‘১৪ বছর আগের তারিখে ৮০ জনের পদোন্নতি’ শিরোনামে যে খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। বিস্তারিত প্রতিবেদনে আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, ২০০০ সালে ৮০ জন কর্মচারী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরে (ডিএফআইই) যোগ দিয়েছিলেন তৃতীয় শ্রেণির পদে। এর ১৪ বছর পর পদোন্নতি তথা দ্বিতীয় শ্রেণিতে তারা উন্নীত হন ২০১৪ সালে। একে অস্বাভাবিক বলা যায় না। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, আদালতে ২০১৪ সালের পদোন্নতিকে ২০০০ সাল থেকেই কার্যকরের আবেদন জানিয়েছিলেন তারা; সম্প্রতি এর পক্ষে রায়ও মিলেছে হাইকোর্ট থেকে। এখন ১৪ বছর আগের তারিখে পদোন্নতি দেওয়া হলে মোট চাকরিকাল গণনায় আরও একাধিক পদোন্নতি প্রাপ্য হয় তাদের। সেক্ষেত্রে সংস্থাটির প্রথম শ্রেণির পদ তথা সহকারী মহাপরিদর্শকে (সাধারণ) আসীন হওয়ারও সুযোগ পাবেন তারা। খেয়াল করার বিষয়, মূলত রানা প্লাজার মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকে অধিদফতরটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্দেশ্যে অধিকতর মেধাবী কর্মকর্তা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ৩৩তম বিসিএস থেকে পরবর্তী বিভিন্ন বিসিএস, এমনকি সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমেও নিয়োগ দেওয়া হয় এ সহকারী মহাপরিদর্শক (নন-ক্যাডার) পদে। এখন পূর্বোক্ত তৃতীয় শ্রেণিতে নিয়োগকৃত ব্যক্তিদের তাদের সমতুল্য পদে বসানো হলে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি তো হবেই, সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ ও পারস্পরিক বিদ্বেষ বিরাজ করতে পারে, যা অধিদফতরটির সুষ্ঠুভাবে ক্রিয়াশীল থাকার পথে অন্তরায়। আরেকটি বিষয়, এ ধরনের জটিলতা সরকারের একাধিক প্রতিষ্ঠান, এমনকি কোনো কোনো সাংবিধানিক সংস্থায়ও লক্ষণীয়। ফলে ইস্যুটিকে কেবল ডিএফআইই’র সমস্যা হিসেবে নয়, বরং সামগ্রিকভাবে দেখাই বাঞ্ছনীয়।
যেসব কর্মচারী তৃতীয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হতে যাচ্ছেন বলে খবর রয়েছে, তারা হয়তো যুক্তি দেখাবেন, তারা ওই পদে ভ‚মিকা রাখার উপযুক্ত। দীর্ঘদিন একই ক্ষেত্রে কর্মরত থাকার পর তাদেরও চলনসই দক্ষতা গড়ে উঠেছে নিশ্চয়। কিন্তু এভাবে পদোন্নতি দেওয়া হলে প্রশাসনিক সুসমতা বিঘিœত হয়; চাকরিক্ষেত্রে অন্যায্য পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তাছাড়া দুর্নীতি যেমন ওপর থেকে নিচে নামে, তেমনি নিচ থেকে ওপরে ওঠে বৈকি। এক্ষেত্রে তৃতীয় থেকে সরাসরি প্রথম শ্রেণিতে পদোন্নতি তৃতীয় শ্রেণির দুর্নীতিকে প্রথম শ্রেণির দুর্নীতিতে পরিণতকরণের শঙ্কা তৈরি করে। প্রশ্ন হলো, উদ্ভ‚ত পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী কে? এজন্য আদালতকে কোনোভাবেই দোষারোপ করা যায় না। কেননা আদালত আইনানুগ বিচার ও এর ব্যাখ্যাদাতা। দায় বরং কিছুটা গড়াবে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (বিপিএসসি) ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওপর। সেজন্য তাদের ওপর সরকারকে খড়গহস্ত হওয়ার পরামর্শ দিই না আমরা। কেননা সমস্যাটি জটিল। এর গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করা সহজ নয়। তাছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সংস্থার অর্গানোগ্রামে পরিবর্তনের কাজ এত দ্রæত করা হয় যে, সব দিকে সমানভাবে মনোযোগ দেওয়াও সম্ভব হয় না নীতিনির্ধারকদের, যার প্রভাব দৃষ্ট হয় পরে। এদিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পদে চাকরিতে নিয়োগের শর্তাবলিতেও কিছু শৈথিল্য থাকে, ফলে মাঝেমধ্যে ক্ষতির শিকার হয় প্রথম শ্রেণির পদটি। আর উভয় প্রকার দুর্বলতায় পানি ঘোলা হয়ে ওঠে, সে সুযোগে মাছ শিকারে ব্যাপৃত হয় সুযোগসন্ধানীরা। পদোন্নতি চাকরির অপরিহার্য শর্ত বৈকি। এর বিরোধিতা করবেন না কেউ। কিন্তু পদোন্নতি যেন অন্যায়ভাবে না ঘটে এবং তা নিয়ে ‘বাণিজ্য’ না হয়, সেদিকে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।