গণমাধ্যমে প্রায়ই সংবাদ প্রকাশিত হয়, ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে ভুঁইফোঁড় এনজিও কিংবা কো-অপারেটিভ সমিতি। ঋণ নেয়ার নির্ধারিত দিনে এসে গ্রাহক দেখেন কার্যালয় বন্ধ, লাপাত্তা কর্তাব্যক্তিরা।
কথিত এনজিও, ক্ষুদ্র ঋণদান সমিতি, কিংবা কো-অপারেটিভ ব্যাংক কোনো শহরের প্রান্তে শহরের ভাড়া বাসায় অফিস খুলে নেয়। এরপর শ্রমজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ সহযোগিতা দেয়ার কথা বলে দৈনিক জমা বা জামানত হিসাবে টাকা গ্রহণ করে। পরে ঋণ বিতরণের দিন ঘনিয়ে এলে সংস্থার লোকজন অফিস ফেলে পালিয়ে যায়। শত শত গ্রাহক ঋণ নিতে এসে ভবনটির সামনে ভিড় করতে থাকে। কিন্তু অফিসে কাউকে পাওয়া যায় না। এভাবে একই কায়দায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায়।
গতকাল শেয়ার বিজে ‘গ্রাহকদের টাকা নিয়ে লাপাত্তা: নিম্নবিত্তদের টার্গেট করে সমবায় সমিতির অবৈধ ব্যাংকিং’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদকের পাঠানো খবরে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরের নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সমিতি ও সমবায় সমিতির নামে চলছে প্রতারণা। এসব প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা ও সাধারণ মানুষকে উচ্চ সুদের লোভ দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে। এই আমানত নিজেদের অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে, কিংবা গ্রাহকদের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হচ্ছে। এতে নিম্নবিত্তরা প্রতারিত হচ্ছে।
সমবায় কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে নিবন্ধিত তিন হাজার ২৩৬টি সমবায় সমিতি থাকলেও বাস্তবে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। কেবল ইপিজেড ও বন্দর এলাকায় রয়েছে ৮৬৪টি সমিতি। শিল্পঘন এলাকাটিতে কয়েক লাখ শ্রমিক এবং পোশাক কারখানা বেশি থাকায় শ্রমিকের সংখ্যাও বেশি। মূলত শ্রমিকদের টার্গেট করেই সমবায় সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
চট্টগ্রাম মহানগরের ইপিজেড ১নং নেভি ওয়েলফেয়ার মার্কেটে একতা শ্রমজীবী কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামীয় সমবায় সমিতির কর্মচারীরা অন্তত দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছেন। প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধিত। জেলা সমবায় কর্মকর্তারা বলেন, সমবায় আইন অনুযায়ী, সমিতিগুলোর ব্যাংকিং করার সুযোগ নেই। তবে সমবায় বিধিমালায় সদস্যদের মধ্য থেকে স্থায়ী আমানত সংগ্রহ করার সুযোগ রয়েছে। ওই বিধিমালা ব্যবহার করে বিভিন্ন সমিতি ব্যাংকিং কার্যক্রম করছে।
প্রশ্ন ওঠে, সমবায় আইন অনুযায়ী সমিতিগুলোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ না থাকলেও কীভাবে একটি মহানগরে অবাধে অবৈধভাবে ঋণদানের জন্য সাধারণ মানুষকে প্ররোচিত করছে। এমন নয় এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম। কর্মকর্তারা কী বৈধ, কী অবৈধ তার বয়ান দিয়েছেন; কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে নিজেরা দায়িত্ব পালন করেননি। তারা জনগণকে সচেতন হতে বলেছেন, কিন্তু নিজেরা সচেতনতার পরিচয় দিতে পারেননি। যে এলাকায়ই হোক, এমন কার্যক্রম পরিচালনাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে, নইলে নতুন এলাকায় ভিন্ন নামে প্রতারণা শুরু করবে।