Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 12:55 am

সময় বাড়িয়েও লভ্যাংশ দেয়নি বিডি পেইন্টস

আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনি মার্কেটে (এসএমই প্ল্যাটফর্ম) তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিডি পেইন্টস লিমিটেড ঘোষণার পাঁচ মাসেও লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারেনি, যা তালিকাভুক্তির আইন লঙ্ঘন। কোম্পানিটির সময় গত ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়, পরে ডিএসইর কাছে সময় বাড়িয়ে মার্চ পর্যন্ত নেয়া হয়। কিন্তু মার্চ শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির লভ্যাংশ পায়নি বিনিয়োগকারীরা। তাই লভ্যাংশ নিয়ে কোম্পানিটির এ ধরনের প্রতারণার আইনি ব্যবস্থা ও কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য মতে, কোম্পানিটি গত বছরের ৩১ অক্টোবর ২০২১-২২ হিসাব বছরে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। সে সময় কোম্পানিটি জানায়, লভ্যাংশ শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য। কোনো উদ্যোক্তা বা পরিচালক এ লভ্যাংশ পাবেন না। সে ক্ষেত্রে কোম্পানির মোট ৬ কোটি ২০ লাখ শেয়ারের মধ্যে ১ কোটি ৯৫ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০টি শেয়ার উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ার সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে, যার বিপরীতে কোম্পানিকে ৪ কোটি ২৪ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এদিকে কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার পর গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এরপরে আরও তিন মাস চলে গেলেও কোম্পানিটি লভ্যাংশ বিতরণ শেষ করতে পারেনি। সে বিষয়ে কোম্পানিটি ঘোষণার পাঁচ মাস এবং এজিএমের তিন মাস পরেও ঘোষণাকৃত লভ্যাংশ বিতরণ করেনি বলে জানা যায়।

এদিকে এসএমই তালিকাভুক্ত আইনে লভ্যাংশ বিতরণের বিষয়ে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা বা অনুমোদনের পরবর্তী ২২ কার্যদিবসের মধ্যে বিতরণ শেষ করতে হবে। সেক্ষেত্রে কোম্পানি আইন পরিপালনে ব্যর্থ হলে এক্সচেঞ্জ এ ধরনের লঙ্ঘনের সত্যতা আগে নিশ্চিত করবে। পরে এ বিষয়ে সত্যতা এবং কোম্পানির নাম নোটিশের বা অনলাইন সংবাদের মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ সবাইকে জানিয়ে দেবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোম্পানি বা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। সর্বশেষ লভ্যাংশ পাওয়ার যোগ্য বিনিয়োগকারী নির্ধারণে কোম্পানির রেকর্ড ডেট ছিল ২৩ নভেম্বর, সেদিন কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ ছিল। এরপর ২৭ নভেম্বর থেকে কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন পুনরায় শুরু হয়।

এ বিষয়ে জানতে শেয়ার বিজ থেকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল খান এবং সচিব মামুন উর রশিদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। পরে তাদের হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ দেয়া হলেও তারা উত্তর দেননি।

জানতে চাইলে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি নির্দিষ্ট সময়ে লভ্যাংশ বিতরণ করে না, তাদের বিষয়ে নন-কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদন তৈরি করে বিএইসিতে জমা দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে অনেক কোম্পানি সময় নিয়ে থাকে, যেমনটি বিডি পেইন্টস নিয়েছিল। কোম্পানিটির লভ্যাংশ বিতরণের শেষ সময় ছিল ফেব্রুয়ারি। তারা সময় বাড়িয়ে মার্চে দেয়ার বিষয়ে বলে। কিন্তু তারা যে এখনও লভ্যাংশ বিতরণ করেনি এ বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়ে শিগগিরই একটি চিঠি পাঠাব। পরে কোম্পানির বক্তব্য নিয়ে বিএসইসিতে একটি নন-কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৩০ জুন ২০২২ শেষে কোম্পানিটির কর পরিশোধের পর ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছে। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৯৭ পয়সা। আগের বছর কোম্পানিটির কর পরিশোধের পর মুনাফা ছিল ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ইপিএস ছিল ৬৩ পয়সা। ৩০ জুন ২০২১ সমাপ্ত সময়ে কিউআই পরবর্তী শেয়ার হিসেবে কোম্পানির ইপিএস ছিল ৭৮ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য হয়েছে ১৫ টাকা ৯৪ পয়সা। কিউআই পরবর্তী শেয়ার হিসেবে কোম্পানির এনএভি হয়েছে ১৪ টাকা ৭৯ পয়সা।

উল্লেখ, কোম্পানিটি ডিএসইর এসএমই প্লাটফর্মে গত বছর ১৪ জুন থেকে লেনদেন শুরু করে। গত বছর ১২ এপ্রিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানিটির আবেদন অনুমোদন করে।

সূত্র জানায়, কোম্পানিটি কিউআইও’র মাধ্যমে অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দামে ১ কোটি ২০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে। এর মাধ্যমে বাজার থেকে ১২ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। কিউআইও’র মাধ্যমে উত্তোলন করা টাকা ভবন নির্মাণ, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সংগ্রহ ও স্থাপন, চলতি মূলধন এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করবে বলে জানায় কোম্পানিটি। এছাড়া এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেনের তারিখ থেকে পরবর্তী ৩ বছর ইস্যুয়ার কোম্পানিটি কোনো বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারবে না বলে জানানো হয়।