরের সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করার তাগিদ দেয়া হয়। আর প্রবাসী আয়ে ব্যাংকের নিজস্ব ও সরকারের প্রণোদনাসহ ডলারের দর কোনোভাবেই ১১৬ টাকার বেশি দেয়া যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার এই দুই সংগঠনের ২১ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ এবিবির চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, নতুন করে ডলার বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। মূলত কিছু ব্যাংক বেশি দরে রেমিট্যান্স কেনার কারণে এ অস্থিরতা তৈরি হয়। তাই এ সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। আর ডলারের যে দর দেয়া হয়, তা সবাইকে মেনে চলার নির্দেশ দেন গভর্নর।
বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে এবিবির চেয়ারম্যান বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন। ডলার বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হচ্ছে। এটাই নিয়ম। তিনি বলেন, দর না মানার কারণ হতে পারে নিশ্চয়ই কোনো ব্যাংকের বড় কোনো ঝামেলা আছে। সেগুলো বুঝেশুনে সমাধান করতে হয়। সব সিদ্ধান্ত সব ব্যাংক মেনে চলতে পারে, তেমন নয়।
আমদানিকারকেরা নির্ধারিত দামের ডলার পাচ্ছে নাÑএমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যদি কোনো আমদানিকারকের এরকম অভিযোগ থাকে, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এসে জানাতে হবে। তাছাড়া সকল বিষয়ে লাইন বাই লাইন লিখিতভাবে নির্দেশনা দেয়া যায় না বলেও মনে করেন এই ব্যাংকার।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, এবিবি ও বাফেদার গৃহীত সিদ্ধান্ত অনেকে মানছে না। তাই ডলার বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এখন থেকে দুই সংগঠনের নির্ধারিত রেট যাতে সবাই বাস্তবায়ন করে, সেজন্য সাহায্য চাইতে এসেছিলেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে বলা হয়।
তিনি বলেন, নির্দেশনার বাইরে কোনো ব্যাংক অথবা এক্সচেঞ্জ হাউস ডলার কেনাবেচা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি আগের চেয়ে শক্তভাবে তদারকি করা হবে এখন। তাই প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ অতিরিক্ত প্রণোদনা দিয়ে ডলার সংগ্রহ করা যাবে, কিন্তু এর বেশি নয়। যদি কেউ বেশি দামে ডলার কিনেও থাকে তাহলে ১১১ টাকাতেই বিক্রি করতে হবে। অন্যথায় আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকাররা জানান, ডলারের দাম বাজারভিত্তিক না করে নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। তবে ডলারের ঘোষিত দরের সঙ্গে বাজার পরিস্থিতির কোনো সামঞ্জস্য নেই। তাই নির্ধারিত দরে কোনো ব্যাংক ডলার পাচ্ছে না। এ কারণে আগের দেনা শোধ ও আমদানি ঋণপত্র (এলসি) পরিশোধের জন্য অনেক বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বিদেশি মানি এক্সচেঞ্জগুলো ডলারের যে দর প্রস্তাব করছে, সেটি ঘোষিত দরের চেয়ে ১২-১৪ টাকা বেশি। ব্যাংকগুলো যদি ওই দামে ডলার না কেনে, তাহলে রেমিট্যান্সের বড় অংশ হুন্ডিতে চলে যাবে। আর ধস নামবে ব্যাংক ব্যবসায়। তাই এ পথ বেছে নিয়েছে অনেক ব্যাংক। নির্ধারিত রেট থেকে সরে না এলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
এদিকে রেমিট্যান্সে প্রণোদনা নিয়েও চলছে বিশৃঙ্খলা। সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আনা এক গ্রাহক শেয়ার বিজকে জানান, তিনি সরকার-নির্ধারিত আড়াই শতাংশ প্রণোদনা পেয়েছেন। বাড়তি কোনো প্রণোদনা দেয়নি ব্যাংকটি। এতে তাকে প্রতি ডলারের বিনিময় হার দেয়া হয়েছে ১১৩ টাকা ২৬২৫ পয়সা।
একই দিনে সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আনা অপর এক গ্রাহক শেয়ার বিজকে জানান, তিনি প্রতি ডলারের সরকার-নির্ধারিত প্রণোদনার চেয়েও ১২ টাকা ২৯ পয়সা বাড়তি প্রণোদনা পেয়েছেন। তাকে প্রতি ডলারের বিনিময় হার দেয়া হয়েছে ১২৫ টাকা ৫৫২৩ পয়সা।
অন্যদিকে ব্যাংকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খোলাবাজারের ডলারের দরও। গতকাল বৃহস্পতিবার এক দিনের ব্যবধানে ডলারের দর আড়াই টাকা বেড়ে হয়েছে ১২৬ দশমিক ৫০ টাকা, যা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ, যদিও নির্ধারিত দাম অনুযায়ী খুচরা ডলারের দাম ১১৩ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। গত বুধবারও ডলারের দর ছিল ১২৩ থেকে ১২৪ টাকা। এর আগে গত বছরের আগস্টে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা উঠেছিল।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ১২২ টাকার বেশি দরে ডলার কেনার বিষয়টি জানাজানির পর খোলাবাজারেও নগদ ডলারের দর দ্রুত বাড়ছে। গত সপ্তাহেও প্রতি ডলার ১১৮ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশিরভাগ মানি চেঞ্জারের কাছে ডলার নেই। যাদের কাছে আছে তারাও সরাসরি ডলার বিক্রি করছেন না, পরিচিত কারও মাধ্যমে ডলার বিক্রি করছেন।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, এবিবি ও বাফেদা যে পদ্ধতিতে ডলারের দর নির্ধারণ করে দেয়, সেটার কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। আসলে রেট নির্ধারণ করে দেয়াটাই ঠিক হচ্ছে না। এটা থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বের হয়ে আসা উচিত। বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি ও স্বচ্ছতা বাড়াতে আগের মতো বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার ব্যবস্থাপনায় ফেরত যেতে হবে।
তিনি বলেন, একটা ভীতি আছে যে, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে বাজার কোথায় গিয়ে উঠবে! তবে নিয়ন্ত্রণ রেখে বাজারের অস্থিরতা কমানো গেছে, এমনটিও নয়। বলা হচ্ছে, বেশি দামে ডলার কিনতে পারবেন, কিন্তু বিক্রি করতে পারবেন না। এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাজার সুষ্ঠুভাবে কাজ করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এর মাধ্যমে অনেক ধরনের ম্যানিপুলেশন এবং দেনদরবার করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ডলারের দর নিয়ে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা কাজ করছে। তাই বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।

 

 

 

বিদ্যুৎ ও পানির ভর্তুকি থেকে সরে
আসার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদ্যুৎ ও পানির ভর্তুকি থেকে সরে আসার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আয় অনুযায়ী ফি নির্ধারণ করতেও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার একনেক সভা শেষে এ তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকারসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গতকাল ৪৪টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৩৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন হবে ৩০ হাজার ১২৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে পাওয়া যাবে ৭৬৮ কোটি টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে বলেন, রাজধানীতে উঁচু ভবন নির্মাণে সতর্ক থাকতে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উঁচু ভবনের কারণে বিমান চলাচলে যেন এয়ার ফানেল তৈরি না হয়। এছাড়া, মহাসড়কের সংস্কারের জন্য টোল আদায় করে তহবিল গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি রাস্তার পাশে জলাধার রাখার কথা বলেছেন তিনি।
ঢাকার শেরেবাংলা নগর প্রশাসনিক এলাকায় বহুতল সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্প। ঢাকাস্থ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ১২৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প। চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে লক্ষ¥ীপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার সংযোগকারী সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্প। ইলিয়টগঞ্জ-মুরাদনগর-রামচন্দ্রপুর-বাঞ্ছারামপুর জেলা মহাসড়কটি যথাযথ মানে ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প। রাজউক পূর্বাচল ৩০০ ফুট মহাসড়ক হতে মাদানী এভিনিউ সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প।
সাতক্ষীরা-সখিপুর-কালীগঞ্জ মহাসড়ক এবং কালীগঞ্জ-শ্যামনগর-ভেটখালী মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্প। চার লেনে উন্নীত ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক (এন-১) (দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম অংশ) এর চার বছরের জন্য পারফরম্যান্স-বেইজড অপারেশন ও দৃঢ়করণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প। ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প। গাবতলী সিটি পল্লীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ক্লিনারবাসীদের জন্য বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্প। ঢাকা পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প। বর্ধিত ঢাকা পানি সরবরাহ রেজিলিয়েন্স প্রকল্প। ঢাকা স্যানিটেশন উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প।
বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন রাস্তা উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প। বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প। ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের অধিকতর উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (আরএমইউ) স্থাপন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প। মুগদা মেডিকেল কলেজের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা সম্প্রসারণ প্রকল্প। সাপোর্টিং ইপ্লিমেন্টেশন অব দ্য মাদার অ্যান্ড চাইল্ড বেনিফিট প্রোগ্রাম প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন এবং আনুষঙ্গিক কাজ বাস্তবায়ন প্রকল্প। আইসিটি শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণের জন্য নেকটারের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম প্রকল্প। উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্প। ইমপ্রুভমেন্ট অব আরবান পাবলিক হেলথ প্রিভেনটিভ সার্ভিসেস প্রজেক্ট। যমুনা নদী টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রকল্প-১ দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন (কম্পোনেন্ট ৩) প্রকল্প। মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩ এর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প। যশোর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা প্রকল্প।
সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে ঝালকাঠির সদর উপজেলা ও নলছিটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা রক্ষা প্রকল্প। সমগ্র দেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্ব) প্রকল্প। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প। আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজার (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প। মেহেরপুর সদরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন ও দেশের মধ্য পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু পিয়েরে এলিয়ট ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্র স্থাপন এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণায় সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প। পার্বত্য চট্টগ্রাম পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ীর গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প।

 

 

সুষ্ঠু ভোটের জন্য সব অংশীদারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র

শেয়ার বিজ ডেস্ক

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকার, বিরোধী দলসহ সব অংশীদারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যোগাযোগ রাখছে। আগামীতেও তা চালিয়ে যাবে দেশটি। ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল স্থানীয় সময় গত বুধবার রাতে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।
বাংলাদেশের বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্যাটেল বলেন, সম্ভাব্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা বা কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে আগে থেকে কোনো অনুমান করেন না তারা।
উপপ্রধান মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের জনগণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এটি যুক্তরাষ্ট্রও প্রত্যাশা করে। বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানাতে সরকার, বিরোধী দলসহ সব অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে স্থানীয় এক নেতার হুমকির অভিযোগ তুলে এর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, এ ধরনের সহিংস বক্তব্য সম্পর্কের জন্য সহায়ক নয়।
তিনি বলেন, বিশদভাবে বলতে গেলে, যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপনা ও কর্মীদের নিরাপত্তা এদেশের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বাগতিক দেশেরই দায়িত্ব।

 

ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুদিন বিরতি দিয়ে চতুর্থ দফায় আগামী রোববার থেকে ফের সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডেকেছে বিএনপি। তৃতীয় দফার অবরোধ শেষ হওয়ার আগেই গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টার এই অবরোধ কর্মসূচি চলবে।
তৃতীয় দফার অবরোধ কর্মসূচি শেষ হয় আজ শুক্রবার সকাল ৬টায়।
সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবিসহ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এর আগে তিন দফায় সাত দিন দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। তাদের সঙ্গে সমমনা দল ও জোট এবং জামায়াত পৃথকভাবে একই কর্মসূচি পালন করে। গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের পর ওই দিনের সমাবেশ মাঝপথে পণ্ড হওয়ার পরদিন এক দিনের সকাল-সন্ধ্যা হরতালও ডেকেছিল দলটি।
বৃহস্পতিবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে আগের কর্মসূচিগুলোর মতো বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবি আদায়, নিহত সাথিদের হত্যার বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা এবং গ্রপ্তার হওয়া সংগ্রামী মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদক মণ্ডলীসহ সারাদেশে হাজারও নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে আগামী ১২ নভেম্বর রোববার সকাল ৬টা থেকে ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে।’
এ অবরোধে সংবাদমাধ্যমের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সিলিন্ডারবহনকারী গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানান রিজভী।
চলমান ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচিতে জনগণের অংশ নেয়ার জন্য তাদের অভিনন্দনও জানান তিনি।
অবরোধের পাশাপাশি আজ শুক্রবার নিহত নেতাকর্মীসহ পোশাক খাতের নিহত শ্রমিকদের জন্য দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন রিজভী।
রোববার থেকে ডাকা অবরোধের আগে মাঝে এক ও দুদিন বিরতি দিয়ে গত দুই সপ্তাহে তিন দফায় ১৬৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পরদিন সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে তারা।
এরপর শুরু হয় অবরোধ কর্মসূচি। প্রথম দফা ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিন, দ্বিতীয় দফায় ৫ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টা এবং সর্বশেষ ৮ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় বিএনপি, যা শুক্রবার সকাল ৬টায় শেষ হচ্ছে।

 

অবরোধের শেষ দিনেও পতনে পুঁজিবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবরোধের শেষ দিনে দেশের দুই পুঁজিবাজারে দুই রকম চিত্র দেখা গেছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতন হয়েছে। তবে অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের উত্থান হয়েছে। এদিন ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেনও কমেছে। কিন্তু সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন বেড়েছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার প্রকৌশল খাতের ৩০টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, যা শতাংশের হিসাবে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, বিপরীতে শেয়ারদর কমেছে ৫টি কোম্পানির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টি কোম্পানির শেয়ারদর। এরপর বিমা খাতের লেনদেন হওয়া ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, বিপরীতে শেয়ারদর কমেছে ৬১ দশমিক ৯০ শতাংশ কোম্পানির। খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের যেসব কোম্পানির লেনদেন হয়েছে, তার মধ্যে ২০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, বিপরীতে শেয়ারদর কমেছে ৫০ শতাংশ কোম্পানির। গতকাল টেলিকমিউনিকেশন এবং সিরামিক এবং করপোরেট বন্ড খাতে শেয়ারদর বৃদ্ধি বা কমার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
গতকাল লেনদেনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে। খাতটিতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিমা খাতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা প্রকৌশল খাতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ লেনদেন হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২৭১ দশমিক ৮৩ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১ দশমকি ২৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১২৭ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে। তবে শরিয়াহ সূচক শূন্য দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বেড়েছে।
ডিএসইতে ৩১১টি প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬টির বা ১৪ দশমিক ৭৯ শতাংশের দর বেড়েছে। শেয়ারদর কমেছে ৯৪টির বা ৩০ দশমিক ২২ শতাংশের এবং ১৭১টির বা ৫৪ দশমিক ৯৮ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
ডিএসইতে ৪৬৯ কোটি ৪১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবস থেকে ৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫১৬ কোটি ০২ লাখ টাকা।
এদিন অপর সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৪ দশমিক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৯৩ দশমিক ০২ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসসিএক্স ২ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট এবং সিএসআই শূন্য দশমিক ২১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ১২১ দশমিক ০২ পয়েন্টে এবং এক হাজার ১৭৩ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে। তবে সিএসই-৩০ সূচক ১২ দশমিক ২৮ পয়েন্ট এবং সিএসই-৫০ সূচক ১ দশমিক ২৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৩ হাজার ৩৭৮ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে এবং এক হাজার ৩০৭ দশমিক ৫০ পয়েন্টে।
সিএসইতে ১৬৫টি প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৫টির, কমেছে ৪৯টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭১টি প্রতিষ্ঠানের। সিএসইতে ৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।

 

আইসিডিডিআর,বি’র গবেষণা
দেশে নিউমোনিয়ায় ঘণ্টায় প্রাণহানি দু-তিনজনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর জন্য দায়ী প্রধানত সংক্রামক রোগ নিউমোনিয়া। প্রতি বছর প্রায় সাত লাখ শিশু নিউমোনিয়ায় মৃত্যুবরণ করে। তবে বাংলাদেশে এ অবস্থা আরও খারাপ। দেশে প্রতি বছর ২৪ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। প্রতি ঘণ্টায় এ সংখ্যাটি আনুমানিক দু-তিনজন। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শিশুর জšে§র পর মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্ব অনেক। এতে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি শতকরা ১৫ ভাগ কম হয় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। গতকাল বৃহস্পতিবার মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) ট্রেকশন কনফারেন্স হলে ‘শিশুদের নিউমোনিয়া: আমরা কি যথেষ্ট করছি?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। নিউমোনিয়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর জন্য প্রধান সংক্রামক রোগ। এই রোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়েই ছিল আলোচনার বিষয়বস্তু।
অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বি’র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী প্রতিষ্ঠানটিতে নিউমোনিয়া নিয়ে তার নিজের ও ড. নুর হক আলম, ড. কে জামান এবং ড. আহমেদ এহসানুর রহমানের কয়েকটি গবেষণার ফল উপস্থাপন করেন।
গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বিজ্ঞানী ড. চিশতী বলেন, নিউমোনিয়া এখনও বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান সংক্রামক রোগ। এ রোগের ফলে প্রতি বছর প্রায় সাত লাখ শিশুর মৃত্যু হয়, যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের সব মৃত্যুর ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশে এ পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ।
প্রতি ঘণ্টায় আনুমানিক দু-তিনজন শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায় এবং বছরে প্রায় ২৪ হাজার শিশু মৃত্যুবরণ করে। এটি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ২৪ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী, যা বিশ্বব্যাপী গড় অবস্থানের চেয়েও বেশি। কয়েক দশক ধরে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে প্রতি হাজার জীবিত জšে§ প্রায় ৭ দশমিক ৪ জন শিশু মৃত্যুবরণ করেছে নিউমোনিয়ায়। পাশাপাশি প্রায় ৪০ লাখ নতুন রোগীসহ প্রতি বছর আনুমানিক ছয় লাখ ৭৭ হাজার শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
এসময় বাংলাদেশের শিশুদের নিউমোনিয়ার কারণগুলো বৈশ্বিক পরিস্থিতি থেকে একটু আলাদা বলে জানান ড. চিশতী। তিনি বাংলাদেশের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের নিউমোনিয়ার পেছনে বিশেষ কারণ তুলে ধরেন। এতে ২০১৯ ও ২০২১ সালে আইসিডিডিআর,বি’র গবেষণায় অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী, গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিষয়টি উঠে আসে। এ ফলগুলো দেখায় যে, বিরল গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া শৈশবকালীন নিউমোনিয়ার নতুন কারণ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
পরিবেশের প্রভাব ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা তুলে ধরে ড. চিশতী বলেন, ঘরের মধ্যে বাতাসের গুণগত মান উন্নত করার মাধ্যমে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেক করা সম্ভব। হাত ধোয়া ২১ শতাংশ কেস কমাতে পারে। শিশুর জšে§র প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো একটি বড় ভূমিকা রাখে। ফলে নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা ১৫ শতাংশ কমে যায়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা নিউমোনিয়াকে ফুসফুসের প্রদাহ হিসেবে বর্ণনা করে এর মূল চরিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, নিউমোনিয়ার শুরুতে কাশি হয়, যা সাধারণত দুই-চার সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি থেকে শ্বাসকষ্ট এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, অল্পবয়সী, প্রবীণ এবং যাদের হƒৎপিণ্ড বা ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে, তাদের গুরুতর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এসব ব্যক্তিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সচেতনতা ও সঠিক সময়ে চিকিৎসার মাধ্যমে জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।
আলোচনা সভায় ২০০৭ এবং ২০২০ সালে আইসিডিডিআর,বি’র ভ্যাকসিন নিয়ে করা গবেষণায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উপযোগী হতে পারে, এমন একটি টিকা নিয়ে আলোকপাত করা হয়। আইসিডিডিআর,বি’র গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভবতীদের আরএসভি ভ্যাকসিন দেয়া হলে তা নবজাতক শিশুদের গুরুতর নিউমোনিয়া এবং হাইপোক্সেমিয়া (রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা) প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এ সময় নিউমোনিয়ার উপসর্গ, হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং চিকিৎসার বিষয়ে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সময়ের সচেতনতার বিষয়ে জোর দেয়া হয়।
আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, এর আগে ডায়রিয়া শিশুমৃত্যুর প্রধান ঘাতক হলেও বর্তমানে নিউমোনিয়া শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ। নিউমোনিয়ায় প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী অনেক শিশু মারা যায়। আক্রান্ত হন প্রাপ্তবয়স্করাও এবং তাদেরও মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। আইসিডিডিআর,বি’তে নিউমোনিয়া নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, যা সফলভাবে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং পরীক্ষামূলকভাবে এর ব্যবহারও করা হয়েছে। এই ফল ও পদ্ধতি মানুষের কাছে আরও সহজে পৌঁছে দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
০০০০০০
শ্রীলঙ্কার আশা মাড়িয়ে সেমির পথে নিউজিল্যান্ড

ক্রীড়া প্রতিবেদক

শ্রীলঙ্কাকে অল্পে থামিয়ে লক্ষ্যটা নাগালে রাখলেন বোলাররা। ব্যাটসম্যানরা সারলেন বাকিটা। অনায়াস জয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখল নিউ জিল্যান্ড। প্রথম রাউন্ডে দুই দলের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। বেঙ্গালুরুতে বৃহস্পতিবার লঙ্কানদের ১৭১ রানে গুটিয়ে দেয়ার পর ১৬০ বল হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে কিউইরা। আসরে প্রথম চার ম্যাচে জয়ের পর টানা চারটি হারে নিউজিল্যান্ড। অবশেষে পঞ্চম জয়ের স্বাদ পেল তারা। শ্রীলঙ্কার সেরা আটে থেকে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার আশা প্রায় শেষ হয়ে গেল।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪৬ ওভার ৪ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৭১ রান সংগ্রহ করেছে শ্রীলঙ্কা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫১ রান এসেছে কুশল পেরেরার ব্যাট থেকে। কিউইদের হয়ে ৩৭ রানে ৩ উইকেট শিকার করেছেন ট্রেন্ট বোল্ট। জবাবে খেলতে নেমে ২৩ ওভার ২ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৫ রান এসেছে ডেভন
কনওয়ের ব্যাট থেকে।
১৭২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত শুরু করেন কনওয়ে-রাচিন রবীন্দ্র। ৪৫ রান করে কনওয়ে সাজঘরে ফিরলে ভাঙে ৮৬ রানের উদ্বোধনী জুটি। এরপর রবীন্দ্রও আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪২ রান।
তিনে নেমে ভালোই শুরু করেছিলেন কেন উইলিয়ামসন। কিন্তু থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১৫ বলে করেছেন ১৪ রান। তবে রানের চাকা সচল রাখেন ড্যারিল মিচেল। এই ইনফর্ম ব্যাটার করেছেন ৩১ বলে ৪৩ রান। আর শেষ দিকে গ্লেন ফিলিপসের ১০ বলে ১৭ রানের ক্যামিওতে সহজেই জয় পেয়েছে কিউইরা।
এর আগে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ইনফর্ম পাথুম নিশাঙ্কাকে সাজঘরে ফিরিয়ে লঙ্কান শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন টিম সাউদি। আসরজুড়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা এই ওপেনারের ব্যাট থেকে এসেছে ২ রান। নেতৃত্ব পাওয়ার পর নিজের স্বভাবজাত ব্যাটিংটাই যেন ভুলে বসেছেন কুশল মেন্ডিস। ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারেননি আজও। তিনে নেমে সুপার ফ্লপ লঙ্কান অধিনায়ক। ৭ বলে ৬ রান করে ট্রেন্ট বোল্টের বলে রাচিন রবীন্দ্রের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।
দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি সাদিরা সামারাবিক্রমা-চারিথ আসালঙ্কারাও। ব্যাটারদের এমন আসা যাওয়ার মিছিলেও এক প্রান্তে রীতিমতো ঝড় তুলেন কুশল পেরেরা। এই ওপেনার যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন একাই রানের চাকা সচল রেখেছেন। ২২ বলে করেছেন ব্যক্তিগত ফিফটি, যা চলমান আসরে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে কাউন্টার অ্যাটাকের আভাস দিলেও পেরেরা থেমেছেন ফিফটির পরপরই। শেষ পর্যন্ত ২৮ বলে ৫১ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।
৭০ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর উইকেটে আসেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার সতর্কতার সঙ্গে শুরু করেছিলেন। দেখেশুনে খেলে ধানাঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন। তবে তার প্রতিরোধ কিউই বোলারদের সামনে বেশিক্ষণ টেকেনি। বালের বাধের মতো ভেঙে গেছে! ২৭ বলে ১৬ রান করে এই ব্যাটার ফিরলে তিন অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই ৬ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে শ্রীলঙ্কা।
সেই বিপদ আরও বাড়িয়েছেন ধানাঞ্জয়া। শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে তার ওপর গুরু দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সেই চাপ নিতে পারেননি। ২৪ বলে ১৯ রান করে ফিরেছেন তিনি। মিচেল স্যান্টনারের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে সিøপে ড্যারিল মিচেলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার।
১২৮ রানে নবম ব্যাটার হিসেবে আউট হয়েছিলেন দুশমান্থা চামিরা। এরপর দিলশান মাদুশঙ্কাকে নিয়ে দুর্দান্ত জুটি গড়েন মাহিশ থিকশানা। শেষ উইকেটে তাদের দারুণ ব্যাটিং লঙ্কান সমর্থকদের টিকিটের টাকা কিছুটা হলেও উসুল করেছে! ১৯ রান করে মাদুশঙ্কা আউট হলে ভাঙে ৪৩ রানে জুটি। থিকশানা অপরাজিত থেকেছেন ৩৮ রান করে।

বাংলাদেশ থেকে বেশি দামে তৈরি পোশাক কিনবে বৈশ্বিক ক্রেতারা

শেয়ার বিজ ডেস্ক

পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর পর বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের দাম বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক ক্রেতাদের সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার (এএএফএ)। মূলত মজুরি বাড়ার ফলে পাঁচ-ছয় শতাংশ বাড়তি উৎপাদন ব্যয় ক্ষতিপূরণ
হিসেবে দেয়া হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশ্বখ্যাত পোশাক ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম, গ্যাপসহ বিশ্বের এক হাজারের বেশি ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যারের (এএএফএ) সদস্য। এই সংগঠনের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন লামার রয়টার্সকে ইমেইলে এ তথ্য জানিয়েছেন।
চীনের পর বাংলাদেশই বিশ্বের সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলতি সপ্তাহে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যে দুদিন আগে ন্যূনতম মাসিক মজুরি প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করার ঘোষণা দেয় সরকার। আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই মজুরি বৃদ্ধি গত পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম।
পোশাক শিল্পমালিকরা বলছেন, এই মজুরি বৃদ্ধির ফলে তাদের উৎপাদন ব্যয় অন্তত পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ বেড়ে যাবে। ফলে তাদের মুনাফার পরিমাণ কমবে। কারণ মোট ব্যয়ের প্রায় ১০ থেকে ১৩ শতাংশই মজুরি খাতে। বিষয়টি উল্লেখ করে এই বাড়তি পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ উৎপাদন ব্যয় বাংলাদেশের পোশাক কেনার ক্ষেত্রে দেয়া হবে কি না, জানতে চাইলে স্টিফেন লামার বলেন, ‘অবশ্যই।’
এএএফএ’র প্রধান নির্বাহী লামার আরও বলেন, ‘মজুরি বাড়ানোর জন্য দায়িত্বশীল ক্রয় পদ্ধতি নিশ্চিতে আমরা যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা আমরা ও আমাদের সদস্যরা আগেও একাধিকবার বলেছি। সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশি শ্রমিকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য প্রতিবছর ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনার আহ্বান আমরা বরাবরই জানিয়ে আসছি।’
মূলত সস্তা শ্রমের কারণেই বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্প এখন বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশের ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করা এই খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত। বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ১৬ শতাংশ আসে তৈরি পোশাকশিল্প থেকে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, এই ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর পরও বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি এশিয়ার অন্যান্য তৈরি পোশাক উৎপাদক দেশগুলোর চেয়ে যথেষ্ট কম। মজুরি বাড়ানোর পর বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি দাঁড়াবে ১১৩ ডলারে, যেখানে ভিয়েতনামের শ্রমিকদের মাসিক মজুরি ২৭৫ ডলার এবং কম্বোডিয়ার শ্রমিকদের মাসিক মজুরি ২৫০ ডলার।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা।

 

ই-রিটার্ন অর্ধলাখ ছাড়িয়েছে করমেলায় মুহূর্তে করসেবা
নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আজিজুর রহমান। গত বছর ই-টিআইএন নিয়ে এবার রিটার্ন দিতে এসেছেন। রিটার্ন কীভাবে তৈরি করতে হয়, সম্পদ কীভাবে দেখাতে হবে কিছুই জানেন না। রিটার্ন দেবেন বলে সেগুনবাগিচা আত-ত্বরীক টাওয়ারের নিচতলায় কর অঞ্চল-৮ এসেছেন। কর কর্মকর্তাদের সহায়তায় অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের রিটার্ন তৈরি করে জমা দিলেন। বললেন, মাত্র কয়েক মিনিটেই রিটার্ন দাখিল করতে পেরে এবং সেবা পেয়ে আমি মুগ্ধ। রিটার্ন আর কর অফিসÑ দুটোর বিষয়ে যে ধারণা ছিল তা পাল্টে গেল। বললেন, বাইরে কর অফিসের হয়রানির অভিযোগকে প্রোপাগান্ডা বললেন তিনি।
শুধু আজিজুর রহমান নন, প্রতিটি কর অঞ্চলের মিনি করমেলায় সব করদাতা একই সেবা পাচ্ছেন। ১ থেকে ৩০ নভেম্বরকে করসেবা মাস ঘোষণা করেছে এনবিআর। সে হিসাবে জরিমানা ছাড়া পুরো নভেম্বর মাস রিটার্ন দাখিল করা যাবে। কর অঞ্চল-৮ এর বুথের সামনে ইকবাল হোসেন নামে একজন করদাতা শেয়ার বিজকে বলেন, সব সেবা এক জায়গায় পাচ্ছি। পরিবেশ চমৎকার। শেষ সময়ে ভিড় বাড়বে, সেজন্য আগেই জমা দিলাম। আর নতুন আইন অনুযায়ী ৩০ নভেম্বরের পরে জমা দিলে কর সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারব না। সেজন্য আগেই জমা দিয়ে দিলাম।
কর অঞ্চল-৮ এর একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের দুই জায়গায় বুথে এখন প্রতিদিন ৪৫০-৫০০ রিটার্ন পড়ছে। প্রতিদিন রিটার্ন বাড়ছে। কর্মকর্তারা সেবা মনিটরিং করেন। করদাতাদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার জন্য আমাদের টিম কাজ করছেন। বুথের পাশে মতামত বা অভিযোগ বাক্স রাখা হয়েছে। করদাতারা সেখানে সেবা নিয়ে তাদের অভিযোগ বা মতামত দিতে পারবেন।
এনবিআরের কর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাসের প্রথম দিকে ভিড় একটু কম থাকে। শেষ সময়ে ভিড় বাড়বে। শুধু কর অফিসের মিনি করমেলা নয়, অনলাইনেও রিটার্ন দাখিল বাড়তেছে। ই-টিআইএন ওয়েবসাইট ১৪ অক্টোবর খুলে দেয়া হয়। এরপর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রিটার্ন অর্ধলাখ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনই রিটার্ন দাখিল বাড়তেছে। এবার ই-রিটার্নে সহজে এক পাতার রিটার্ন দাখিল করা যাচ্ছে। মূলত যাদের করযোগ্য আয় নেই, শূন্য রিটার্ন দাখিল করবেন। তারা অতি সহজেই ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন করে এক পাতার রিটার্ন দিতে পারছেন। সঙ্গে প্রাপ্তিস্বীকারের সঙ্গে সনদও পেয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া অন্য করদাতাদের জন্যও ই-রিটার্ন সহজ করা হয়েছে। যারা অনলাইনে রিটার্ন দিতে চান, তাদের দ্রুত রিটার্ন দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে, পল্টনে কর অঞ্চল-১২ গিয়ে দেখা গেছে, কর অঞ্চলের কনফারেন্স রুমে বুথ স্থাপন করা হয়েছে। করদাতারা সুশৃঙ্খলভাবে রিটার্ন দাখিল করছেন। ই-টিআইএন, ই-রিটার্ন, ই-পেমেন্ট এর জন্য আলাদা বুথ করা হয়েছে। কোনো করদাতা চাইলে সেবা নিতে পারছেন। আবদুল হক নামের একজন করদাতা শেয়ার বিজকে বলেন, প্রতি বছর রিটার্ন দেয়। আর প্রতি বছরই দেখছি নতুন সেবা যুক্ত হচ্ছে। সহজে রিটার্ন দাখিল করতে পারায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। কর অঞ্চল-১২ এর একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী সব সেবা যুক্ত করা হয়েছে। কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। যেকোনো করদাতাকে আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
কর অঞ্চল-৬ গিয়ে দেখা গেছে, করদাতাদের দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। অর্থাৎ বুথে গিয়ে মুহূর্তের মধ্যে রিটার্ন দিয়ে চলে যেতে পারছেন। এবার ভবনের বেজমেন্টে বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে সব ধরনের সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মকর্তারা মনিটরিং করছেন। এছাড়া কর অঞ্চল-৭ ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে কর অঞ্চলগুলো একইভাবে মিনি করমেলার আয়োজন করেছে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ অক্টোবর অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে ই-রিটার্ন সাইট খুলে দেয়া হয়। গতকাল পর্যন্ত অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করতে নিবন্ধন করেছেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৩৪ জন গ্রাহক। রিটার্ন প্রস্তুত করা হয়েছে ৬৬ হাজার ৩০৩টি। অনলাইনে রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৫৯ হাজার ২৭৬টি। আর কর পরিশোধ হয়েছে ২ কোটি ২৪ লাখ ২৭ হাজার ৭৮৬ টাকা।
অন্যদিকে, ৩১ অক্টোবর কর অঞ্চলে মাসব্যাপী করসেবা মাস নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। সেখানে অনলাইন রিটার্ন জমার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে অনলাইনে রিটার্ন জমা পড়ে ৬১ হাজার ২০৩টি। ২০২২-২৩ অনলাইনে রিটার্ন জমা পড়ে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮১টি। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস (জুলাই-অক্টোবর) এই সংখ্যা ২৭ হাজার ৬১২টি। অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর ওয়েবসাইট খুলে দেয়ার পর এই রিটার্ন জমা পড়েছে। আমাদের অনলাইন প্লাটফর্মটা যত সহজ হয়েছে, এর সুফলটা যদি করদাতারা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারেন, অনলাইনে অনেক রিটার্ন জমা হবে। তবে করদাতাদের আহ্বান জানাব অনলাইনে আগে-ভাগেই রিটার্ন জমা দেবেন। শেষ সময় জমা দিতে গেলে সার্ভার ধীরগতির হতে পারে, সেক্ষেত্রে করদাতারা সর্বোচ্চ সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
এনবিআরের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ই-টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা ৯৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৯ জন। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) করদাতারা ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫৯৯টি রিটার্ন জমা দিয়েছেন; যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল ৯০ লাখ ৩ হাজার ২০৬ জন। সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৯টি। অর্থাৎ তিন মাসে টিআইএনধারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ। ২০২১-২২ অর্থবছরে টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রিটার্ন দাখিল করেছিলেন ২৫ লাখ ৯০ হাজার ৯৮৮ জন করদাতা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেটা দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ২৬৩ জন। প্রায় ১০ লাখ রিটার্ন এক বছরে যোগ হয়েছে। যেখানে ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩ লাখ ১৯ হাজার রিটার্ন জমা পড়ে।

ওয়েবিনারে আলোচকরা
ভোটাধিকারই অর্থনৈতিক সংকট
থেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকটটি রাজনৈতিক সংকটের সঙ্গে জড়িত। আগের দুটির মতো প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হবে। এই সংকট থেকে বের হওয়ার একটাই পথ-জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘দমন, আন্দোলন ও অর্থনীতি: বাংলাদেশের পথরেখা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে আলোচকরা এসব কথা বলেন। ওয়েবিনারটির আয়োজন করে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ।
ওয়েবিনারে সমাপনী বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগ ডিস্টিংগুইসড অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক এই সংকট অকস্মাৎ তৈরি হয়নি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, তার অনিবার্য পরিণতি এই অবস্থা। শাসনের যে অবস্থা, কারও জবাবদিহি নেই। ক্ষমতাসীনরা ধরেই নিয়েছে, দমনের মধ্য দিয়েই অব্যাহত শাসন বজায় রাখবেন। এর মাশুল দিচ্ছে দেশের মানুষ।’
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের হওয়ার একটাই পথ। সবাইকে ভোট দিতে দিন। বাংলাদেশের পথরেখা কী হবে, তা জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন। অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা ছাড়া অংশগ্রহণমূলক অর্থনীতি হবে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি হবে না। অর্থনৈতিক সংকটকে বিচ্ছিন্নভাবে ভাবতে পারবেন না। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাই সংকট থেকে বের হওয়ার পথ।’
২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন দেখতে চান না জানিয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারের সময় শেষ হয়ে আসছে। কীভাবে সমঝোতায় আসতে পারে, সেটি চিন্তা করতে হবে। সরকার ও বিরোধী দুই পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। সুন্দর একটি নির্বাচন হোক। গণতান্ত্রিক চর্চা যেন আবার ফিরে আসে।
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে সরকার দায়ী বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, আর্থিক খাতে ভয়ানক দুরবস্থা চলছে। গত ৩০ বছরে এমন দীর্ঘ সংকটের মধ্য দিয়ে অর্থনীতি যায়নি। সরকার জ্বালানি খাত, সার, বিমানের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এই অবস্থা একদিনে হয়নি। বাজার বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অর্থনৈতিক খাতে নেতৃত্বের উপস্থিতি ও জ্ঞানের অভাব রয়েছে। দক্ষ ও কর্মক্ষম একজন মন্ত্রী দরকার। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। এসব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক কারণে নেয়া হয়েছে।
নির্বাচন পর্যন্ত সরকার ঠেকা দিয়ে অর্থনীতিকে চালাবে বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সহজে যাবে না। কোনোভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও যারা অপকর্ম করেছে, তাদের ঝেঁটিয়ে বের করতে পারবে না। কারণ তাদের দিয়েই নির্বাচনে জিতে আসবে। যে দুর্নীতি দেখা যাচ্ছে, তা রাজনৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিফলন। সরকার শুধু বললে হবে না, নির্বাচনের পরে সব ঠিক করে ফেলব। এই জায়গায় সরকারকে চিন্তা করতে হবে।
পুলিশ আইনবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, পুলিশ শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমানুপাতিক শক্তি প্রয়োগ করছে না। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সৃষ্ট ঘটনা তদন্ত না করেই পুলিশ বিএনপির ওপর দোষ চাপাচ্ছে। ঘটনা না ঘটলেও বানিয়ে বানিয়ে গায়েবি মামলা করছে। পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারে ক্ষুণœ হয়েছে।
রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের রাষ্ট্রীয় চরিত্র হারাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি দলের ইচ্ছাপূরণের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান ও বাহিনী দিয়ে কীভাবে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে? এটা স্পষ্ট সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ইচ্ছামাফিক নির্বাচন করতে চাচ্ছে। একতরফা, সাজানো ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন
হলে রাষ্ট্রে জবাবদিহি থাকে না, লুটপাট বেশি হয়। আরেকটি সাজানো নির্বাচনের দিতে অগ্রসর হচ্ছি। রাষ্ট্রের জবাবহিদিমূলক প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম যদি ভূমিকা রাখতে না পারি, তাহলে সবাই
মিলে গণ-আত্মহত্যার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। এই আত্মহত্যা গণতন্ত্রের, রাষ্ট্রের সক্ষমতা ও অর্থনৈতিক বিকাশের আত্মহত্যা।
ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল ইকতেদার আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়, তা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এভাবে হয় না। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দলীয় রূপ ধারণ করেছেন। তারা দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাজে আইনের সমতা থাকছে না। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের সামনে উপস্থাপন করার বিধান। কিন্তু ৩, ৫ বা ১০ দিন পর উপস্থাপন করলেও প্রশ্ন করার কেউ নেই।
ইকতেদার আহমেদ বলেন, বর্তমান সংকট একটা সরকারের মেয়াদ অবসানে কোনো ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে। এটি মীমাংসিত বিষয়। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা হয়েছিল রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে। পরে এটি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটটি রাজনৈতিক সংকটের সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক অবস্থা ত্রুটিপূর্ণ হলে তার বহিঃপ্রকাশ নানাভাবে ঘটে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও তা দেখা যাচ্ছে। রাজনীতিকরণ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে, ফলে তারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আর্থিক খাতে বিভিন্ন সমস্যা জগদ্দল পাথরের মতো পুঞ্জীভূত হয়ে বসেছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে উপযুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ দরকার।
ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মনির হায়দার। সূচনা বক্তব্য দেন মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান।

 

কারখানা ত্যাগ শ্রমিকদের আশুলিয়ার অর্ধশতাধিক কারখানায় ছুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখিয়ে বেরিয়ে পড়লে ঢাকার আশুলিয়ায় অর্ধশতাধিক পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নিয়মমাফিক কাজে যোগ দেয়ার পর ফের বেরিয়ে পড়েন ওই এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিক। এর পরই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উভয় পাশের পোশাক কারখানাগুলোয় এক দিনের ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
তবে সড়কে কোনো প্রকার অবস্থান নিতে দেখা যায়নি শ্রমিকদের। কিন্তু যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, সকালে পাঁচ-ছয়টি কারখানার শ্রমিকরা বের হয়েছেন। এরপর সড়কের পাশের কারখানাগুলোয় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা বেতনের দাবিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু তা প্রত্যাখান করে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন শ্রমিকরা।
গতকাল সকাল থেকেই স্বাভাবিক নিয়মেই শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ দিয়েছিলেন।
পরে সকাল সাড়ে ৮টায় আশুলিয়ার জামগড়া ছয়তলা এলাকার এএম ডিজাইন ও এনভয় কারখানার শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে কাজ বন্ধ করে কারখানা ত্যাগ করেন।
পরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জামগড়া, নরসিংহপুর ও বেরন এলাকার শ্রমিকরাও কারখানা থেকে বেরিয়ে পড়েন।
জামগড়া এলাকার ভার্চুয়াল গার্মেন্টসের অপারেটর মোসাম্মত লাইলী বলেন, ‘সরকার ১২ হাজার ৫০০ টাকা যে বেতন নির্ধারণ করেছে, সেটা হেলপারদের জন্য। আমরা যে অপারেটরÑআমাদের বেতন বাড়েনি। হিসাব অনুযায়ী আমাদের বেতন ডাবল হওয়ার কথা, কিন্তু আমাদের বেতন বাড়েনি। তাই আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি।
এদিকে আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সড়কে র‌্যাব, পুলিশ ও শিল্প পুলিশের পাশাপাশি বিজিবির সদস্যরা রয়েছেন সতর্ক অবস্থানে। কিছুক্ষণ পরপরই তাদের টহল দিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের সঙ্গে আনসার সদস্যরাও রয়েছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘সকালে শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগদান করে। কিন্তু কাজে যোগদানের কিছু সময় পরেই কয়েকটা গার্মেন্টসের শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে পড়েন।’

 

দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে
২৩ হাজার টাকা মজুরি
প্রয়োজন: সিসিসি

শেয়ার বিজ ডেস্ক

পোশাকশ্রমিকদের দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে মাসে ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা মজুরি প্রয়োজন বলে মনে করে ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন (সিসিসি)। ইউরোপভিত্তিক এই শ্রমিক অধিকার জোট বলেছে, সেটা না করে শ্রমিকদের মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা চূড়ান্ত করার মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের আবারও পাঁচ বছরের জন্য বেঁচে থাকার সংগ্রামের দিকে ঠেলে দেয়া হলো।
এক বিবৃতিতে ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন জানিয়েছে, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের শ্রম আইন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার আইন অনুসারে এই ন্যূনতম মজুরির দাবি করা হয়েছিল। অন্যদিকে মালিকপক্ষের যে প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হলো, তার এ ধরনের ভিত্তি নেই।
এতে বলা হয়, শ্রমিকেরা ইতোমধ্যে ওভারটাইমের ওপর নির্ভর করে সংসার চালাচ্ছেন। সেই সঙ্গে ঋণ করে বা একবেলা না খেয়ে তাদের জীবন ধারণ করতে হচ্ছে। শ্রমিকদের মজুরি দারিদ্র্যসীমার নিচে হওয়ায় তারা কখনও কখনও সন্তানদের কাজে যেতে বাধ্য করেন।
ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন মনে করছে, বাংলাদেশে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। সেটা আবার হয়েছে শ্রমিকদের কয়েক সপ্তাহ টানা আন্দোলন-সংগ্রামের পর।
বাংলাদেশের কারখানামালিকেরা দাবি করেন, তাদের পক্ষে ১২ হাজার ৫০০ টাকার ওপরে ন্যূনতম মজুরি দেয়া সম্ভব নয়। এমনকি এই মজুরি দিতে হলে বেশ কিছু সাবকন্ট্রাক্টর ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে, এমন কথাও বলছেন মালিকেরা। মূলত ক্রেতা কোম্পানি পোশাকের দাম নির্ধারণে মূল ভূমিকা পালন করে। নীতিগতভাবে তাদের এমন মূল্য দেয়া উচিত, যাতে কারখানামালিকেরা শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর মতো মজুরি দিতে পারেন। তা সত্ত্বেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো পোশাকের যে দাম দেয়, তা দিয়ে শ্রমিকদের পক্ষে মৌলিক প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয়।
ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন বলছে, তারা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের প্রতি কয়েকবার ২৩ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি দেয়ার মতো মূল্য দেয়ার যে আহ্বান জানিয়েছিল, তাতে কেবল একটি ব্র্যান্ড সাড়া দিয়েছিল। কেবল পাটাগোনিয়া ২৩ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবিতে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু তারা যে পোশাকের দাম বাড়াবে, সেই অঙ্গীকার করেনি। অন্যান্য ব্র্যান্ড খুব ভাসা-ভাসাভাবে সে কথা বলেছে বা মূল্য বৃদ্ধির কথা বলেছে।
বাংলাদেশ থেকে যেসব ব্র্যান্ড পণ্য সংগ্রহ করে যেমনÑ এইচঅ্যান্ডএম, নেক্সট, সিঅ্যান্ডএ এবং এমঅ্যান্ডএস দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর মতো মজুরি দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু দেখা গেছে, যখন সেই সময় এসেছে, অর্থাৎ শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর মতো মজুরির প্রসঙ্গে এসেছে, তখন তারা নিজেদের কথা রাখতে পারেনি। ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন মনে করছে, এতে বোঝা যায়, তাদের অঙ্গীকার ফাঁপা।
তবে এখনও নতুন মজুরি বাস্তবায়ন করা হয়নি। ক্রেতারা চাইলে এ সময় নিজেদের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে পারেন। অর্থাৎ শ্রমিকদের ২৩ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করতে পারে তারা। ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন মনে করে, ২৩ হাজার টাকাও মৌলিক চাহিদা মেটানোর মতো মজুরি নয়; বরং তা দিয়ে কোনোমতে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেটানো যায়।

ইন্টারনেটের তিন দিনসহ স্বল্প মেয়াদের সব প্যাকেজ পুনর্বহালের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইন্টারনেটের তিন দিনসহ স্বল্প মেয়াদের সব প্যাকেজ পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র?্যাব) ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধি ও প্যাকেজ জটিলতা নিরসনে করণীয় শীর্ষক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনেটির আয়োজন করে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজ বাতিলের সিদ্ধান্তের পর ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বর্তমানে তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন অনেক আগেই সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে সতর্ক করেছিল। তখন বক্তব্য আমলে নেয়া হলে ইন্টারনেটের মূল্য নিয়ে আজকের এই পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হতো বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন শুরু থেকেই তিন দিনের মতো স্বল্পমেয়াদি ইন্টারনেট প্যাকেজ বাতিলের বিরোধী ছিল। কারণ নতুন নির্দেশনা কার্যকর করার আগে প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক তিন দিন বা তার কম মেয়াদের প্যাকেজ ব্যবহার করতেন। সেই গ্রাহকেরা এখন বাধ্য হয়ে সাত দিন মেয়াদের প্যাকেজ ব্যবহার করছেন। তিন দিনের মতো স্বল্প মেয়াদের প্যাকেজ বাতিল হলে যে ইন্টানেটের মূল্য বেড়ে যাবে, সে বিষয়টি মোবাইল অপারেটররাও বিভিন্ন সময়ে বিটিআরসিকে এবং গণমাধ্যমে জানিয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রাহকদের জন্য প্যাকেজ সংখ্যা ৪০-এ নামিয়ে আনার কারণেও সার্বিকভাবে ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে আমরা মনে করি। এর ফলে একদিকে গ্রাহকের প্যাকেজ বেছে নেয়ার স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে, অপরদিকে এর মাধ্যমে অপারেটরদের মূল্য বৃদ্ধি করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
স্বল্প আয় ও প্রান্তিক গ্রাহকদের ব্যবহƒত স্বল্পমেয়াদি ও স্বল্প মূল্যের ইন্টারনেট প্যাকেজ বাতিলের কারণে গ্রাহকের ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, কঠিন এ সময়ে এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে।
আমরা জানি, বাজারে কোনো ইন্টারনেট প্যাকেজ বিটিআরসির ট্যারিফ অনুমোদন ব্যতীত অপারেটররা ছাড়তে পারে না।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, তিন দিনের মতো স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজগুলো বাতিলের পর এখন যেসব প্যাকেজ বাজারে চালু আছে সেগুলোও একইভাবে বিটিআরসির অনুমোদন পেয়েছে। মূল্য কমানোর যে আলোচনা এখন চলছে, তাহলে কি আমরা ধরে নেব বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়াই অপারেটররা প্যাকেজ বিক্রি করছে?
নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনে যে প্যাকেজ বাজারে ছাড়া হয়েছে, সেটির মূল্য কমাতে নতুন নির্দেশনা প্রমাণ করে মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির মধ্যে ন্যূনতম সমন্বয় নেই। মূল্য বৃদ্ধির এই দায় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। স্বল্প মেয়াদের প্যাকেজ বাতিলের সিদ্ধান্তের পর এক মাস না পেরোতেই মূল্য পরিবর্তনের আরেকটি পদক্ষেপ বাজারে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করবে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে স্বল্প সময়ে একাধিক হস্তক্ষেপ গ্রাহকদের একদিকে বিভ্রান্ত করবে, অপরদিকে তা বাজারের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশকেও বিঘিœত করবে।
তিনি বলেন, শুধু নির্বাচন উপলক্ষে ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ এরপর যদি আবার মূল্য বৃদ্ধি পায়, তাহলে তার দায় কে নেবে? মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের ফলে গত এক মাসে গ্রাহকদের যে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে, সেটি কি গ্রাহকদের আদৌ ফেরত দেয়া হবে?
সংবাদ সম্মেলনে ইন্টারনেটের মূল্য ও প্যাকেজ নিয়ে ছয়টি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো, তিন দিনসহ স্বল্প মেয়াদের সব প্যাকেজ পুনর্বহাল করতে হবে, ইন্টারনেটের মূল্য আগের চেয়েও কমাতে হবে, ইন্টারনেটের মূল্যের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা কমিয়ে সহনীয় করতে হবে, গ্রাহকের পছন্দের প্যাকেজের ওপর সীমা তুলে দেয়া, মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের ফলে গত এক মাসে গ্রাহকদের যে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে, তা সমন্বয় করা এবং প্যাকেজের সংখ্যা নিয়ে গ্রাহক বিভ্রান্তি বন্ধ করা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন সংগঠনের ফেলো প্রফেসর ড. একেএম রিয়াজুল হাসান, ভোক্তা সংগঠক ও বাজার বিশ্লেষক কাজী আব্দুল হান্নান ও কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট সাহেদা বেগম।

 

সেমিনারে চীনের রাষ্ট্রদূত
রিজার্ভ-সংকট মোকাবিলায় ঢাকা সহযোগিতা চাইলে পাশে থাকবে বেইজিং

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, রিজার্ভ-সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সহযোগিতা চাইলে চীন পাশে থাকবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন ইয়াও ওয়েন।
ঢাকায় চীনা দূতাবাসের সহযোগিতায় ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) ‘বিআরআই’র ১০ বছর: পরবর্তী সোনালি দশকের সূচনা’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, রিজার্ভের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখনও ভালো অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে রিজার্ভ নিয়ে যে সংকটের কথা বলা হচ্ছে, তা থেকে বাংলাদেশ সহজে উত্তরণ ঘটাতে পারবে। আর বাংলাদেশ যদি রিজার্ভের ক্ষেত্রে সহযোগিতা চায়, চীন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকবে। বাংলাদেশের পাশে থাকবে চীন।
বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দুই দেশের সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন বলে জানান ইয়াও ওয়েন। রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে মুক্তবাণিজ্য অর্থনীতি-সংক্রান্ত নানাবিধ কার্যক্রম চলমান। আশা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের মধ্যে চীন ও বাংলাদেশ মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে। চুক্তি সম্পন্ন হলে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন শান্তি, ন্যায়বিচার, আন্তর্জাতিক আইন ও বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অভিন্ন আকাক্সক্ষার পক্ষে। তারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সব সহিংসতা ও আক্রমণের নিন্দা জানান।
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এমন সব কাজের বিরোধিতা করে চীন। তারা বিশ্বাস করেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। পরিস্থিতির অবনতি এড়াতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে হবে। বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব মানবিক সহায়তা ও উদ্ধারের পথ উš§ুক্ত করা অপরিহার্য। চীন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে শান্ত থাকা ও সংযম চর্চার আহ্বান জানায়।
ওয়েন আরও বলেন, ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘকে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। এর জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব আন্তর্জাতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে বাস্তব ব্যবস্থা নিতে হবে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের (সিইএবি) সভাপতি কে চ্যাংলিয়াং, ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস।
০০০০০০০০০০০০
যেকোনো মূল্যে নির্বাচন করতে
হবে, দ্রুত তফসিল ঘোষণা: সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, যেকোনো মূল্যে নির্ধারিত সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। দ্রুত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। যেকোনো মূল্যে নির্ধারিত সময় ২৯ জানুয়ারির আগেই নির্বাচন করার কথা বলেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর বঙ্গভবনের সামনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিইসি। নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে জানাতে বিএনপির চলমান অবরোধের মধ্যে বঙ্গভবনে যান নির্বাচন কমিশনাররা।
সিইসি বলেন, নির্ধারিত সময় ও পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। নির্বাচনের তফসিল নিয়ে এখনও পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। পরে কমিশনের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যথাসময়ে নির্বাচন হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক সংকট নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাদের কোনো কথা হয়নি।

 

 

বিএনপির কর্মীদের প্রতি খাদ্যমন্ত্রী
‘মিছামিছি দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই, নৌকায় উঠে পড়–ন’

প্রতিনিধি, নওগাঁ
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ‘বিএনপি কোনোদিন ক্ষমতায় আসবে না। মিছামিছি দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই, আসুন নৌকায় উঠে পড়–ন।’ গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় এক মতবিনিময় সভায় বিএনপির কর্মীদের বিএনপি ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে হাজীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। শিবপুর পুলিশি তদন্ত কেন্দ্রসংলগ্ন মাঠে ওই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির সমালোচনা করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালে নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়ে আগুন-সন্ত্রাস করে কোনো লাভ হয়নি। এবারও অস্ত্র আর সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণকে ভয় দেখিয়ে তারা নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। বিএনপির নেতাদের বলব, সাহস থাকলে নির্বাচনে আসুন। ভোটের মাধ্যমেই জনসমর্থন প্রমাণ হবে।’
বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘বিএনপির নেতাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপি আর কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তাই বিএনপির কর্মীদের বলতে চাইÑমিছামিছি দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই। আসুন, নৌকায় উঠে পড়–ন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে দেশে উন্নয়ন হয় না। উন্নয়ন চাইলে নৌকায় ভোট দিতে হবে।’
বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে গিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নের কারণে গ্রাম এখন শহর হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকায় পাকা রাস্তাঘাট হয়েছে। মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখন আর কেউ না খেয়ে থাকে না, এমনকি পান্তাও কেউ খায় না। ভাতের অভাব এখন নেই। দেশে খাদ্যের অভাব নেই। ভবিষ্যতে আমরা বিদেশে খাদ্য রপ্তানি করব।’
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন হাজীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক আবেদ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

 

 

ডেঙ্গুতে এক দিনে আরও
১৭ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডেঙ্গুতে নভেম্বর মাসেও মৃত্যুর মিছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। দেশে এ নিয়ে ডেঙ্গুতে এ বছরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৪৯ জনে। এক দিনে আরও এক হাজার ৭৩৪ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। দেশে এরই মধ্যে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ও শনাক্তে পুরোনো সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে গ্রামে। মৃত্যুও বেশি গ্রামে। চলতি বছরের এ পর্যন্ত দুই লাখ ৮৭ হাজার ২৩৯ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে এক লাখ দুই হাজার ৫৯১ জন এবং ঢাকার বাইরে রয়েছেন এক লাখ ৮৪ হাজার ৬৪৮ জন। মৃত এক হাজার ৪৪৯ জনের মধ্যে নারী ৮২৫ জন এবং পুরুষ ৬২৪ জন।
গতকাল সারাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক হাজার ৭৩৪ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ২৭১ জন এবং ঢাকার বাইরের এক হাজার ৪৬৩ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন এক হাজার ৭৩৪ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৩৬০ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন এক হাজার ৬৪৯ জন এবং ঢাকার বাইরে চার হাজার ৭১১ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত দুই লাখ ৮৭ হাজার ২৩৯ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ আক্রান্ত এক লাখ ৭২ হাজার ৪১০ জন এবং নারী এক লাখ ১৪ হাজার ৮২৯ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুই লাখ ৭৯ হাজার ৪৩০ জন।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন তিনজন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন, এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন দুজন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন দুজন। জুন মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন পাঁচ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাইয়ে শনাক্ত হয়েছেন ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৪ জন। আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন শনাক্ত হয়েছেন এবং প্রাণহানি হয়েছে ৩৪২ জনের। সেপ্টেম্বরে শনাক্ত রোগী ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন এবং মারা গেছেন ৩৯৬ জন। অক্টোবরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬৭ হাজার ৭৬৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৫৯ জন। নভেম্বরের ৯ দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৪ জন এবং মারা গেছেন ১০১ জন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বেশি হবে। বর্তমান রোগীর চেয়ে আরও ১০ গুণ বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খাতায় নেই।

 

 

এনবিআরে চালু হলো
‘শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
আধুনিক সুবিধা-সংবলিত আগারগাঁও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনে চালু হলো শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র। ভবন উদ্বোধনের ৯ মাস পর শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ফিতা কেটে এর উদ্বোধন করেন। এসময় এনবিআর সদস্য, প্রথম সচিব, দ্বিতীয় সচিব ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
চেয়ারম্যান এনবিআরে কর্মরত কর্মচারীদের শিশুদের নিয়ে কেক কাটেন। পরে শিশুদের ফুল ও চকলেট দেয়া হয়। চেয়ারম্যান, এনবিআর সদস্য ও কর্মকর্তারা শিশুদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান। এই শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র উদ্বোধন হওয়ায় এনবিআরে কর্মরত চাকরিজীবী অভিভাবকরা সুবিধা পাবেন। শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র চালু করায় এনবিআরে কর্মরত কর্মজীবী অভিভাবকরা এনবিআর চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মু’মেন শেয়ার বিজকে জানিয়েছেন, এনবিআরের নবনির্মিত ভবনের তৃতীয় তলায় এই শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এনবিআরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক থেকে সাত বছর বয়স পর্যন্ত বয়সী শিশু সন্তানের বাবা ও মায়ের অফিসকালীন নিরাপদ পরিবেশে অবস্থান নিশ্চিত করতেই এই দিবাযতœ কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, শিশু সন্তানের জন্য নিরাপদ অবস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের স্পৃহা, মান ও গতি ত্বরান্বিত হয়। বিশেষ করে কর্মজীবী নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে অধিকতর মনঃসংযোগ করতে পারেন। এতে করে দাপ্তরিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত হয়। দপ্তরের সামগ্রিক কার্যক্রমের মানোন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনা করেই এনবিআর চেয়ারম্যান এই শিশু দিবা যতœ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। ২০ জন শিশুর থাকার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এ শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র অফিস খোলা থাকার দিনগুলোয় প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে, যেখানে এনবিআরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শিশুসন্তান রাখা যাবে।

 

 

টিসিবির স্মার্টকার্ড বিতরণ
উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছে অসাধু চক্র: বাণিজ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) এক কোটি ফ্যামিলি বা পরিবার কার্ডকে স্মার্টকার্ডে রূপান্তরিত করায় ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। সেই সঙ্গে অসামঞ্জস্যও দূর হবে।
আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে সারাদেশে বিনা মূল্যে এই স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে বলে উল্লেখ করে কার্ড পেতে কার্ডধারীদের আর্থিক লেনদেন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। খবর: বিজ্ঞপ্তি।
গতকাল সকালে রাজধানীর মালিবাগে পিডব্লিউডি কলোনি অডিটরিয়ামে টিসিবি আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডকে স্মার্টকার্ডে রূপান্তরিত করে বিনা মূল্যে বিতরণ এবং কার্ডধারীদের কাছে চালসহ টিসিবির পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় তিনি স্বীকার করেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছেন।
টিপু মুনশি বলেন, গরিব-দুঃখী-অসহায় মানুষ যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের কথা বিবেচনা করে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে পাঁচ কোটি মানুষকে কম মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাংলাদেশে যে পরিমাণ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, তার চেয়ে বেশি মানুষের কাছে সরকার ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডিম ও আলু আমদানি শুরু হওয়ায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ডিমের একটি চালান দেশে আসার পর সরকার থেকে যে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, তার চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময় আলু, পেঁয়াজসহ অন্যান্য শাকসবজির বাজার স্বাভাবিক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
পেঁয়াজ প্রসঙ্গে টিপ মুনশি আরও বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম নির্ভর করে দেশের উৎপাদনের ওপর। এখন পেঁয়াজের শেষ সময়। আমরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করি, কিন্তু ভারত রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে প্রথমে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে; এর কিছুদিন পরেই তারা প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করে। এতে তাদের পেঁয়াজ রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে বাজারে দাম বেশি।’
ডিম আমদানির অনুমতি দেয়ার পরও চালান আসতে দেরি হওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ডিম আমদানির ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত দেয়া হয়েছিল, যার মধ্যে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার সনদ ছিল অন্যতম। এসব শর্ত পূরণে কিছু আইনি জটিলতা থাকায় দেশে চালান আসতে দেরি হয়েছে।
টিপু মুনশি বলেন, ডিম, আলু ও পেঁয়াজের পরিস্থিতি নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ নিচ্ছেন এবং মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বৈশ্বিক কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ে ভীষণ দুঃসময় পার করতে হচ্ছে, এর মধ্যে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছে অসাধু চক্র। রাজনৈতিক পরিচয় যা-ই হোক না কেন, তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এ সময় টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, পিএসসি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মামুন রশিদ শুভ্র প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

০০০০০০০০০০০
লেনদেন কমার পাশাপাশি ডিএসইএক্স সূচকের পতনের ধারা অব্যাহত
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল বৃহস্পতিবার চলতি সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সূচকের পতন দেখা গেছে; একইসঙ্গে আগের দিনের মতো গতকালও লেনদেনে পতন অব্যাহত ছিল। দেশের অপর পুঁজিবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একই চিত্র দেখা গেছে।
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উত্থান-পতনের ধারা অব্যাহত ছিল এবং দিনশেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ কমে ছয় হাজার ২৭১ দশমিক ৮৩ পয়েন্টে অবস্থান করে। ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক শূন্য দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৬২ পয়েন্টে অবস্থান করে। আর ডিএস৩০ সূচক ১ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ কমে দুই হাজার ১২৭ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে অবস্থান করে। ডিএসইতে লেনদেন হয় ৪৬৯ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫১৬ কোটি ০২ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে গতকাল ডিএসইর লেনদেন ৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা কমেছে। এদিন ১০ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫২৫টি শেয়ার এক লাখ ৩১ হাজার ৮৮ বার হাতবদল হয়। লেনদেন হওয়া ৩১১ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪৬টির, কমেছে ৯৪টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৭১টির দর।
গতকাল টাকার অঙ্কে লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কোম্পানিটির ২৩ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর পরের অবস্থানে থাকা ইয়াকিন পলিমার লিমিটেডের ২১ কোটি ৭১ লাখ, ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেডের ২১ কোটি ৩০ লাখ, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ১৮ কোটি ৮০ লাখ, দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেডের ১৪ কোটি ৮৮ লাখ, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ১৩ কোটি ৫৭ লাখ, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১৩ কোটি ৩ লাখ, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ১১ কোটি ৫৮ লাখ, বিচ হ্যাচারি লিমিটেডের ১০ কোটি ৬৫ লাখ এবং খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের ১০ কোটি ২১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
গতকাল ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ শেয়ারদর বেড়ে টপটেন গেইনারের শীর্ষে উঠে আসে বিডি থাই ফুড লিমিটেড। এর পরের অবস্থানে থাকা খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ, সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেডের ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ, ন্যাশনাল ফিড মিল লিমিটেডের ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপউয়ার্ড লিমিটেডের ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ লিমিটেডের ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং আনলিমা ইয়ার্ন ডায়িং লিমিটেডের ৩ দশমিক ০৬ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে।
অন্যদিকে সিএসইতে গতকাল সিএসসিএক্স মূল্যসূচক ২ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ০২ শতাংশ বেড়ে ১১ হাজার ১২১ দশমিক ৩৭ পয়েন্টে এবং সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ০২ শতাংশ বেড়ে ১৮ হাজার ৫৯৩ দশমিক ৬০ পয়েন্টে অবস্থান করে। গতকাল সর্বমোট ১৬৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৪টির এবং কমেছে ৪৯টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৭২টির দর। সিএসইতে গতকাল মোট ৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর আগের কার্যদিবসে হয়েছিল ৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকার।

প্রথম প্রান্তিকে লোকসান কমেছে ন্যাশনাল টিউবসের

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০২৩) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড। আর এ প্রান্তিকে তাদের শেয়ারপ্রতি লোকসান কমেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০২৩) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১০ পয়সা (লোকসান), যা আগের বছর একই সময় ছিল ৪৪ পয়সা (লোকসান)। অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি লোকসান ৩৪ পয়সা কমেছে। এছাড়া ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৪৯ টাকা ৮৮ পয়সা। প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ১২ পয়সা (ঘাটতি), যা আগের বছর একই সময় ২ টাকা ৮৮ পয়সা (ঘাটতি) ছিল।

পর্ষদ সভার তারিখ জানিয়েছে ১৮ কোম্পানি
নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিচালনা পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৮ কোম্পানি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড: ১৪ নভেম্বর বেলা ৩টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
ইন্দো বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড: ১৪ নভেম্বর বিকাল ৪টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
ওয়াটা কেমিক্যাল লিমিটেড: ১৪ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
জিবিবি পাওয়ার: ১৪ নভেম্বর বিকাল ৪টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ: ১৪ নভেম্বর বেলা ৩টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেড: ১৩ নভেম্বর বিকাল ৪টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড: ১২ নভেম্বর বিকাল ৪টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
আমরা নেটওয়ার্কস: ১২ নভেম্বর বেলা ৩টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড: ১৪ নভেম্বর বেলা ৩টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
ডরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি: ১৪ নভেম্বর বেলা সাড়ে ৩টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
বারাকা পাওয়ার লিমিটেড: ১৪ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড: ১৪ নভেম্বর বেলা ৩টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
আরামিট সিমেন্ট লিমিটেড: ১৫ নভেম্বর বিকাল ৪টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
আরামিট লিমিটেড: ১৫ নভেম্বর বেলা ৩টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
মুন্নু ফেব্রিকস: ১৪ নভেম্বর বিকাল ৫টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজ লিমিটেড: ১৪ নভেম্বর বিকাল ৪টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল লিমিটেড: ১৩ নভেম্বর বেলা ৩টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেবর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
ন্যাশনাল টি কোম্পানি : ১১ নভেম্বর বেলা সাড়ে ৩টায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।

কমিউনিটি ব্যাংক ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর

কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এবং হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড (প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান) সম্প্রতি সিএমএসএমই খাতকে প্রসারের লক্ষ্যে সাপ্লাই চেইন ফাইন্যান্স-সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। কমিউনিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউল হক চৌধুরী এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এ সময় কমিউনিটি ব্যাংকের ডিএমডি মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম খান, সামসুল হক সুফিয়ানী, এসইভিপি বেনজীর আহমেদ, ইভিপি শেখ জালাল উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি

ন্যাশনাল ব্যাংকের তালতলা
উপশাখা উদ্বোধন

ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের তালতলা উপশাখা গতকাল উদ্বোধন করা হয়। মালিবাগ শাখার অধীনে ৪১তম উপশাখা হিসেবে এটির উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন উপশাখাটি উদ্বোধন করেন। এ সময় ব্যাংকের ঢাকা দক্ষিণের আঞ্চলিক প্রধান মো. মেশকাত-উল-আনোয়ার খান, প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, মালিবাগ শাখার ব্যবস্থাপক, তালতলা উপশাখার ইনচার্জ, কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি

ক্যাডেট কলেজে ভর্তির আবেদন
ফি দেয়া যাবে বিকাশে

প্রতিবছরের মতো এবারও দেশের ১২টি ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি দেয়া যাবে বিকাশে। ভর্তি-ইচ্ছুচ্ছু শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকরা ক্যাডেট কলেজে ভর্তির ওয়েব ঠিকানায় গিয়ে অনলাইনে ভর্তির আবেদন করে বিকাশের মাধ্যমে ফি প্রদান করতে পারবেন। আগামী ১৩ ডিসেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনলাইনে ভর্তির আবেদন করে ফি দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। আবেদনকারীরা বিকাশ পেমেন্টের ওপর শর্তসাপেক্ষে পেতে পারেন ৫০ টাকার ক্যাশব্যাক কুপন। ক্যাডেট কলেজে ভর্তির লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৩ ডিসেম্বর। ক্যাডেট কলেজসমূহে ভর্তি পরীক্ষার আবেদনপত্র পূরণ পদ্ধতি এবং ফি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে িি.িপধফবঃপড়ষষবমব.ধৎসু.সরষ.নফ অথবা যঃঃঢ়ং://পধফবঃপড়ষষবমবধফসরংংরড়হ.ধৎসু.সরষ.নফ/ ওয়েব ঠিকানায়। বিজ্ঞপ্তি

উত্তরবঙ্গে এনসিসি ব্যাংকের বিনা মূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ

এনসিসি ব্যাংক সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর ও কুড়িগ্রামের রাজারহাটে এক হাজার ৬০০ প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনা মূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ করেছে। এনসিসি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির আনামের সভাপতিত্বে রংপুরের এডিসি মো. আব্দুল মান্নান প্রধান অতিথি হিসেবে প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিভিন্ন প্রকারের কৃষিবীজ, সার ও কীটনাশক বিতরণ করেন। এ সময় রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল ও রংপুর সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফরিদা সুলতানা বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি

শাহেদা গফুর-ইব্রাহিম হাসপাতালে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অ্যাম্বুলেন্স প্রদান

মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসি সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালাইয়ায় অবস্থিত শাহেদা গফুর-ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতালকে একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করেছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসির ভাইস চেয়ারম্যান এএসএম ফিরোজ আলমের উপস্থিতিতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে গতকাল অ্যাম্বুলেন্সটি হস্তান্তর করেন। এ সময় ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান এএসএম ফিরোজ আলম, ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউল হাসান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আদিল রায়হান, শামীম আহম্মদ, হাসনে আলম ও মু. মাহমুদ আলম চৌধুরী, সিএফও তাপস চন্দ্র পাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি

প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের আইসিএমএবি বেস্ট করপোরেট অ্যাওয়ার্ড অর্জন

প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল পিএলসি ‘টেক্সটাইল এবং আরএমজি ক্যাটাগরিতে’ স্বচ্ছ করপোরেট গভর্ন্যান্স, অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা এবং কোম্পানির সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার স্বীকৃতিস্বরূপ পরপর পাঁচবার আইসিএমএবি বেস্ট করপোরেট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছ থেকে কোম্পানির পরিচালক অলক কুমার দাস ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাতুল দাস কোম্পানির পক্ষে অ্যাওয়াড গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বিজ্ঞপ্তি

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিজ্ঞানমেলা অনুষ্ঠিত

ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণে ‘বিজ্ঞানমেলা ২০২৩’ অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। উত্তরার দিয়াবাড়ীতে অবস্থিত মাইলস্টোন কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস মাঠে অনুষ্ঠিত মেলার আয়োজক ছিল মাইলস্টোন প্রিপারেটরি কেজি স্কুল। শিশু শিক্ষার্থীরা আমাদের যাপিত জীবনের নানা ধরনের প্রয়োজন ও জিজ্ঞাসা নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকল্প উপস্থাপন করে। গত মঙ্গলবার প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করেন মাইলস্টোন প্রিপারেটরি কেজি স্কুলের নির্বাহী অধ্যক্ষ রিফাত নবী আলম। এ সময় সম্মানিত অতিথি ছিলেনÑমাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা নুরন্ নবী, কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম এবং মাইলস্টোন প্রিপারেটরি কেজি স্কুলের দিয়াবাড়ী ক্যাম্পাসের প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা আক্তার। বিজ্ঞপ্তি

প্রাইম ব্যাংকের নীরা ও কন্যা ওয়েলবিং লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি

প্রাইম ব্যাংকের নারী উদ্যোগ (নীরা) সম্প্রতি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কন্যা ওয়েলবিং লিমিটেডের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির ফলে প্রাইম ব্যাংকের নীরার গ্রাহকরা কন্যা হেলথ কার্ডে ২০ শতাংশ ছাড় সুবিধা পাবেন। প্রাইম ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম এ চৌধুরী এবং কন্যা ওয়েলবিং লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক কানিজ ফাতেমা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। এ সময় প্রাইম ব্যাংকের হেড অব অ্যাফ্লুয়েন্ট সেগমেন্ট অ্যান্ড উইমেন ব্যাংকিং শায়লা আবেদীন এবং কন্যা ওয়েলবিং লিমিটেডের পরিচালক ফেরদৌস বাপ্পীসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি
০০০০০০০০০০০
ডলারের বাজার স্থিতিশীল করতে ব্যবস্থা নিন

দেশে ডলারের দাম নিয়ে একপ্রকার অস্বস্তিতে রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলার নিয়ে বিতর্ক যেন থামছেই না। প্রতি ডলারে সরকার-নির্ধারিত বিনিময় হারের পরিবর্তে ব্যাংকগুলো আরও বেশি দামে ডলার কিনছে। নির্ধারিত দামের তুলনায় বেশি দামে ডলার কেনাবেচার জন্য গত মাসে ১০টি ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানকে জরিমানাও করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার আগে ১৮ সেপ্টেম্বর ওই ট্রেজারিপ্রধানকে কেন জরিমানা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমন সব ব্যবস্থার পরও ডলারের দামে ঊর্ধ্বগতি থামানো যাচ্ছে না।
গতকাল শেয়ার বিজের ‘খোলাবাজারে ডলারের দাম উঠল ১২৪ টাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, এক দিনের ব্যবধানে খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের দাম চার টাকা বেড়ে ১২৪ টাকা হয়েছে। বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মানি এক্সচেঞ্জে প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১২৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবার ডলারের দর ছিল ১১৯-১২০ টাকা, যদিও নির্ধারিত দাম অনুযায়ী খুচরা ডলারের দাম ১১৩ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। গতকাল অনলাইন গণমাধ্যমগুলো বলছে, ডলারের দাম ১২৬ টাকা ছাড়িয়েছে। সাধারণ মানুষও প্রশ্ন করছে, ডলারের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে!
দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বরাবরই বলে আসছে যে, সংস্থাটি ডলারের দাম নির্ধারণ করে না, বরং দেশের ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপরই ছাড়া রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে এটি ঠিক, বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) মিলিতভাবে ডলারের দাম নির্ধারণ করে থাকে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলে আসছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছাড়া হয়নি। আর এ কারণেই ডলারের একাধিক বিনিময় হার প্রচলিত রয়েছে।
ডলারের দাম নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থানে আস্থা নেই রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদেরও। তারা দেখছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক একেক সময় একেক কথা বলে। অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকগুলোকে বেশি দামে ডলার কেনার মৌখিক অনুমতি দিচ্ছে। ফলে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডির ব্যবহার বাড়ছে।
ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হলে মূল্যস্ফীতি স্বল্প মেয়াদে বাড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে তা কমে আসবে। কারণ বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের বাজারে দাম বাড়ার বিষয়টি যতটা না ডলার সংকটের ওপর নির্ভর করে, তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, বাজারের ওপর নজরদারি, পর্যবেক্ষণের অভাব, সরবরাহ না থাকা, মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগামহীন লাভ করার মানসিকতা ও চাঁদাবাজির মতো বিষয়গুলোর ওপর।
বিনিময় হার নিয়ন্ত্রিত থাকলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ডলার না পেলেও যারা সুবিধাবাদী, যারা প্রভাবশালী, তারা ঠিকই ডলারের ব্যবস্থা করে ফেলে। এতে ব্যবসায় সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ থাকে না। মুদ্রা বিনিময় হারের অনাকাক্সিক্ষত ওঠানামার ফলে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকিতে পড়েন। ভোক্তারাও এর বাইরে নন। এক্ষেত্রে ঝুঁকি বণ্টন পদ্ধতি (হেজিং) চালুর বিষয় বিবেচনা করতে পারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো।
আর মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সেগুলো অর্জনে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি যাতে প্রতিবন্ধক না হতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিকে।

 

পুরুষের সমস্যা ভরিকোসিল

অণ্ডকোষ থেকে ওপরের দিকে বিস্তৃত শিরাগুলোর অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যাওয়া ও প্যাঁচানো অবস্থার নামই ভেরিকোসিল। সাধারণত শৈশব ও কৈশোরে এ রোগ দেখা যায় বেশি এবং প্রায় ১৫ শতাংশ পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হন। এ রোগে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা হতে পারে, বন্ধ্যাত্ব যার অন্যতম। বাঁ দিকে এ রোগটা বেশি দেখা গেলেও ডানে বা উভয় পাশেও হতে পারে।
কারণ: ভেরিকোসিল বিভিন্ন কারণে হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কারণ অজানাই রয়ে যায়। জ্ঞাত কারণগুলোর মধ্যে পেটের দুই বড় ধমনির মধ্যে অণ্ডকোষের শিরা চাপা পড়া বা বাঁ কিডনির শিরার চাপ সরাসরি অণ্ডকোষের শিরায় পড়া এবং জš§গতভাবে শিরার একমুখী কপাটিকার অনুপস্থিতি বা দুর্বলতাসহ কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের নানা ধরনের টিউমার অন্যতম।
সাধারণত শৈশব ও কৈশোর বয়সে এ রোগ দেখা যায় বেশি এবং প্রায় ১৫ শতাংশ পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হন। রোগে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা হতে পারে, বন্ধ্যাত্ব যার অন্যতম।
লক্ষণ: সাধারণত লম্বা, পাতলা গড়নের পুরুষেরা এ রোগের উপসর্গ নিয়ে আসেন। নির্দিষ্ট অণ্ডকোষে ব্যথা থাকে, যা ওপরের দিকে ছড়িয়ে যায়। অণ্ডকোষের শিরাগুলো ফোলা ও প্যাঁচানো থাকতে পারে, যা দেখেই বোঝা যায় বা হাতের ছোঁয়ায় পাতলা ব্যাগভর্তি কৃমি বা কেঁচোর মতো অনুভূত হয়। পাশাপাশি পেটের কোনো টিউমার নিয়েও রোগীদের কেউ কেউ আসেন।
রোগনির্ণয়: বিশেষজ্ঞ ইউরোলজিস্টরা ক্ষেত্রবিশেষে রোগীর দাঁড়ানো ও শোয়া অবস্থায় পরীক্ষা করে রোগটা নির্ণয় করতে পারেন। তবে কালার ডপলার আলট্রাসাউন্ড করলে সামগ্রিক চিত্রটা ভালোভাবে বোঝা যায়। বিশেষ করে অস্ত্রোপচারের আগে অবশ্যই এটা করে নিতে হবে।
রোগের ব্যাপ্তি অনুযায়ী এ রোগ চার ধরনের হয়। গ্রেড শূন্য থেকে গ্রেড ৩। ভেরিকোসিল হলে পরবর্তী সময়ে অণ্ডকোষ ছোট হয়ে যেতে পারে, অণ্ডকোষের ভেতরের প্রকৃতি পাল্টে যেতে পারে, যার ফলে শুক্রাণুর গুণগত মানের অবনতি ঘটে। এতে শেষমেশ বন্ধ্যাত্ব পর্যন্ত ঘটতে পারে।
চিকিৎসা: প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ব্যথা উপশমকারী ওষুধের সঙ্গে আরও কিছু ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়। তবে যে ক্ষেত্রে শিরাগুলো বেশি ফুলে যায় বা প্যাঁচানো থাকে, সার্বক্ষণিক কষ্টদায়ক ব্যথা থাকে, যা ওষুধে কমে না, বন্ধ্যাত্ব বা কিছু ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের পূর্বশর্ত হিসেবে এ রোগের শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।
ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা গেলেও অপারেটিং অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে শল্যচিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যায়। ভেরিকোসিল সন্দেহ করলে দ্রুতই বিশেষজ্ঞ ইউরোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

অধ্যাপক ডা. নিতাই পদ বিশ্বাস
ইউরোলজিস্ট ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন
বিভাগীয় প্রধান, ইউরোলজি বিভাগ
আলোক হেলথ কেয়ার লিমিটেড, মিরপুর, ঢাকা

 

 

আজকের দিনে

শহীদ নূর হোসেন, (১৯৬১-১৯৮৭)। ১৯৮৭ সালে জেনারেল এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ১০ নভেম্বর নূর হোসেন শহিদ হন। তিনি ১৯৬১ সালে রাজধানীর নারিন্দায় জš§গ্রহণ করেন। তার পিতা মুজিবর রহমান ছিলেন বেবিট্যাক্সি চালক। নূর হোসেনের পৈতৃক নিবাস পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলাধীন ঝাটিবুনিয়া গ্রামে। স্বাধীনতার পর থেকে তাদের পরিবার ঢাকায় বনগ্রাম রোডের ৭৯/১নং বাড়িতে বসবাস শুরু করে। নূর হোসেন প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন বনগ্রামের রাধাসুন্দরী প্রাইমারি স্কুলে। ঢাকার গ্র্যাজুয়েট হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তিনি পড়াশোনা বন্ধ করে মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নূর হোসেন ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদক।
রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরে আন্দোলন চলছিল। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর জোটবদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ‘ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি’ গ্রহণ করে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল এরশাদ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়। সেদিন নূর হোসেন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন। তিনি গায়ের জামা খুলে উদোম বুক ও পিঠে সাদা রঙে লিখিয়ে নেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক: গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। গণমিছিলে শামিল জনতার মাঝে সহজেই আলাদাভাবে তাকে চেনা যাচ্ছিল। গণতন্ত্রের নির্ভীক এই সৈনিককে চিহ্নিত করতে স্বভাবতই স্বৈরশাসকের পুলিশবাহিনীর বিলম্ব হয়নি। পুলিশের গুলিতে ঢাকা জিপিও-র সামনে জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন নিহত হন। কিন্তু তার বুকে-পিঠে লেখা সেøাগানই সারাদেশে জনতার সেøাগানে পরিণত হয়। ফলে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পতন ঘটে এরশাদ সরকারের।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে অমর এই শহিদের নামানুসারে জিরো স্কোয়ারের নামকরণ করা হয়েছে নূর হোসেন স্কোয়ার। বাংলাদেশের ডাকবিভাগ ১৯৯১ সালে তার নামে প্রকাশ করেছে স্মারক ডাকটিকিট। [সংগৃহীত]

 

হামাসের রাজনৈতিক উত্থান ও
ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রাম
মো. জিল্লুর রহমান

ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস কোনো ভুঁইফোড় সংগঠন নয়। সংগঠনটি ২০০৭ সাল থেকে ৩৬৫ বর্গকিমি আয়তনের গাজার শাসন ক্ষমতায় আছে। হামাস সম্প্রতি ইসরায়েলে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী হামলা চালিয়ে সারা বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছে। এত দিন মাঝেমধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের ছোটখাটো সংঘাত হলেও সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে পশ্চিমারা হতবাক ও বিস্মিত। হামাসের হঠাৎ জ্বলে ওঠাকে ইসরায়েলের জন্য বিশাল সামরিক গোয়েন্দা ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক বিপর্যয় হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ তাদের বিস্ময়ের ঘোর যেন কিছুতেই কাটছে না। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রতি তাদের নাগরিকদের যে আস্থা ও বিশ্বাস ছিল, তাতেও মারাত্মকভাবে ফাটল ধরেছে এবং অনেক ইসরায়েলই ভয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। আর এ কারণেই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য ইহুদিবাদী দখলদার শক্তি ইসরায়েল গাজায় নিরীহ নিরাপদ মানুষের ওপর নির্বিচারে বিমান ও স্থল হামলা করে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে এবং সারাবিশ্বে নিন্দার ঝড় উঠেছে। হামাস ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ে অনেক আগে থেকেই লড়াই করছে। পশ্চিমরা এতদিন হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন বা জঙ্গি সশস্ত্র গোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করলেও এবারের হামলার পর পশ্চিমারা নড়েচড়ে বসেছে, যারা এতদিন হামাসের নাম শোনেনি তাদের কাছেও সংগঠনটি বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে এবং বিশ্বের অনেক গণমাধ্যম হামাসকে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি সশস্ত্র গোষ্ঠীর পরিবর্তে স্বাধীনতাকামী সংগঠন বলতে শুরু করেছে। এটা হামাসের জন্য একটি বিশাল অর্জন।
১৯৬৭ সালের আরব ইসরায়েল যুদ্ধের পর আরব বিশ্ব, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মজলুম মানুষদের মধ্যে একটি স্পষ্ট সীমারেখা নির্দিষ্ট হয়ে যায়। ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদার মাধ্যমে গাজা এবং পশ্চিম তীরে ইসলামি এই প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের প্রকাশ্য আত্মপ্রকাশ ঘটে। এটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন শায়খ আহমেদ ইয়াসিন, যিনি মূলত ছিলেন তৎকালীন ইখওয়ানুল মুসলিমীনের ফিলিস্তিন শাখার নেতা। যদিও তিনি ছিলেন পঙ্গু, তবুও তিনি যুবক বয়স থেকেই গাজার নেতা ছিলেন। ১৯৭৮ সালে ৪৯ বছর বয়সী শায়খ আহমেদ ইয়াসিন ফিলিস্তিনিদের সাহায্যের জন্য আল মুজাম্মা আল ইসলামি নামে একটি ইসলামি সংগঠন গড়ে তুলতে অধিকৃত ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে ইসরায়েল তা মঞ্জুর করে, কেননা তাদের লক্ষ্য ছিল গাজায় ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা পিএলও-এর একক প্রতিনিধিত্ব খর্ব করা কিন্তু সেই প্রচেষ্টা নিমিষেই ব্যর্থ হয়ে যায়। তাই ১৯৮৭ সালে হামাস দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং বিদ্রোহ ঘোষণা করে বসে। ১৯৮৮ সালে গৃহীত হয় ‘হামাস চার্টার’ যার লক্ষ্য হলো অধিকৃত ফিলিস্তিন থেকে দখল দারিত্বের অবসান ঘটানো এবং ইসরায়েলকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা।
হামাস মূলত ফিলিস্তিনের একটি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী। হারাকাত আল মুকাওয়ামা আল ইসলামিয়ার (আরবি ভাষায় ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন) সংক্ষিপ্ত রূপ হামাস। ফিলিস্তিনের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের একটি হামাস। গাজা উপত্যকায় ২২ লাখেরও অধিক জনগোষ্ঠী হামাসের শাসনে রয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধ করার জন্য হামাস অধিক পরিচিত। পশ্চিমা বিশ্ব হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করলেও মুসলিম দেশগুলো তাকে স্বাধীনতাকামী সামরিক বাহিনীর অংশ হিসেবে মনে করে। হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ ইয়াসিন ইসলামিক শিক্ষা অর্জনের পর কায়রোতে ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে গাজা ও পশ্চিম তীরে ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি বিভিন্ন দাতব্য কাজ করেন। তিনি পশ্চিম তীর, গাজা এবং পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি দখল দারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিদ্রোহ ও প্রথম ইনতেফাদার পর ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে গাজায় ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা হিসেবে হামাসকে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময়ে হামাসের উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলবিরোধী আরেক সংগঠন প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ পিআইজে’কে মোকাবিলা করা। তবে ফিলিস্তিনের মৃত নেতা ইয়াসির আরাফাত ও তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের অস্ত্রচুক্তির মাত্র ৫ মাস আগে হামাস আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে আলোচনায় আসে। সংগঠনটি ঐতিহাসিক ওই চুক্তিটির চরম বিরোধিতা করে। এ কারণে ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করে এবং ২০০৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাদের সন্ত্রাসী তালিকায় রাখে। হামাস এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছিল, তবে পশ্চিমা চাপে আদালত তাদের আবেদন বাতিল করে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াও হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু ইরান, রাশিয়া, তুরস্ক, চীন, সিরিয়াসহ মুসলিম দেশগুলো হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে গণ্য করে না।
ফিলিস্তিনের প্রধান দুটি অধ্যুষিত এলাকা হচ্ছে পশ্চিম তীর বা ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক (৫,৯৭০ বর্গ কিমি) এবং গাজা ভূখণ্ড (৩৬৫ বর্গ কিমি)। পশ্চিম তীর ও গাজা মূলত বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান এবং এর মধ্যবর্তী ভারতের অবস্থানের সঙ্গে তুলনীয়। ঠিক তেমনিভাবে পশ্চিম তীর ও গাজার মধ্যে বিশাল ভুঁইফোড় অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল। এই দুই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের সবচেয়ে নিকটবর্তী দুটি এলাকার মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক বা পশ্চিম তীরকে এই নামে ডাকা হয়, কারণ এটি জর্দান নদী এবং ডেড সি বা মৃত্যু সাগরের পশ্চিম তীরে জেরুসালেম পর্যন্ত এর বিস্তার। ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীর নিয়ন্ত্রণ করে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পুতুল ফিলিস্তিনি সরকার। ধর্মনিরপেক্ষ ফিলিস্তিনি দল ফাতাহ এই ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের মূল শক্তি বা দল। আর গাজার সঙ্গে রয়েছে ইসরায়েলের ৫১ কিমি দীর্ঘ সীমান্ত। মিশরের সঙ্গেও গাজার ৭ কিমি সীমান্ত আছে। গাজার অন্যদিকে ৪০ কিমি দীর্ঘ ভূমধ্যসাগর উপকূল।
ফিলিস্তিনে মূলত দুটি দল বেশ সক্রিয়, গাজায় হামাস আর পশ্চিম তীরে ফাতাহ। ২০০৪ সালে ইয়াসিন আরাফাতের মৃত্যুর পর হামাস ও ফাতাহর মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে এবং ২০০৬ সালের নির্বাচনের পর সেটা চরম আকার ধারণ করে। ওই নির্বাচনে হামাস জয়ী হয় কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিনে সাহায্য বন্ধ করে দেয়। এরপর ২০০৭ সালে হামাস ফাতাহ সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীকে পরাজিত করে গাজার দখল নিয়ে নেয়। সেই থেকে গাজা শাসন করছে হামাস এবং এটি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থি জনপ্রিয় দল। অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে হামাস তাকে স্বীকৃতি দেয় না। হামাস ইসলামের সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী কিন্তু একটি সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হিসেবে ইরানসহ বিভিন্ন দেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে। ২০০৬ সালের গাজার সাধারণ নির্বাচনে হামাস পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এরপর থেকে গাজা উপত্যকা থেকে ফাতাহকে হটিয়ে দেয়ার পর তারাই গাজা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। ইসরায়েল তখন থেকেই গাজা উপত্যকায় অবরোধ আরোপ করে। সেখানে পণ্য ও সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত করতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। হামাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহযোগী দেশ কাতার। দেশটির আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানি প্রথম রাষ্ট্রনেতা, যিনি ২০১২ সালে হামাস সরকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এখন পর্যন্ত দেশটি হামাসকে ১৮০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে। ইরান সংগঠনটিকে যুদ্বাস্ত্র থেকে শুরু করে আর্থিক সহায়তাও দেয় বলে কথিত আছে। আবার তুরস্কও হামাসের শীর্ষ নেতাদের আশ্রয় দেয় বলেও পশ্চিমাদের অভিযোগ। সংগঠনটির নেতা ইসমাইল হানিয়ের পক্ষে রিসেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ানের রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছে। এছাড়া তারা বিভিন্ন উদ্যোগ ও ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা পায়। এই দলটির মালিকানায় গাজা অঞ্চলে প্রায় দুই হাজার একর ওয়াকফকৃত কৃষি জমি রয়েছে। অন্যদিকে আল আকসা ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকের ২০ শতাংশ শেয়ার, রিয়েল স্টেট ব্যবসা, এপার্টমেন্ট ও মার্কেট ভাড়ার ইত্যাদি ব্যবসা থেকে দলটি আয় করে থাকে। সৌদি আরব, ইরান এবং ইউরোপে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরাও হামাসের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ যোগায় দেয়।
স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে হামাস গাজায় ব্যাপক জনপ্রিয়। হামাস সংগঠন হিসেবে মূলত তিনটি শাখার সমষ্টি হিসেবে কাজ করে। রাজনৈতিক শাখা, সমাজকল্যাণমূলক শাখা এবং সামরিক শাখা। মজলিশে শূরা হামাসের প্রতিনিধিদের মিলনস্থল, যার মাধ্যমে হামাস সমগ্র ফিলিস্তিনে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তবে হামাসের নীতিনির্ধারণী পরিষদ হলো পনেরো সদস্যের ‘পলিটিক্যাল ব্যুরো’। হামাসের কার্যক্রমের ৯০ শতাংশ হলো সামাজিক, শিক্ষা বিস্তার, সংস্কৃতি ও জনকল্যাণমূলক কাজ এবং এই সামাজিক কাজের মধ্যে দাতব্য চিকিৎসা, মসজিদ স্থাপন, স্কুল ও শিশুশিক্ষা অর্থায়ন, খেলাধুলার জন্য ক্লাব প্রতিষ্ঠা অন্যতম। হামাস শত নির্যাতন ও অবরোধের মধ্যেও বার্ষিক ৭০-৯০ মিলিয়ন ডলারের একটি বাজেট দিতে সক্ষম হয়, যার প্রায় ৮৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কাজে। প্রতিরক্ষা এবং সামরিক খাতে বরাদ্দ যায় মাত্র ১৫ শতাংশ। ২০১২ সালের হিসাব মতে, গাজা উপত্যকায় শিক্ষার হার প্রায় ৯৯ শতাংশ। সেখানে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া প্রায় চার লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীর জন্য ৬৮৩টি স্কুল রয়েছে যার মধ্যে ৩৮৩টি স্কুল সরকার অর্থাৎ হামাস পরিচালনা করে। হামাস শিশুদের জন্য অসংখ্য নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন স্কুল বা মক্তব প্রতিষ্ঠা করেছে, যার মাধ্যমে তাদের এক বেলা খাবারও সরবরাহ করা হয়। হামাস বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা বা দাতা দেশ থেকে আসা সাহায্য ও আর্থিক অনুদান ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট দক্ষতা ও স্বচ্ছতার পরিচয় দিয়েছে।
হামাসের আরেকটি সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ হচ্ছে ইসরায়েলি আগ্রাসনে যারা মৃত্যুবরণ করে তাদের শহিদ হিসেবে গণ্য করে এবং শহিদ হওয়া ফিলিস্তিনিদের পরিবারের যাবতীয় ভরণপোষণের জন্য এককালীন ও নিয়মিত অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকে হামাস, যার পরিমাণ ৫০০ থেকে ৫০০০ ডলার হয়ে থাকে। এছাড়া হামাস ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘর, স্কুল বা মসজিদ পুনর্নির্মাণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা দিয়ে থাকে। স্বাস্থ্য সেবায় হামাস নিজেকে এক অনন্য অবস্থানে নিয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা বা দাতা দেশ থেকে আসা সাহায্য ও আর্থিক অনুদান ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট দক্ষতা ও স্বচ্ছতার পরিচয় দিয়েছে হামাস; অপরপক্ষে ফাতাহ গোষ্ঠী এই দিকে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জ। হামাসের এই সামাজিক কার্যক্রমের জনপ্রিয়তা শুধু গাজা ভূখণ্ডেই নয়, বরং ফাতাহ শাসিত পশ্চিম তীর এমনকি আশপাশের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও অনেক বেশি জনপ্রিয় এবং তাদের সুখ্যাতি আছে। তাছাড়া, দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সীমাহীন আত্মত্যাগ, সততা, দক্ষতা ও নিপীড়িত মানুষের মধ্যে থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি তাদের জন্য আমরণ লড়াইয়ের অদম্য মানসিকতাই হামাসকে দাঁড় করিয়েছে এক অনন্য অবস্থানে; শুধু ফিলিস্তিনিদের হƒদয়ে নয়; বরং সারা বিশ্বের মজলুম সংগ্রামী মানুষের মধ্যে হামাস অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। সাম্প্র্রতিক একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৫২% ফিলিস্তিনি মানুষ হামাসের পক্ষে তাদের সমর্থন জানিয়েছে, অপরদিকে ফাতাহর জনসমর্থন মাত্র ১৩%। এছাড়া পিউ’র একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, জর্ডানের প্রায় ৬০% মুসলিম এবং লেবানন ও মিসরের প্রায় ৫০% মানুষ হামাসের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে।
হামাস শব্দের অর্থ উদ্দীপনা, গভীর দেশপ্রেম। সাংগঠনিক সনদ অনুযায়ী, দখলদার ইসরায়েল রাষ্ট্রকে উৎখাত করে একটি ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করাই হামাসের লক্ষ্য। হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জদ্দিন আল ক্কাসাম ব্রিগেড যাকে সংক্ষেপে আল ক্কাসাম ব্রিগেড বলা হয়। এটি ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তখন থেকেই তারা ইসরায়েলে সামরিক হামলা চালিয়ে তটস্থ করে রেখেছে। এই সংগঠনে বর্তমানে নিবন্ধিত ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধা রয়েছেন, যারা কোনো বেতন নেন না। বর্তমানে আল ক্কাসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দিয়েফ এবং উপপ্রধান মারওয়ান ঈশা। হামাসের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তাদের ক্ষেপণাস্ত্র। হামাসের স্থল থেকে স্থলে আঘাত হানতে সক্ষম বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। সাম্প্রতিক হামলায় মাত্র বিশ মিনিটে পাঁচ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইসরায়েলকে হতবাক করে দিয়েছে এবং তাদের বহু সাধের আয়রণ ডোম প্রযুক্তি কোনো কাজেই আসেনি।
ইরান ১৯৭৯ সালে ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফিলিস্তিনের একচ্ছত্র সমর্থক হিসেবে নিজেদের দাবি করছে। ইসলামপন্থি এবং বামপন্থি ইরানি বিপ্লবী যারা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট শাহ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলে, ফিলিস্তিনি লেখক ও যোদ্ধারা তাদের অনেকের জন্য ছিল অনুপ্রেরণা। ষাট ও সত্তরের দশকে এই ইরানিদের মধ্যে কেউ কেউ এমনকি ফিলিস্তিনি গেরিলা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণও নিয়েছিলে। তারা যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে সফল হন, তখন ইরানি বিপ্লবীরা এই অনুগ্রহের প্রতিদান দেন। তারা ইসরায়েলি দূতাবাস ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের কাছে হস্তান্তর করে। বিপ্লবীরা দায়িত্ব নেয়ার কয়েক দিনের মধ্যে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতকে তেহরানে স্বাগত জানানো হয়। আশির দশকজুড়ে ইরানের নতুন প্রতিষ্ঠিত ইসলামি বাহিনী লেবাননে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইরত লেবাননের শিয়া গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দেয়। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন সহিংসতা থেকে দূরে সরে যায়। তারা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করার পর ইরান ইসরায়েলবিরোধী ইসলামি সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল, যার মধ্যে অন্যতম ছিল হিজবুল্লাহ। ২০০৬ সালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর সফলতার পেছনে ছিল ইরান।
হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ ইয়াসিন ২০০৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর গাজা শহরের একটি ভবনে ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হত্যার চেষ্টা থেকে বেঁচে যান। তখন তার ডান হাত হালকাভাবে আহত হয়েছিল এবং গাজার আশ শিফা হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলে। তখন তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘এমন একদিন আসবে, যখন এই আততায়ী হামলা হামাসের সঙ্গে কোনো কাজে আসবে না। হামাসের নেতারা শহিদ হওয়ার জন্য উদগ্রীব, তারা মৃত্যুকে তো ভয় পায় না। জিহাদ চলতেই থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত দুটি লক্ষ্যের একটি অর্জিত হয়Ñজয় কিংবা শহিদ!’ ২০০৪ সালের ২২ মার্চ শায়খ আহমেদ ইয়াসিনকে ইসরায়েলের সন্ত্রাসী প্রতিরক্ষা বাহিনী নির্মমভাবে (বোমা নিক্ষেপ) শহিদ করে। তার মৃত্যুর পর আবদুল আজিজ আল রানতিসি হামাসের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। শায়খ আহমেদ ইয়াসিনের মৃত্যুর কিছু দিনের মধ্যেই ২০০৪ সালের ১৭ এপ্রিল ইসরায়েল একই প্রক্রিয়ায় হামাসের তখনকার সদ্য নতুন প্রধান আবদুল আজিজ আল রানতিসিকে হত্যা করে। এরপর অসংখ্য হামাস নেতাকে একইভাবে দখলদার শক্তি ইসরায়েল নৃশংসভাবে হত্যা করেছে কিন্তু স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে হামাসকে দমাতে পারেনি, বরং তারা দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
২০০৬ সালের গাজার সাধারণ নির্বাচনে হামাস পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে কিন্তু পশ্চিমারা হামাসের বিজয়কে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। এরপর থেকে পশ্চিম তীর মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে ফাতাহ নিয়ন্ত্রণ করছে আর গাজার নিয়ন্ত্রণ হামাসের হাতে। ২০০৭ সাল থেকে হামাস ইসরায়েলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। ২০০৮-০৯, ২০১২ ও ২০১৪ সালে ইসরায়েলি সেনার সঙ্গে হামাসের তুমুল লড়াই চলে। তারা ঐতিহাসিকভাবে ইসরায়েল, পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকার সম্মিলিত অঞ্চলের ওপর একটি ইসলামি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র চায় এবং পশ্চিমাদের দ্বিরাষ্ট্র সমাধান প্রত্যাখ্যান করে। হামাস ২০০৫, ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে ফাতাহর সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ইসরায়েল এবং ১৯৬৭ সালের সীমান্তের সঙ্গে আলোচনা গ্রহণ করতে শুরু করে।
হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে যে আকস্মিক হামলা চালিয়েছে, সে প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদের এক অধিবেশনে বলেছেন, হামাসের হামলা শূন্য থেকে হয়নি। ফিলিস্তিনের মানুষ ৫৬ বছর ধরে শ্বাসরুদ্ধকর দখলদারির শিকার হয়েছেন। তারা তাদের ভূখণ্ড বসতিতে পরিণত এবং সহিংসতায় জর্জরিত হতে দেখেছেন। তাদের অর্থনীতি থমকে গেছে। এখানকার বাসিন্দারা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের দুর্দশার রাজনৈতিক সমাধানের আশা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। অন্যদিকে জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেছেন, দখলদার শক্তি হওয়ায় ইসরায়েলের নিজেদের আত্মরক্ষার কোনো অধিকার নেই। তারা একমাত্র যে কাজ করতে পারে, তা হলো ইসরায়েলকে কথিত আত্মরক্ষার কথা বলতে থাকা। যদিও ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের বিশেষজ্ঞ মত অনুযায়ী, একটি দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েলের নিজেদের আত্মরক্ষার অধিকার নেই।
সাম্প্রতিককালে ইসরায়েলের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক ছিল এমন অনেক মুসলিম দেশ যখন ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করছিল, তখনই তারা ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা করে। হামাস বলছে এ ধরনের সম্পর্ক স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান অন্তরায় এবং তাদের মূল দাবি ১৯৬৭ সালে আরব ইসরায়েল যুদ্ধের অবৈধ দখলকৃত জায়গা ইসরায়েলকে ছেড়ে দিতে হবে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন মূলত পরাশক্তি দেশগুলোর একছত্র ইসরায়েল সমর্থন অনেকাংশেই এই সংকটকে টিকিয়ে রেখেছে এবং পরাশক্তিগুলোর বিরোধিতার কারণেই আজও স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি, তাদের কাছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র অনেকটা পুতুল নিয়ে খেলা করার মতো। এক্ষেত্রে হামাস মূলত ইসরায়েলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একটি কার্যকর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কায়েম করতে চাইছে।

ব্যাংকার ও কলাম লেখক
ুৎনননঢ়Ñমসধরষ.পড়স

 

বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে
সেলিনা আক্তার

সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের নারীদের বেশ কয়েকটি তাক লাগানো সাফল্য সবার দৃষ্টি কেড়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশের নারী বিজ্ঞানী ড. ফিরদৌসি কাদরির ২২তম ল রিয়েল-ইউনেস্কো ফর ওমেন ইন সায়েন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন। তিনি আইসিডিডিআর.বি’র মিউকোসাল ইমুনোলজি অ্যান্ড ভ্যাকসিনোলজি ইউনিট অব ইনফেকসিয়াস ডিজিসেস ডিভিশনের প্রধান। ফিরদৌসি উন্নয়নশীল দেশের শিশুদের সংক্রামক রোগ সম্পর্কে গবেষণার জন্য এই সম্মাননা পেয়েছেন। মাহজাবিন হক নামের আরেক বাংলাদেশি নারী যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসায় সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনাটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) অর্থায়নে পড়ালেখার পাশাপাশি নাসার নিজস্ব ল্যাবে রিসার্সের সুযোগ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আদিবা সাজেদ। আমাদের মেয়েরা ফুটবল খেলে যখন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভালো করেছে, তখন গ্রামগঞ্জ, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সবাই উৎসাহ দিচ্ছে। সরকারও উৎসাহ দিচ্ছে।
একাত্তরে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে দরিদ্ররা খুবই নাজুক ও কঠিন জীবনযাপন করত। আজকে যে হতদরিদ্র, সে কিন্তু অন্তত দু’বেলা খেতে পারে। দরিদ্র মানুষরা তিনবেলা খেতে পারছে। দেশ স্বাধীনের পর সে অবস্থা ছিল না। তার ওপর বন্যা, দুর্ভিক্ষ, রাজনৈতিক তোলপাড়। সে কারণে সত্তর ও আশির দশকে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত, খুব করুণ অবস্থার মধ্যে ছিল তারা। তখন তারা চুলা জ্বালানোর মতো অবস্থায় ছিল না। এখন সে অবস্থা নেই। তখন নারীদের আয় করার সুযোগ প্রায় ছিল না। এখন আয় করার সুযোগ বেড়েছে। এখন নারীরা অনেক জায়গায় কাজ করতে পারছে, যা আগে সম্ভব ছিল না। আরও অনেক বৈষম্য এখন কমেছে। নারীদের জন্য শহর ও গ্রামে কাজের দ্বার খুলেছে। কিন্তু সে সুযোগ পুরুষের তুলনায় অনেক কম। মজুরিও পুরুষের চেয়ে কম। এত কিছুর পরও বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ নারী-পুরুষের বৈষম্য হ্রাসে ভালো ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের জিডিপি, জিএনপি বেড়েছে, এটাও ইতিবাচক। গ্রামীণ নারীরা ভালো শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। আধুনিক কলাকৌশল ও তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞানসমৃদ্ধ হয়ে গ্রামের মহিলারা ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি, আধুনিক পদ্ধতিতে মৎস্য, পশুপালনসহ নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে।
বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক ও বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি শিক্ষাক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। প্রাথমিকের ক্ষেত্রে ভর্তির হার এখন ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বেশি। বাংলাদেশ সরকার উচ্চশিক্ষার জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা ২০১৭-২০৩১ অবলম্বন করেছে। ২০২২ সালে উচ্চশিক্ষায় (টারশিয়ারি) নারীদের ভর্তির হার ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার (ডিগ্রি/মাস্টার্স/পোস্ট গ্র্যাজুয়েট/অন্যান্য) ক্ষেত্রে ছাত্রীদের ভাগ ৪৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও শিক্ষা খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। প্রাথমিকে ছাত্রীসংখ্যা ১০৪-এর বিপরীতে ছাত্রসংখ্যা ১০০। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষকের অনুপাত সরকারি ক্ষেত্রে ৬৪ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে ৬৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এসবই বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নে নারী শিক্ষার প্রসার বড় ভূমিকা রেখেছে।
নারীরা আজকে অনেক এগিয়েছে। নারীরা প্লেন চালাচ্ছে, পুলিশ হচ্ছে, ব্যাংকার হচ্ছে, অফিস-আদালতে বিভিন্ন জায়গায় কর্মমুখী হচ্ছে। আমাদের প্রাপ্তি হয়েছে অনেক। আর এর পেছনে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং করছে। অনেক নারী বিভিন্ন জায়গায় খুব সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে, কিন্তু এটি গোটা নারী জাতির কৃতিত্ব নয়। পৃথিবীর উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের নারীরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। নারীকে নানা বাধার মধ্যে কাজ করতে হয়। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক নির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পুরুষরা দুটো কাজ করেছে; এক দেশ রক্ষার সংগ্রাম, আরেকটা জীবন রক্ষার সংগ্রাম। আর নারীরা দেশ রক্ষার সংগ্রাম এবং জীবন রক্ষার সংগ্রামের সঙ্গে নিজেকে রক্ষার সংগ্রামও করেছে। নারীর সংগ্রামটা এক কদম বেশি। সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নারী সংরক্ষিত আসন বাড়ানো আর উপজেলা পরিষদে নারী ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করেছেন। ১৯৯৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদে নারীরা প্রথম সদস্য পদে নির্বাচনের সুযোগ পায়। সে সময় তাদের পরিষদের কক্ষেও বসার জায়গাও ছিল না। বর্তমান সময়ে নারীরা এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে স্মার্টভাবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সব জায়গায় জনপ্রতিনিধিত্বমূলক কাজ করছেন। সামাজিক, অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীকে কাজ করতে হবে। এ তিনটি সমানভাবে না এগোলে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব না। আগে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করার, তাদের পক্ষে কথা বলার জন্য কোনো জায়গা ছিল না। ইউনিয়ন পরিষদ হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়নের প্রাথমিক প্ল্যাটফর্ম। সেখানে নারীর অংশগ্রহণের পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের অংশীদারি বাড়াতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সচিবালয় পর্যন্ত নারীর অংশগ্রহণ আগের থেকে অনেক বেড়েছে।
দক্ষিণ অঞ্চলের অধিকাংশ নারী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। নারী যতদিন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন না, ততদিন নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা কৃষি খাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন কুটিরশিল্পের জন্য এনজিও এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কাজ করে। তাদের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় অনেক প্রতিভা আছে, সেগুলো বিকশিত করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে এ সমাজ তথা রাষ্ট্রকেই। গত দশকেও আমাদের দেশের নারীরা সকাল থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত বাইরের কোনো স্বপ্ন দেখতে পারত না। তাদের মাথার মধ্যে একটাই দুঃস্বপ্ন থাকত, কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হবে। এসব নারী ভাগ্যের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্প সুদে কৃষি ও কুটিরশিল্প ঋণ নিয়ে এখন নিজেরাই উদ্যোগতা। এভাবে তারা ঋণ শোধ করে নিজেদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে তারা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছে। আমরা যদি আসলেই বাংলাদেশের উন্নতি চাই, বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে দেখাতে চাই তাহলে সামনে এগোতে হবে।
বাংলাদেশ অন্য দেশের চেয়ে ভালো না মন্দ, তা আমাদের দেখার দরকার নেই। আমরা দেখতে চাই বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে আদর্শ হিসেবে। আর এ জন্যই নারীর অগ্রগতির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি দরকার, তা হলো মানসিকতার পরিবর্তন। আমাদের দেশের মানুষের মানসিকতা আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নারী কাজের সুযোগ পাচ্ছে, বাইরের জগতের সঙ্গে মিশছে। একদিকে নারীদের অবাধ সুযোগ দেয়া হচ্ছে চাকরির জন্য, শিক্ষার জন্য। অন্যদিকে নারীরা যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সেদিকে কড়া দৃষ্টি রাখছে সমাজ। পরিবারে পুরুষ আয় করছে, নারীও আয় করছে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নারীরা কাজ করছে। তারা পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করছে। এখন আর নারীরা শুধু সেলাই প্রশিক্ষণই নেয় না, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে ক্যাটারিং, মোবাইল সার্ভিসিংসহ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সব প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। একটা সময় ছিল মেয়েশিশু জšে§র পর পরিবারের সদস্যরা যতটা খুশি হতো, ছেলেশিশু সন্তান জš§ নিলে তার চেয়ে বেশি খুশি হতো। সব জায়গায় না হলেও অনেক পরিবার এসব চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসেছে। এসবই ইতিবাচক নারীর অগ্রগতির জন্য। নারীকে রাজপথে আসতে হলে মেঠোপথ ধরে আসতে হবে। মেঠোপথ বা তৃণমূলে নারীর উন্নয়নে কাজ করতে হবে। তাদের মধ্যে সচেতনতা আর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চিন্তার জায়গাটা বদলাতে হবে। প্রতিটি মানুষকে নারীবান্ধব নয়, মূলত মানববান্ধব হতে হবে। সব মানুষকে সমানভাবে শ্রদ্ধা করতে শিখতে হবে। এটি শুধু নারী-পুরুষের শ্রদ্ধা না। শ্রেণিগত, জাতিগত, ধর্মগত শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। বিভাজন সৃষ্টি করলেই শ্রদ্ধার জায়গা কমে যাবে এবং নারীর অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে।

পিআইডি নিবন্ধ
০০০০০০০০০০০০

বগুড়ায় আমন ধান উৎপাদন
লক্ষ্য অতিক্রম করার আশাবাদ

শেয়ার বিজ ডেস্ক
বগুড়ার মাঠে মাঠে পাকা-আধা পাকা নতুন ধানের গন্ধ। শুরু হয়েছে আগাম রোপণ করা আমন ধান কাটা। আর ১৫ দিন পর কৃষক পুরোমাত্রায় ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করবেন বলে জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মতলুবর রহমান।
তিনি জানান, এ বছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা খরার মোকাবিলা করে আমন ফলিয়েছে। প্রকৃতির বিরূপ আবহাওয়া সত্ত্বেও এ বছর বগুড়ায় আমনের লক্ষ্য অতিক্রম করবে। জেলার সোনাতলার কৃষক আবদুল বারি জানান, এ বছর কাক্সিক্ষত বৃষ্টি না হওয়ায় তাদের খরার সঙ্গে সেচ দিয়ে মোকাবিলা করতে হয়েছে। এতে সফলতা এসেছে। আলহামদুলিল্লাহ ধানের ফলন হয়েছে ভালো।
আমন ধানের জন্য উঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে ব্যস্ত কিষানিরা। অনাবৃষ্টি এবার কৃষকদের ভুগিয়েছে, তবুও তারা দমে যায়নি। আবহাওয়াকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাঠে ধান চাষ করেছেন। সফলও হয়েছেন।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, এ বছর জেলায় এক লাখ ৮১ হাজার ৫০০ হেক্টর রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হেক্টর বেশি জমিতে আমন চাষ হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় পাঁচ লাখ ৯৯ হাজার (চাল আকারে) মেট্রিক টন। গত বছর আমন উৎপাদন হয়েছিল (চাল আকারে) পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন। গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক।
জেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত ১৬ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আরও দুই সপ্তাহ পরে ধান কাটা চলবে পুরো মাত্রায়। যারা আগাম আমন লগিয়েছে, তারা পাকা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ধান কাটা শেষে কৃষক এ ক্ষেতেই আগাম আলু চাষ করবেন বলে জানালেন কৃষি কর্মকর্তারা।

 

মণিহার-মুড়লি সড়ক
যশোরে চার বছরেও শেষ
হয়নি উন্নয়নকাজ
মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর

বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদ শুরুর প্রথম দিক ২০১৯ সালে শুরু হয় যশোর শহরের মণিহার থেকে মুড়লি মোড় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ। সরকারের মেয়াদ শেষ হতে চললেও আজও শেষ হয়নি গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক উন্নয়নের কাজ। সড়ক বিভাগ দাবি করছে ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে মিলছে না দৃশ্যমান কোনো প্রমাণ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর শুরু হওয়া যশোরের মণিহার থেকে মুড়লি মোড় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ শেষের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর। পরে দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর, এরপর সর্বশেষ মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৩ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত। স্থানীয়দের অভিযোগ তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও ১২৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পটির কাজ ৫০ শতাংশ কাজও শেষ হয়নি। এতে করে কবে নাগাদ মানুষের ভোগান্তি কমবে সে বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোরের পূর্ব বারান্দিপাড়া থেকে মণিহার প্রেক্ষাগৃহ হয়ে মুড়লি মোড় পর্যন্ত যশোর-খুলনা মহাসড়কের এ তিন কিলোমিটার উন্নয়ন কাজ অনেকটা থেমে আছে। সড়কের মণিহার মোড়ের ফলপট্টি এলাকায় এক পাশে ঢালাই করে রাখা হলেও পূর্ব পাশজুড়ে এখনও সেখানে কোনো কাজ শুরু হয়নি। যেটুকু ঢালাই করা হয়েছে তাও দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। যে কারণে মণিহার মোড়ে দিনের অধিকাংশ সময়ই বেধে থাকে তীব্র যানজট। ফলে এ নিয়ে প্রতিনিয়তই সাধারণ মানুষ ও গাড়ি চালকদের ক্ষোভ বাড়ছে।
যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়ন ২২৭ এর সিনিয়র সহসভাপতি আবু হাসান বলেন, পূর্ব বারান্দিপাড়া থেকে মণিহার প্রেক্ষাগৃহ হয়ে মুড়লি মোড় পর্যন্ত যশোর-খুলনা মহাসড়কের এ তিন কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। কিন্তু গত প্রায় ৫ বছর ধরে এ সড়ক উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। অথচ সামান্য এইটুকু সড়ক উন্নয়নে এক বছর সময়ও লাগার কথা না। ঠিকাদারের ধীরগতির কারণে এমনটা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করে বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এ কাজ শেষ করতে ঠিকাদার উদ্যোগী হবেন।
মণিহার মোড়ে কথা হয় শহিদুল ইসলাম নামে এক বাস চালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিন কিলোমিটার সড়ক দিয়ে প্রতিদিনই দুই থেকে আড়াই হাজার যানবাহন এ অঞ্চলের ১৮টি রুটে যাতায়াত করে থাকে। অথচ এইটুকু সড়ক নির্মাণে এক থেকে দেড় বছরের বেশি সময় লাগার কথা না। এখনও ধীরগতিতে কাজ চলছে। মাঝে মাঝে সড়কে কাজ করতে দেখা যায়, আবার মাঝে মাঝে নির্মাণ শ্রমিকদের চোখেই পড়ে না। এতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি বাড়ছে বলে তিনি দাবি করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়ক নির্মাণের কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান খান লিমিটেড ও মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড নামে যৌথ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নামে। তবে কাজটি বর্তমান বাস্তবায়ন করছে খুলনার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স লিমিটেড। এ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি নানা অজুহাতেই গত ৫ বছর ধরে সড়ক উন্নয়ন কাজে ঢিলেমি করেছে। যদিও মুড়লি থেকে আইটি পার্ক পর্যন্ত সড়কের ফোর লেনের কাজ দৃশ্যমান হয়েছে। তবে মনিহার মোড় এলাকা এখনও আগের অবস্থায় রয়েছে। ফলে চলতি বছরে সড়কের কাজ যে শেষ হচ্ছে না সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে আমাদের নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। বৈশিক করোনা পরিস্থিতি ও নানা সমস্যায় সড়কের উন্নয়নে কাজে ধীরগতি হয়েছে। তারপরও আমরা প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ করতে পেরেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ করা হবে। তিনি বলেন, দেশের চলমান অবরোধের কারণে সড়কের উন্নয়ন কাজে কিছুটা বিঘিœত হচ্ছে। খুলনা থেকে মালামাল আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তারপরও ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে।

 

মেহেরপুরে মালটা চাষে পাঁচ চাষির সফলতা

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর)
সুস্বাদু আর রোগীদের জন্য বেশ উপকারী ফল মালটা চাষে সফলতা পেয়েছেন মেহেরপুরের আমঝুপির পাঁচ চাষি। এরই মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে মালটা চাষ। স্থানীয়ভাবে বাজার সৃষ্টি হওয়ায় তাদের দেখাদেখি অনেকেই মালটা চাষ শুরু করেছেন। মালটা চাষে আগ্রহী করে তুলতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে বলেও জানায় কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে সবুজ মালটা, বাতাসে দোল খাচ্ছে। সেই সঙ্গে দোল খাচ্ছে বাগান মালিকদের স্বপ্ন। মালটা পাহাড়ি ফল হিসেবে পরিচিত হলেও সমতল ভূমিতেও রয়েছে এ ফলের ব্যাপক সম্ভাবনা। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া মালটা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। অন্যান্য ফল চাষে কম-বেশি ঝুঁকি থাকলেও মালটা চাষে কোনো ঝুঁকি ও ঝামেলা না থাকায় বছর চারেক আগে মালটা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেন আমঝুপি গ্রামের পাঁচ বন্ধু মাজেদুল হক, সুমন, লিটন, মোতালেব ও হাফিজুর। যুবক মাজেদুল হক জানান, তারা প্রথমে ১০ বিঘা জমিতে শুরু করেন মালটা বাগান। স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে দেশে উৎপাদিত মালটার চাহিদা ও দাম পাওয়ায় পর আরও ২৩ বিঘা জমিতে বাগান করেন। প্রতি বিঘা মালটা বাগানে খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। গত বছর ২০ লাখ টাকার মালটা বিক্রি করেন তারা। জেলায় বর্তমানে মালটা বাগানের পরিধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯০ হেক্টর। এছাড়া এ বছর নতুন বাগান তৈরিতে জমি বাড়িয়েছেন অনেক চাষি। একই কথা জানিয়েছেন সুমন, লিটন, মোতালেব ও হাফিজুর। তিনি আরও জানান, কৃষি অফিস যদি চাষিদের খুব কাছাকাছি থেকে পরামর্শ দেয়, তাহলে অনেকেই এই লাভজনক মালটা বাগান করতে আগ্রহী হতো।
আমঝুপি গ্রামের কলেজছাত্র ইলিয়াস ও আলীম জানান, মালটা বাগানে কাজ করে অনেক শিক্ষিত বেকার ও শিক্ষার্থীরা তাদের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছেন। ভবিষ্যতে তারাও মালটা বাগান করবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তারা।
মালটার পাইকারি ব্যবসায়ী সুমন জানান, মালটার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা তাদের জমি থেকে মালটা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে চাষিরা ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে পাইকারদের কাছে মালটা বিক্রি করছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী ছাড়াও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ফল ব্যবসায়ীরা আসছেন মালটা কিনতে। স্থানীয়ভাবে বাজার সৃষ্টি হওয়ায় মালটা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন জানান, মালটা চাষ লাভজনক হওয়ায় এরই মধ্যে আগ্রহী চাষিদের প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আগামীতে জেলায় মালটা বাগানের পরিধি আরও বাড়বে।

 

 

ইঁদুরের উৎপাতে
দিশাহারা কৃষক

প্রতিনিধি নোয়াখালী

ইঁদুরের উৎপাতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন সুবর্ণচরের কৃষকেরা। ফলন ঘরে তোলার সময়ে ইঁদুরের এমন উৎপাতে শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।
সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ইঁদুরের উৎপাত অনেক বেশি, যা কোনো রাসায়নিক বা পরিবেশসম্মত দমন পদ্ধতিতেও কাজে দিচ্ছে না।
উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের চরবৈশাখী গ্রামের কৃষক জমির উদ্দিন জানান, তিন একর জমিতে আমন ধান চাষ করে ফলন ভালো হলেও ১৫-২০ শতাংশ ধান ইঁদুর খেয়ে ফেলেছে। এতে লোকসান গুনতে হবে তাকে। একই মন্তব্য করেছেন পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের কৃষক ফারুক হোসেন। চার একর জমির আমন ধানের ফলন পাকার আগেই ২০ শতাংশের বেশি ইঁদুরের আক্রমণের শিকার হয়েছে।
এদিকে চর আমান উল্লাহ ইউনিয়নের ইব্রাহীম খলিল জানিয়েছেন, এবার ইঁদুর দমনে রাসায়নিক বা পরিবেশসম্মত দমন পদ্ধতি কোনোটাই কাজে দিচ্ছে না। সুবর্ণচরের প্রায় আমন ধানচাষির একই অবস্থা দেখা গেছে।
জাতীয় উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের তথ্যমতে, একটি ইঁদুর বছরে
৪০-৫০ কেজি শস্য ক্ষতি করে। এ ক্ষতির পরিমাণ বছরে ৭৫ হাজার থেকে এক লাখ মেট্রিক টন, যা গড়ে মাঠ ফসলের পাঁচ-সাত ভাগ। বছরে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ফলন ইঁদুর নষ্ট করে, যা ৫০ থেকে ৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার। এছাড়া ইঁদুর ৬০টির বেশি রোগের জীবাণু বহন করে। তাদের মতে, এক জোড়া পূর্ণবয়স্ক ইঁদুর বছরে দুই হাজার পর্যন্ত বংশধর সৃষ্টি করতে পারে।
সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এ বছর ইঁদুরের উৎপাত বেশি। তবে এ উপলক্ষে ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দরকার রাসায়নিক বা পরিবেশসম্মত দমন পদ্ধতির ব্যবহার। এছাড়া ধানক্ষেতে প্যাঁচা বসার জন্য পর্যবেক্ষণ টাওয়ার বসালে ইঁদুরের উৎপাত কমবে। তার মতে, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের ইঁদুর দমনে সচেতন করতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।

 

রাজশাহীতে ভাঙচুরের ভিডিও করায় সাংবাদিককে পেটাল ছাত্রলীগ

প্রতিনিধি, রাজশাহী
নিয়মবহির্ভূতভাবে পরীক্ষা দিতে না দেয়ায় রাজশাহী কলেজের গণিত বিভাগে ভাঙচুর চালিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ছবি তুলতে গেলে দুই সাংবাদিককে মারধর করা হয়েছে। আহত অবস্থায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত দুজন হলেনÑরাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ জার্নালের জেলা প্রতিনিধি আবু সাইদ রনি এবং রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য ও রাজশাহী পোস্টের স্টাফ রিপোর্টার আবদুল আলীম। রনি বুকে ব্যথা পেয়েছেন। তাকে হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। আর আলীম বাম হাতে আঘাত পেয়েছেন। তিনি আছেন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাফরের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী সাঈদ হাসান আশিক, মো. সাহেদুজ্জামান, আশিকুর রহমান সজিব, সাজেদুর রহমান সিজার, মো. মেহেদী, আবদুর রহিম, মো. জাকারিয়া ও সাব্বির হোসেন এই হামলা চালিয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।
কলেজের অধ্যক্ষ মোহা. আবদুল খালেক জানান, ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে কোনো বিভাগেই ইন-কোর্স পরীক্ষা দিতে দেয়া হচ্ছে না। এ কারণে গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানাকেও বিভাগে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাসুদ রানা তার কাছে এসেছিলেন পরীক্ষা দেয়ার দাবি নিয়ে। তিনি তাকে বুঝিয়ে পাঠান যে, একজনকে পরীক্ষা দিতে দিলে সবাইকেই এ সুযোগ দিতে হবে। তাই এটা করা যাবে না।
এরপর অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী মাসুদ রানা অন্যদের ডেকে নেন। তারপর তারা গণিত বিভাগে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সেøাগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা ফুলের টব ভাঙচুর করতে শুরু করেন। খবর পেয়ে অধ্যক্ষ নিজে গিয়েই তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় খবর পেয়ে সাংবাদিকরা এসে ভাঙচুর করা ফুলের টবের ছবি তুলছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা দুই সাংবাদিককে মারধর করেন এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। পরে আহত দুই সাংবাদিককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।
অধ্যক্ষ জানান, হামলাকারীরা সাংবাদিকদের তিনটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। পরে তারা ফেরত দিয়েছে। এ সময় একটি মোবাইল ফোন ভাঙা পাওয়া গেছে। আছড়ে ফেলে ফোনটি ভেঙে ফেলা হয়। এ ঘটনায় সন্ধ্যা ৬টায় একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। হামলাকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তির ব্যাপারে সেখানেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেয়ার থাকলে সেটা একাডেমিক কাউন্সিলের সভাই সিদ্ধান্ত হবে।
রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম বলেন, ‘আমাদের সহকর্মীদের ওপর আঘাত এসেছে। আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাই। হামলাকারীরা যেহেতু কলেজের শিক্ষার্থী, তাদের ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর পাশাপাশি আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করতে চাই।’
জানতে চাইলে রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাফর বলেন, ‘পরীক্ষা দিতে না দেয়ার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এর মধ্যে ছাত্রলীগের কোনো কর্মী থাকতে পারে। এ রকম কেউ থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

 

 

 

সীমান্তে বিএসএফের
গুলিতে বাংলাদেশি
নিহত

প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দিয়াড় মানিক চর সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের গুলিতে সামিরুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশির মৃত্যুর হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সীমান্ত থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ভারতের অভ্যন্তরে এই ঘটনা ঘটে। সামিরুল গোদাগাড়ী উপজেলার বারিনগর গ্রামের হাসিবুল ইসলামের ছেলে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটানিয়ন-বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ঘটনাস্থলটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় হলেও তারা ৫৩ বিজিবির দায়িত্বপূর্ণ এলাকা।
৫৩ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ হোসেন জানান, দুপুরে সামিরুল সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যায়। এ সময় বিএসএফের ৩৫ ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা গুলি করলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে তার মরদেহ নিয়ে যায় বিএসএফ সদস্যরা।
বিজিবি অধিনায়ক আরও জানান, বিকালে এ বিষয়ে বিজিবি ও বিএসএফের অধিনায়ক পর্যায়ে জরুরি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএসএফ অধিনায়ক। পরে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি। দুপুরে সামিরুল সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যায়। এ সময় বিএসএফের ৩৫ ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা গুলি করলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে তার মরদেহ নিয়ে যায় বিএসএফ সদস্যরা।
বিজিবি অধিনায়ক আরো জানান, বিকালে এ বিষয়ে বিজিবি ও বিএসএফের অধিনায়ক পর্যায়ে জরুরি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএসএফ অধিনায়ক। পরবর্তীতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

 

বেগমগঞ্জে রড
বোঝাই ট্রাকে
আগুন

প্রতিনিধি, নোয়াখালী

বিএনপির ডাকা তৃতীয় দফার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় একটি রডবোঝাই ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার আমানউল্লাহপুর ইউনিয়নের আমিনবাজার এলাকায় লক্ষ্মীপুরগামী ট্রাকে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার আমিন বাজার এলাকায় লক্ষ্মীপুরগামী রডবোঝাই একটি ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রাকের সামনের অংশ পুড়ে যায়। পরে চৌমুহনী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একটি দল রাত আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এতে চালক ও হেলপারের কোনো ক্ষতি হয়নি।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম ট্রাকে আগুন দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় এখনও কাউকে আটক করা যায়নি। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 

রাজবাড়ীতে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু

প্রতিনিধি, রাজবাড়ী

রাজবাড়ীতে ট্রেনে কাটা পড়ে এক অজ্ঞাত (৪৫) এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার খানখাপুর রেল স্টেশনের এক কিলোমিটার দূরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নামপরিচয় পাওয়া যায়নি। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল বলে জানা যায়।
স্থানীয়রা জানান, সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আশা খুলনাগামী সুন্দর বন এক্সপ্রেস ট্রেন রাজবাড়ীর খানখাপুর রেল স্টেশন এলাকায় পৌঁছালে মানসিক ভারসম্যহীন ব্যক্তি ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
রাজবাড়ী রেলওয়ে (জিআরপি) থানার ওসি সোমনাথ বসু জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

০০০০০০০০০০
ক্রোয়েশিয়া থেকে দুটি ব্র্যান্ড তুলে নিল কোকা কোলা

শেয়ার বিজ ডেস্ক

ক্রোয়েশিয়া থেকে সাময়িকভাবে দুটি ব্র্যান্ড তুলে নিল কোকা কোলা এইচবিসি। এই সময়ের জন্য ক্রোয়েশিয়ায় বাজারে দুই ব্র্যান্ডের কোমল পানীয় বিক্রি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খবর: রয়টার্স।
ক্রোয়েশিয়ার কয়েকজন ক্রেতা অসুস্থ হয়ে পড়ায় কর্তৃপক্ষ মনে করছে, কোকা কোলা পানের কারণে এটি হয়ে থাকতে পারে। পানীয়গুলো সমস্যা সৃষ্টি করছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে সরকার। এর আগে ক্রোয়েশিয়ার স্টেট ইন্সপেকশন অফিস কোকা কোলা এইচবিসির স্থানীয় শাখাকে কোকা কোলা অরিজিনাল টেস্ট ৫০০ মিলিলিটারের একটি ব্যাচ প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়।
কোকা কোলা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা রোমারকেল ইমোশন ব্লুবেরি পমগ্র্যানেট ৩৩০ মিলিলিটারের একটি ব্যাচও প্রত্যাহার করছে। কোম্পানিটি আরও বলেছে, তাদের অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণে কোনো পণ্যে অনিয়ম পাওয়া যায়নি। তবে সরকারি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা ব্যাচগুলো
প্রত্যাহার করছে।
অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের তীরবর্তী শহর রিজেকার একজন যুবক সপ্তাহের শেষ দিকে রোমারকেল ইমোশন ড্রিংক পান করে গলার সমস্যায় পড়েন।
ক্রোয়েশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভিলি বেরোস জানান, ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পরে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল এইচআরটিকে তিনি বলেন, কোকা কোলা পানের পর আরও ১৩ জনের শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, শুধু রিজেকার ওই ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন। বাকি কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
স্টেট ইনসপেকশন অফিস এক বিবৃতিতে বলেছে, রোমারকেল ইমোশন ড্রিংকের নমুনা পরীক্ষাগারে নেয়া হয়। পরে গত বুধবার জানানো হয়, এর অ্যাসিডিটির মাত্রা, ধাতুর পরিমাণ, কীটনাশক, অ্যাডিটিভস প্রভৃতি পরীক্ষা করা হয়েছে।
তবে রেগুলার কোকা কোলার নমুনা পরীক্ষা এখনও শেষ হয়নি বলে জানায় ইন্সপেকশন অফিস।
কোকা কোলা এইচবিসি এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছি।

গাজায় রোগ সংক্রমণ উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে

শেয়ার বিজ ডেস্ক

ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজায় রোগ সংক্রমণের হার উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ইসরায়েলি বোমা হামলার কারণে অঞ্চলটিতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা, বিশুদ্ধ পানির সংকট এবং আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে এই ঝুঁকি বেড়েছে। খবর: দ্য গার্ডিয়ান।
এ কারণে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটি জানিয়েছে, তুমুল লড়াইয়ের কারণে গাজায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় অধিক লোকের ভিড়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাব সংক্রামক রোগের দ্রুত বিস্তার ঘটাচ্ছে।
এরই মধ্যে কিছু উদ্বেগজনক প্রবণতাও দেখা দিয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় জ্বালানির অভাবে পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দূষিত ও লবণাক্ত পানি পান করতে হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের, যা ডায়রিয়ার মতো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
ডব্লিউএইচও বলছে, গাজায় অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ৩৩ হাজার ৫৫১ জনের বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় ভুগেছে, যাদের বেশিরভাগই পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। একই বয়সী ডায়রিয়া-আক্রান্ত শিশুর এ সংখ্যা গত দুই বছরের মাসিক গড় সংখ্যার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২১ ও ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী দুই হাজার শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়।
এছাড়া জ্বালানির অভাবে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বর্জ্যস্তূপগুলো দ্রুত ও ব্যাপকহারে পোকামাকড় ও ইঁদুরের বংশবিস্তারে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। ডব্লিউএইচও সতর্ক করেছে, এরা রোগ বহন ও সংক্রমণ করতে পারে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহƒত যন্ত্রপাতিগুলোর প্রাথমিক সংক্রমণ প্রতিরোধ করা প্রায় অসম্ভব। আঘাত, অস্ত্রোপচার ও প্রসবের সময় এসবের ব্যবহার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এছাড়া রুটিন টিকাদান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া এবং সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ওষুধের সংকট সংক্রামক রোগ বিস্তারের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে।

নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে ফের বিক্ষোভ

শেয়ার বিজ ডেস্ক

ইসরায়েলি পার্লামেন্টের সামনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে একদল মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। তাদের অনেকের পরিবারের সদস্য ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে কেন্দ্র করে নিহত হয়েছেন। অনেকের পরিবারের সদস্য হামাসের কাছে জিম্মি। গত সপ্তাহেও তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছিল। খবর: বিবিসি।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া মাওজের
মা-বাবা গত ৭ অক্টোবর নেটিভ হাআসারা এলাকায় হামাসের বন্দুকধারীর হামলায় নিহত হন। মাওজ ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের ছবি দেয়া একটি পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন।
তিনি বলেন, সরকার আমার
মা-বাবার সঙ্গে প্রতারণামূলক আচরণ করেছেন। সরকার গাজায় ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার ৪০৫ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। জিম্মি করে রাখা ২৪০ জনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
মাওজের ৭৬ বছর বয়সী মা বিলহা নেতানিয়াহুর বিরোধী ছিলেন। মাওজের মা বিলহা ও বাবা বিক্ষোভে যাচ্ছিলেন। সে সময় তাদের হত্যা করা হয়। মাওজ বলেন, আমি এ কারণে বিক্ষোভে এসেছি। আমি এখানে বলতে এসেছিÑচলে যাও, চলে যাও।
মাওজ ও তার সঙ্গে থাকা বিক্ষোভকারীদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, হামাসের হাতে পরিবারের সদস্যরা জিম্মি থাকলে তারা কী করতেন?
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, নেতানিয়াহু পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা পার্লামেন্টের বাইরে বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। ইসরায়েলের পার্লামেন্টের বাইরে রাস্তায় বিক্ষোভকারীরা তাঁবু বসিয়েছেন।
ফিলিস্তিনে চালানো ব্যাপক আগ্রাসন, ইসরায়েলে হামাসের হামলা, তেলআবিবের অর্থনীতিতে গোটা যুদ্ধের প্রভাব এবং এর ফলে অস্থির হয়ে ওঠা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিÑসব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রতি ইসরায়েলে বাড়ছে অসন্তোষ। ইসরায়েলিদের অভিযোগ, কট্টর ডানপন্থি সরকারের ভুল পদক্ষেপে অস্থিরতা ছড়িয়েছে পুরো অঞ্চলে। ফলে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক জনমত জরিপ অনুসারে, তিন-চতুর্থাংশ ইসরায়েলি নেতানিয়াহুকে আর ক্ষমতায় দেখতে চান না। দুর্নীতি মামলার পাশাপাশি আলোচিত বিচার বিভাগীয় সংস্কারের কারণেও তিনি নিজ দেশে ব্যাপকভাবে নিন্দিত।

 

বিশ্ব পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান

শেয়ার বিজ ডেস্ক

এশিয়ার পুঁজিবাজারে মূল্যসূচকে মিশ্র প্রবণতার পর গতকাল বৃহস্পতিবার ইউরোপের বাজারে উত্থান দেখা গেল। এছাড়া ওয়াল স্ট্রিটে লেনদেন ঊর্ধ্বগামী দেখা যায়। খবর: এপি।
জার্মানির ডিএএক্স শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ হাজার ২৫৪ দশমিক ১০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ফ্রান্সের সিএসি ৪০
সূচক শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ
বেড়ে ৭ হাজার ৬০ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট হয়েছে। তবে ব্রিটেনের এফটিএসই ১০০ সূচক শূন্য দশমিক ১ শতাংশ কমে ৭ হাজার ৩৯৩ দশমিক ৪২ পয়েন্টের স্তরে নেমেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল সূচক শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর আগে গত বুধবার এসঅ্যান্ডপি ৫০০ শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যাতে টানা আট কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী ছিল যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রধান মূল্য সূচক। ১৯ বছর আগে টানা ৯ দিন উত্থানে ছিল এই সূচক। তবে এদিন ডাও শূন্য দশমিক ১ শতাংশ কমে। অন্যদিকে নাসডাক কম্পোজিট বৃদ্ধি পায় শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।
এশিয়ার হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কমে ১৭ হাজার ৫১১ দশমিক ২৯ পয়েন্ট হয়েছে। সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১ পয়েন্টের কিছুটা কম বেড়ে ৩ হাজার ৫৩ দশমিক ২৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
টোকিওর নিক্কেই ২২৫ সূচক ১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩২ হাজার ৬৪৬ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি বছর শেষ হওয়ার আগে ভোট অনুষ্ঠানের ডাক দেবেন। এই সংবাদে পুঁজিবাজারের মূল্যসূচকে উত্থান হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচক শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৪২৭ দশমিক ০৮ পয়েন্ট অর্জন করেছে। একই সময় অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। এতে তাদের পয়েন্ট ৭ হাজার ১৪ দশমিক ৯০ হয়েছে। ব্যাংককের সেট শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে।

 

এইডডেটার প্রতিবেদন
বিশ্বে সবচেয়ে বড় ঋণ সরবরাহকারী চীন

শেয়ার বিজ ডেস্ক

চীন ২০০০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ১ দশমিক ৩৪ ট্রিলিয়ন ডলার ধার দিয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ অব উইলিয়াম অ্যান্ড মেরির গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইডডেটা। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০১৩ সালে শুরু হওয়া বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় চীনের পাওনার পরিমাণ এখন এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি, যা দেশটিকে বিশ্বে সবচেয়ে বড় ঋণ সংগ্রাহকে পরিণত করেছে। খবর: ডয়চে ভেলে।
মোট ঋণের প্রায় ৮০ শতাংশ আর্থিক সংকটে থাকা বিভিন্ন দেশ পেয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানায় এইডডেটা।
চীন বলছে, দেড়শর বেশি দেশ বিআরআই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় সেতু, বন্দর, মহাসড়কসহ নানা অবকাঠামো তৈরিতে ঋণ দিয়েছে চীন। ১৬৫টির বেশি দেশে প্রায় ২১ হাজার প্রকল্পে চীনা অর্থায়নের খবর পেয়েছে এইডডেটা।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০১৬ সালে প্রায় ১৩৬ বিলিয়ন বা ১৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার অঙ্গীকার করেছিল চীন। ২০২১ সালে নি¤œ ও মধ্যম আয়ের বিভিন্ন দেশকে ঋণ ও সহায়তা হিসেবে প্রায় ৮০ বিলিয়ন আট হাজার ডলার দেয়ার অঙ্গীকার করেছিল।
এই বিপুল পরিমাণ ঋণ সহায়তা দেয়ার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো চীনের মিত্র হয়ে উঠেছে। তবে একই সময়ে পশ্চিমা বিশ্বসহ শ্রীলঙ্কা, জাম্বিয়ার মতো ঋণগ্রহীতা কিছু দেশ সমালোচনাও করেছে। তাদের দাবি, চীনের অর্থায়ন বিভিন্ন দেশের ওপর এমন ঋণের বোঝা চাপিয়েছে, যা তারা পরিশোধ করতে সক্ষম নয়।
এইডডেটার গবেষকরা বলছেন, চীনের ঋণ দেয়ার পরিমাণ যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রকল্প বাস্তবায়ন স্থগিত, এমনকি বাতিল হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। সে কারণে ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে বেইজিং চিন্তিত হয়ে পড়েছিল বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তাই ঝুঁকি কমাতে চীনের নীতিনির্ধারকরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন। এর মধ্যে একটিÑঅবকাঠামো খাতে দেয়া ঋণের পরিমাণ কমিয়ে জরুরি সহায়তা হিসেবে ঋণ দেয়ার পরিমাণ বাড়ানো। সে কারণে ২০১৫ সালে মোট ঋণের ৬০ শতাংশের বেশি অবকাঠামো খাতে দেয়া হলেও ২০২১ সালে সেটি ৩০ শতাংশে নেমে আসে।
দুই বছর পর ২০১৮ সালের চীনের দেয়া মোট ঋণের ৩১ শতাংশ পেয়েছিল আফ্রিকা। ২০২১ সালে সেটি ১২ শতাংশে নেমে যায়। ২০২১ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে দেয়া চীনের ঋণের পরিমাণ চারগুণ বেড়েছে, যা এখন মোট ঋণের ২৩ শতাংশ।

 

 

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে চায় বেলজিয়াম
শেয়ার বিজ ডেস্ক

ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজায় আগ্রাসন চালানোর কারণে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন বেলজিয়ামের উপ-প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে গাজার হাসপাতাল ও শরণার্থী শিবিরগুলোয় বোমাবর্ষণের ঘটনার তদন্ত করারও দাবি করেছেন তিনি। খবর: রয়টার্স।
গাজায় অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১০ হাজার তিনশর বেশি ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ।
তাই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে এবং গাজায় হাসপাতাল ও শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলার তদন্ত করতে বেলজিয়াম সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বেলজিয়ামের উপ-প্রধানমন্ত্রী পেট্রা ডি সাটার।
বেলজিয়ামের গণমাধ্যম নিউজব্লাডকে উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময় এসেছে। নির্বিচারে বোমা হামলা চালানো অমানবিক। এটা স্পষ্ট, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক যে দাবি রয়েছে, সেটির প্রতি কোনো গুরুত্ব দেয় না ইসরায়েল।
প্রসঙ্গত, মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান
আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত ৭ অক্টোবর ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। এই হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে এক হাজার ৪০৫ ইসরায়েলি। নিহতদের মধ্যে তিন শতাধিক সেনাসদস্য রয়েছেন বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। হামাসের হামলায় আহত হয়েছেন আরও সাড়ে চার হাজার ইসরায়েলি। এছাড়া সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকসহ কমপক্ষে আরও প্রায় ২৫০ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ১০ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার শিশু এবং প্রায় তিন হাজার নারী রয়েছেন।
ডি সাটার বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উচিত অবিলম্বে ইসরায়েলের সঙ্গে তার সব সহায়তা চুক্তি ও কার্যক্রম স্থগিত করা। তিনি আরও বলেন, অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল থেকে পণ্য আমদানিতেও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা উচিত এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী সহিংস বসতি স্থাপনকারী, রাজনীতিবিদ ও সৈন্যদের ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা উচিত।
তার মতে, বেলজিয়ামের উচিত হামাসকে অর্থের প্রবাহ কমানোর পাশাপাশি বোমা হামলার তদন্তের জন্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জন্য তহবিল বরাদ্দ বৃদ্ধি করা। ডি সাটার বলেন, এটি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। সন্ত্রাসের জন্য অর্থ ব্যয় হয় এবং হামাসকে অর্থ সরবরাহকারী সংস্থা ও লোকেদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত।
অক্টোবরের শুরুতে ছড়িয়ে পড়া যুদ্ধ এখন দ্বিতীয় মাসে প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘ ও জি৭ দেশগুলো বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করার জন্য চলমান সংঘাতে মানবিক বিরতির আবেদন আরও জোরালো করেছে।
দীর্ঘ এক মাস ধরে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধও আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েল। এতে ফিলিস্তিনি নাগরিকরা খাদ্য, জ্বালানি, খাবার পানি ও ওষুধের সংকটে পড়েছেন। সব মিলিয়ে চরম মানবিক বিপর্যয়ে রয়েছে গাজার অন্তত ২০ লাখ মানুষ। হামলা থেকে বাঁচতে সবাই দক্ষিণের পথে পা বাড়ালেও জাতিসংঘ বলছে, গাজার কোনো জায়গায়ই নিরাপদ নয়। কেননা ইসরায়েলের আগ্রাসনে এবার আক্রান্ত হচ্ছে দক্ষিণ অংশও। গাজা অবরুদ্ধ করার আগে উপত্যকার বাসিন্দাদের উত্তর থেকে শুরু করে দক্ষিণে গিয়ে আশ্রয় নিতে বলেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে উত্তর গাজার অনেক বাসিন্দা প্রাণভয়ে দক্ষিণে পালিয়ে গেছে। কিন্তু সেখানে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ পায়নি তারা। সেখানেও একের পর এক হামলা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত পার হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই এই লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষের। এদিকে মিসরের সীমান্তঘেঁষা রাফাহ ক্রসিং খোলা হচ্ছে শর্তসাপেক্ষে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০