সমাজ উন্নয়নে চাই দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা

রোমান মিয়া: মানুষ সামাজিক জীব। মানুষের সামাজিক হওয়ার স্বাভাবিক ইচ্ছা আছে। সমাজ মানুষকে নানাভাবে নির্ণয় করে থাকে তার মধ্যে প্রধানতম হলো সাফল্য। সমাজে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তখনই বজায় থাকে যখন সে তার শিক্ষা ও দক্ষতাভিত্তিক জ্ঞানার্জন করে সমাজে নিজেকে সফল ও সার্থক বলে প্রমাণিত করতে পারে। মানবতার শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে পারে। সমাজে সভ্যতা ও আধুনিকতা বিকাশে শিক্ষা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন দক্ষতা ভিত্তিক জ্ঞানার্জন। শিক্ষা সামাজিক উন্নয়নে স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত হলেও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা জাতিকে একত্রিত করে। চূড়ান্ত সাফল্য বয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। শিক্ষা ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্প্রদায়ের উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হলেও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা আমাদের প্রতিবাতে পূর্ণরূপে বিকাশ করতে এবং আমাদের নিজেদের জীবনের দায়িত্ব ও ব্যক্তিগত লক্ষ্যসহ আমাদের সৃজনশীল সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে সক্ষম করে।

দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা শিক্ষার্থী ও সমাজের সদস্য হিসেবে তাদের স্বাভাবিক সম্ভাবনা অর্জনের জন্য তাদের সমস্ত বৈশিষ্ট্য ও দক্ষতা বিকাশে সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা করে থাকে। দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা বলতে আমরা বুঝি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে কী কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আনতে চায় তা পর্যবেক্ষণ করা। শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি উচ্চমান নির্ধারণ করা এবং তাদের দিকে কাজ করতে সহায়তা করা। জ্ঞান অর্জন করা এবং তা অনুশীলন করা। তা শেখার জন্য মৌলিক বিষয় হলেও শেখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো আপনি ইতোমধ্যে যা জানেন তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা।

ঐতিহ্যগতভাবে, শিক্ষা বৃহত্তর জ্ঞানের পথ অনুসরণ করেছে কিন্তু, তা সত্ত্বেও দক্ষতার ঘাটতি দেখা দিলে, শিক্ষকদের সমাধান করার জন্য অবশ্যই নতুন উপায় খুঁজে বের করতে হবে। বেশিরভাগ শিক্ষাবিদ আজ জ্ঞান এবং দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার পক্ষে। কিন্তু, কার্যকরভাবে শেখানোর জন্য এই দুটি পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য বোঝা অপরিহার্য। এগুলোকে কীভাবে প্রয়োগ করা যায় তা জেনে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ যা শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি উপকৃত করে।

জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা বনাম দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা জ্ঞান হলো কোনো কিছুর তাত্ত্বিক উপলব্ধি, যা বক্তৃতা এবং পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে অর্জিত হয়। জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা শিখার পরবর্তী পর্যায়ে অগ্রসর হওয়ার আগে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পড়া, শোনা এবং দেখাকে বোঝায়। কিন্তু দক্ষতা অর্জন করা যেতে পারে। তার জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ এবং ব্যবস্থাপনা। কিছু আয়ত্ত করার সর্বোত্তম উপায় হলো নিয়মিত অনুশীলন করা।  দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার লক্ষ্য একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ব্যবহারিক দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা। দক্ষতা বৃদ্ধির কতিপয় অনেক বিষয় রয়েছে, যে বিষয়গুলো একজন শিক্ষার্থীকে দক্ষ করে তোলে এবং বাস্তব জীবনে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মোকাবিলা করতে সক্ষম করে তোলে। যেমন: নমনীয়তা দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের হাতে শেখার মালিকানা দেয় এবং তাদের বোঝার বড় ব্যবধান ও সীমাবদ্ধ করতে সহায়তা করে থাকে। বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নের পরিবর্তে তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করে। যার ফলে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার পুরো কাঠামোটি নির্ভর করে সেই ব্যক্তির ওপর, যেখানে শিক্ষার্থীরা মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে তাদের হাতেকলমে শিক্ষার  মাধ্যমে।

বলা যায়, অভিজ্ঞতা অর্জন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে সফল নেতা হওয়ার জন্য তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়াটিকে সহজতর করার জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানার্জনের বাইরে চিন্তা করার সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে।

আবার, উদ্দেশ্যচালিত দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা অবশ্যই আরও কার্যকর। উদ্দেশ্যচালিত যা শিক্ষার্থীদের করে প্রাণবন্ত এবং সংস্কৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠার প্রয়োজনীয় স্পষ্ট ধারণা পেতে সাহায্য করে, যা দক্ষতা অর্জনে এটি একটি দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করে। শিক্ষার্থীদের  মতামত, মূল্যবোধ এবং রুটিনের একটি নিখুঁত মিশ্রণ হলো উদ্দেশ্যচালিত জীবন পরিচালনা করা, দক্ষতা শেখার ও বিকাশের শিল্পকে প্রচার করা, যা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সফল হওয়ার ক্ষমতা তৈরি করে।

একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে পারি। অর্থাৎ একটি প্রকল্প শুরু করার আগে একজন কাঠমিস্ত্রির ব্ল–প্রিন্টগুলো কীভাবে পরিমাপ করা যায় ও পড়তে হয় তার পটভূমির জন্য জ্ঞান প্রয়োজন। যে জ্ঞান বিভিন্ন প্রকল্পের কজে সাহায্য করতে পারে কিন্তু এ জ্ঞান কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই একজন কাঠমিস্ত্রিকেও নির্দিষ্ট কাজগুলো সম্পাদন করার জন্য দক্ষতা বিকাশ করতে হবে। 

যেমন

একটি রান্নাঘরের ক্যাবিনেট তৈরি করা বা একটি বইয়ের টেবিল তৈরি করা। আপনি এ উদাহরণ থেকে দেখতে পাচ্ছেন, কোনো কিছু সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আপনাকে এতে দক্ষ করে তোলে না। একইভাবে কোনো কিছুতে দক্ষ হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আপনার কাছে এটির দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত জ্ঞান রয়েছে। কাঠমিস্ত্রির উদাহরণ এই দুটি শেখার পদ্ধতির মধ্যে একটি খুবই স্পষ্ট পার্থক্য প্রদান করে থাকে যে, প্রারম্ভিক শৈশবের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে একজন শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে যে জ্ঞান অর্জন করেছে তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা। জ্ঞানভিত্তিক এবং দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার এই সংমিশ্রণ শিক্ষার্থীদের যেন স্বাধীন চিন্তাবিদে রূপান্তরিত করতে পারে এবং ভবিষ্যতে তারা যে চ্যালেঞ্জগুলো মুখোমুখি হতে পারে তার জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করবে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা।

দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষায় জাতিকে শিক্ষিত করে দেশের জনগণকে জনসম্পদে রূপান্তর করে সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারে। তাই বলা যায়, সমাজ উন্নয়নে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার প্রয়োজন অনস্বীকার্য।

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০