সমাপনীর পথে বাণিজ্যমেলা : রফতানি আদেশের দেখা নেই

 

জাকারিয়া পলাশ: আর মাত্র তিনদিন পরই শেষ হচ্ছে বাণিজ্যমেলা। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য পূরণে তেমন একটা সাড়া মেলেনি বলে মনে করছেন রফতানি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। মেলা শেষেই এ-সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সংশ্লিষ্টরা।

মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় বরাবরের মতো দেশি ক্রেতার বিপুল সমাগম হয়েছে। রফতানির জন্য নতুন যোগাযোগ সৃষ্টির সুযোগ হয়নি। এ কারণে মেলার মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

মেলায় স্থাপিত আকতার ফার্নিচারের মার্কেটিং ও বিক্রয় কর্মকর্তা ইমরান বলেন, ‘মাসব্যাপী মেলায় আমাদের প্যাভিলিয়নে মাত্র দুজন বিদেশি এসেছিলেন। তারা অন্য পণ্যের সন্ধান করছিলেন। আসলে মেলায় আমরা দর্শনার্থী পেয়েছি। কাস্টমার পাইনি।’

ব্রাদার্স ফার্নিচারের সহ-ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) এবিএম সাজ্জাদ হোসেন সেলিম বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির পণ্য কানাডা, আরব আমিরাত ও অস্ট্রেলিয়ায় রফতানি হয়। কিন্তু বাণিজ্যমলায় কোনো বিদেশি ক্রেতা আমাদের প্যাভিলিয়নে আসেননি।’

তানিন বাংলাদেশ মার্কেটিং করপোরেশনের সহ-ব্যবস্থাপক (করপোরেট) মো. মামুন মাসুদ অবশ্য বলেছেন, ‘রফতানির কিছুটা সুযোগ এলেও আমাদের কোম্পানি এখনও রফতানির জন্য প্রস্তুত নয়।’ তিনি বলেন, ‘ভারতের উত্তর-পূর্ব এলাকা থেকে বেশ কিছু ক্রেতা এসেছিলেন আমাদের প্যাভিলিয়নে।’

এদিকে মেলায় সর্ববৃহৎ প্যাভিলিয়ন স্থাপন করেছে ওয়ালটন। প্রতিষ্ঠানটির টিভি-ফ্রিজসহ প্রায় ৫৬টি পণ্য রয়েছে মেলায়। প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু পণ্য মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি করে থাকে। মেলায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বলছেন, বিদেশি পরিদর্শকের সংখ্যা খুবই সামান্য।

এ প্রসঙ্গে ওয়ালটনের প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ মো. শফিকুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে কয়েকজন ভিজিটর এসেছিলেন। তবে মেলায় সরাসরি রফতানি হয় না। এক ধরনের সম্পর্ক স্থাপন হয়ে থাকে। পরে অনেকে যোগাযোগ করতে পারে। মেলা শেষেই রফতানি আদেশের কোনো হিসাব দেওয়া কঠিন।’

উল্লেখ্য, প্রতি বছরই মেলা শেষে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো থেকে একটি হিসাব দেওয়া হয়। তাতে বাণিজ্যমেলার মাধ্যমে প্রাপ্ত রফতানি আদেশের পরিমাণ বলা হয়। সূত্রমতে, গত ২০১০ সালে ২২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, ২০১১ সালে ২৫ কোটি, ২০১২ সালে ৪৩ কোটি ১৮ লাখ, ২০১৩ সালে ১৫৭ কোটি টাকার রফতানি আদেশ আসে। ২০১৪ সালে রফতানি আদেশের পরিমাণ কম ছিল। সে বছর ৮০ কোটি এবং ২০১৫ সালে ৮৫ কোটি টাকা রফতানি আদেশ আসে। গত ২০১৬ সালে রফতানি আদেশ আসে ২৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এবারের মেলায় গত বছরের চেয়ে রফতানি আদেশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছিল।

এদিকে বাণিজ্যমেলায় রফতানির সুযোগ কমে যাওয়ায় অনেকে মেলার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন। এ প্রসঙ্গে মেলার শুরুর দিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, ‘বাণিজ্যমেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশি-বিদেশি ভোক্তাদের বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে পরিচিত করা, সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিত্যনতুন এবং অধিকতর মানসম্মত পণ্য নিয়ে ভোক্তার মুখোমুখি করা, বাংলাদেশের তুলনামূলক অবস্থান ও সুবিধা সম্পর্কে বিদেশি অংশগ্রহণকারী ও পরিদর্শনকারীদের সম্যক ধারণা দেওয়া।’

টেক্সটাইল খাতের অপর একটি প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন পরিচালক বলেছেন, ইপিবি কীভাবে হিসাব করে তা আমি জানি না। তাদের হিসাবে রফতানি হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু আমদের প্যাভিলিয়নে কোনো বিদেশি আসেনি। আমরা কোনো রফতানি আদেশ পাইনি। এছাড়া মেলায় প্রায় ৪০টি প্যাভিলিয়ন ও স্টলে বিদেশি প্রতিষ্ঠান পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করছে। কিন্তু তার মাধ্যমে দেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বিদেশি উদ্যোক্তাদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। বাণিজ্যমেলায় রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ কম বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে ইপিবির উপপরিচালক (অর্থায়ন) মোহাম্মদ রেজাউল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার দায়িত্বের অংশ নয়। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’

ইপিবির পরিচালক (তথ্য) মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রতিবার মেলার সময় একটা কমিটি করা হয়। ওই কমিটি রফতানি আদেশের তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করে। তারা মেলার সব স্টল ও প্যাভিলিয়নে গিয়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। শেষের দিকেই এটা অনুসন্ধান করা হয়। সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনা করে মেলা শেষে মোট রফতানি আদেশের একটা হিসাব দেওয়া হয়।’

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০