সমস্যায় জর্জরিত চট্টগ্রামের অক্সিজেন কারখানাগুলো

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে উপকূলজুড়ে জাহাজ ভাঙা শিল্পকে কেন্দ্র করে এক দশক আগে গড়ে উঠেছে ১৫টির বেশি অক্সিজেন কারখানা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কভিট ও অর্থনৈতিক মন্দা, পুরোনো জাহাজ আমদানি কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ, ঋণখেলাপি ও নানা সংকট এবং বড় ইস্পাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিজ উদ্যোগে অক্সিজেন উৎপাদন করায় সংকুচিত হয়েছে শিল্প খাতে অক্সিজেন গ্যাসের ব্যবহার। এর মধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে বেশিরভাগ অক্সিজেন উৎপাদনকারী কারখানা মালিকদের উদাসীনতা ও অপব্যবস্থাপনায় অগ্নিঝুঁকিতে আছে।

স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটা, ইস্পাতশিল্পে রড উৎপাদনে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। এ শিল্প খাতগুলোতে অক্সিজেনের চাহিদা বেশি থাকায় সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন কারখানা গড়ে তোলা হয়। তবে বর্তমানে দেশে পুরোনো জাহাজ আমদানি ৮০ শতাংশের বেশি কমেছে। অপরদিকে ইস্পাত শিল্পের বড় বড় প্রতিষ্ঠান নিজেদের খরচ কমানোর জন্য নিজেরাই অক্সিজেন কারখানা স্থাপন করেছে। ব্যবসায়িক ব্যর্থতায় একের পর এক ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই অক্সিজেন কারখানাগুলোর মালিকরা কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলো হলোÑব্রাদার্স, রিগ্যাল, ফয়জুন, সীমা, রুবাইয়া, মানতি, মদিনা, এআরএল ও এসএল অক্সিজেন লিমিটেডের কারখানা। এ তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলো সীমা অক্সিজেন। 

সম্প্রতি সীতাকুণ্ডে সীমা গ্রুপের অক্সিজেন প্লান্ট বিস্ফোরণের ঘটনার পর সীতাকুণ্ডে গড়ে ওঠা ১৫টি অক্সিজেন প্লান্ট পরিদর্শনের পর ১৩টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন দল বলেছে, ঝুঁকিতে থাকা ১৩টি কারখানা হলো লিন্ডে, ব্রাদার্স, অক্সিকো, কবির অক্সিজেন, আবুল খায়ের স্টিলের অক্সিজেন প্লান্ট, কেআর অক্সিজেন, গোল্ডেন অক্সিজেন, অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন, সুবেদার অক্সিজেন, মাস্টার স্টিল অ্যান্ড অক্সিজেন, মানতি স্টিল অ্যান্ড অক্সিজেন, শীতলপুর অক্সিজেন ও রিগ্যাল অক্সিজেন লিমিটেড। এর মধ্যে কেআর অক্সিজেন, সুবেদার অক্সিজেন এবং মাস্টারস্টিল অ্যান্ড অক্সিজেন ফায়ার সেফটি প্লান্ট অনুমোদন নিয়েছে। কিন্তু এখনও তারা বাস্তবায়ন শুরু করেনি। অপর ১০টি প্রতিষ্ঠানের কারও ফায়ার সেফটি প্লান্ট নেই। এমনকি এসব অক্সিজেন প্লান্টের অধিকাংশে ফায়ার হাইড্রেন্ট নেই। নিজস্ব কোনো পানির উৎস নেই। পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই। এছাড়া ১৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটিতে বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বাকি দুটি প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ অক্সিজেন লিমিটেড ও বিএসআরএম অক্সিজেন রিজার্ভার ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় নেই।

এর মধ্যে তারা যদি ফায়ার সেফটি প্লান্ট বাস্তবায়ন না করে, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে শাস্তি অথবা জরিমানার ব্যবস্থা করব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেয়ার বিজকে বলেন,      ‘করোনা সংক্রমণের পর থেকে দেশের ব্যবসা ও বাণিজ্যে গতি কমেছে। বড় ইস্পাত কারখানাগুলো নিজস্ব ব্যবহারে অক্সিজেন উৎপাদন করছে। আবার বেশ কয়েকটা প্রতিষ্ঠান খেলাপি হয়ে ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়েছে। সব মিলিয়ে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে অক্সিজেন উৎপাদন নিয়মিত করা সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খোঁজ নিলে দেখবেন গত দুই বছরে ১০টির বেশি অক্সিজেন কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। যার সর্বশেষ সংযোজন হলো ব্রাদার্স অক্সিজেন, এআরএল অক্সিজেন ও সীমা গ্রুপের দুই অক্সিজেন কারখানা। এ কারখানাগুলো গত ছয় মাসের মধ্যে বন্ধ হয়েছে। আর যেগুলো চালু আছে বেশিরভাগ কারখানা উৎপাদন সক্ষমতার ৫০ শতাংশের নিচে উৎপাদনে আছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০