Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:17 pm

সমস্যা আর নকলের ঘেরাটোপে মণিপুরি তাঁতশিল্প  

ইয়াহ্ইয়া মারুফ: তাঁত কাপড়ের তৈরি শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি কিংবা ফতুয়া যা-ই হোক না কেন, তা অনায়াসেই মানিয়ে যায় আমাদের দেশের আবহাওয়ায়। এক্ষেত্রে দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে মণিপুরি তাঁতে তৈরি পোশাক।

সিলেট শহরের মণিপুরি মেয়েরা বাড়িতে বসে তাঁতে বুনে থাকেন শাড়ি, বিছানার চাদর, সালোয়ার-কামিজ, শাল, ওড়না, ব্লাউজ পিস প্রভৃতি। মণিপুরি এলাকার প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে অন্তত একটি হলেও কাপড় বোনার হস্তচালিত তাঁত দেখতে পাওয়া যাবে। তাদের বুননে রঙ আর নকশায় রয়েছে এক চমৎকার সমন্বয়। বৈচিত্র্য ও আরামের কারণে অনেকের পছন্দ তাদের তৈরি তাঁতপণ্য।

মণিপুরি শাড়ির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গাঢ় বা হালকা যে রঙেরই শাড়ি হোক না কেন, পাড়ের রঙ হবে গাঢ়। সাধারণত পাড়ের নকশাটি হয়ে থাকে ত্রিভুজাকৃতির আর শাড়ির ভেতরে থাকে হালকা সুতায় বোনা লতাপাতা। নকশাটি মণিপুরিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। মণিপুরি শাড়িগুলো গায়ে হলুদ, মেহেদি লাগানোর উৎসব, পয়লা বৈশাখ কিংবা পয়লা ফাল্গুনে পরার জন্য উপযুক্ত। চাদর বা শাল বোনা হয়ে থাকে অপেক্ষাকৃত মোটা সুতা দিয়ে। সিলেট অঞ্চলে মণিপুরি বস্ত্র সহজপ্রাপ্য। এর বাইরে ঢাকা ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে খুব সহজে মণিপুরি সামগ্রী পাওয়া যায় না।

এত গুণ থাকা সত্ত্বেও মূলধনের অভাবে মণিপুরিপাড়ার অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিতে চান। সিলেটের পাশাপাশি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মণিপুরি সম্প্রদায়ের সবাই একসময় তাঁতশিল্পের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। এখন তারা সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা পান না বললে চলে। তাছাড়া উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিকায়ন না করা হলে তাদের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়তে পারে। হাতে তৈরি তাঁতপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেকের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে। এছাড়া নকল কাপড়ের আধিপত্যও তো রয়েছেই।

সরকারি ঋণ সুবিধার সঠিক বণ্টনের মাধ্যমে এ শিল্প ফিরে পেতে পারে তার আগের অবস্থা। একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে ১০০ মণিপুরি নারী তাঁতশিল্পী ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। ২০১৪ সালের অক্টোবরে তারা গড়ে তুলেছেন ‘মোইরাং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের নামে সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ ফরহাদ খাঁ পুলের পাশে নিজস্ব বিপণন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মণিপুরি নারীদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে। তাদের সহায়তা করছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্সফাম ও এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (একডো)।

উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বাজারে প্রাপ্ত পণ্যগুলোর অধিকাংশই পলিয়েস্টার বা টেট্রন সুতা দিয়ে তৈরি। কিন্তু ‘মোইরাং’ থেকে উৎপাদিত সব পণ্যই শতভাগ সুতির সুতা দিয়ে তৈরি হওয়ায় সব ঋতুতে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করা যায়।

ফেসবুকে গড়রৎধহম নামে একটি পেজ খোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ কাপড় কিনতে পারবেন।