সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী পেশা। এটি সামাজিক বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। বৈশ্বিকভাবে সমাজকর্মের রয়েছে বিশাল কদর ও গ্রহণযোগ্যতা। সমাজকর্ম বিষয়ের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে বৈচিত্র্যময় শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সমাজকর্ম শিক্ষার্থীদের পরিচয় করে দেয়া। কারণ সমাজকর্ম বিষয়ে পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী নানামুখী বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে। সমাজকর্ম বিষয়ে পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী অর্থনীতি, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, দুর্যোগব্যবস্থা, পরিসংখ্যান, কমিউনিটি মেডিসিনসহ আরও অনেক মানবিক, বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শাখার বিষয়ে সমন্বিত জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে একজন দক্ষ সমাজকর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। একজন সমাজকর্মী একটি সমাজে বিভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন। যেমন একজন সমাজকর্মী সমাজে উন্নয়নকর্মী, পরামর্শক, স্বাস্থ্যকর্মী, মনোবিজ্ঞানী, জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা, জনসংযোগ কর্মকর্তা, মানবাধিকার কর্মী, গবেষকসহ আরও অনেক চতুর্মুখী ভূমিকা দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
সমাজকর্ম বিষয়ের সার্থকরূপ প্রতীয়মান হয় আন্তজার্তিক ক্ষেত্রে। কারণ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় সমাজকর্ম একটি পেশা হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার করার পরও সমাজকর্ম আমাদের দেশে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর ন্যায় এখনও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি অর্জন করতে পারেনি। বাংলাদেশে সমাজকর্ম শিক্ষা প্রচলনের অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এর প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি বা পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। যদিও ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সরকারের সমাজসেবা বিভাগে ‘সমাজসেবা কর্মকর্তা’ পদটি সমাজকল্যাণ বা সমাজকর্মের স্নাতকদের জন্য সংরক্ষিত ছিল, যা পরে সবার জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়। মূলত তখনই এক প্রকার বলা যায় সমাজকর্মের স্বীকৃতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি খুবই শোচনীয় সমাজকর্ম স্নাতকদের জন্য। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকা, জার্মানি, ইউকেসহ প্রভৃতি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশাপাশি সমাজকর্মও সমানভাবে স্বীকৃত ও সর্বজনবিদিত।
আমাদের দেশে সমাজকর্ম স্নাতকধারীদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। একজন সমাজকর্মী তার অর্জিত, শিক্ষা, জ্ঞান, কলাকৌশলের সার্বিক প্রয়োগ করে দলমত নির্বিশেষে।
ক্রমাগত পরিবর্তনশীল উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে একজন গতিশীল সমাজকর্মী সমাজের ব্যবস্থার সমস্যার সুন্দর নিরূপণ করে সমাজের চিত্র পাল্টে দিতে পারে। সে জন্য আমাদের দেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, পরিবার ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রমুখ মন্ত্রণালয়গুলোতে বিশেষ ব্যবস্থায় সমাজকর্ম স্নাতকদের নিয়োগ প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি। যেখানে শুধু সমাজকর্ম বিষয়ে গ্র্যাজুয়েটপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা মূল অগ্রাধিকার পাবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও বিশ্বায়নের এই যুগে সমস্যার অন্ত নেই। সময় যখন দিন দিন আধুনিক থেকে আধুনিকতর হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে। সেখানে সমস্যা সমাধানের জন্য দক্ষ সমাজকর্মী তৈরি করার উৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে এখনই। আর সে জন্য সমস্যা সমাধান এর বৈজ্ঞানিক গবেষণামুখী ও পরিপূর্ণ উন্নত রাষ্ট্র গঠনের প্রয়োজন বিধায় স্নাতকধারী দক্ষ সমাজকর্মীকে যথাযথ মূল্যায়ন করা ও সমাজকর্মের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া সময়ের অন্যতম সেরা দাবি। এই বিষয়ে সরকার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানাই।
শাহ মুনতাসির হোসেন মিহান
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়