নিজস্ব প্রতিবেদক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশে সরকারের সমালোচনা অবশ্যই হবে। তবে তা যদি দেশ বিধ্বংসী সমালোচনা হয়, সেটি কাম্য নয়। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনির্মাণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমকে দেশের ইতিবাচক দিক বহির্বিশ্বে তুলে ধরতে হবে। দেশকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই।
হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে কোনো নেতিবাচক খবর বাইরের দেশের গণমাধ্যম যত বড় করে প্রকাশ করে তার চেয়ে কয়েকগুণ বড় করে প্রকাশ করে দেশের গণমাধ্যম। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। আন্তর্জাতিক কোনো ভুঁইফোঁড় সংগঠন বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক খবর করলে দেশীয় গণমাধ্যম সেটি ফলাও করে প্রচার করে।
তি?নি বলেন, সংবাদ অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে সেটি যেন নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে। বিএনপি সারাক্ষণ দেশকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরতে ব্যস্ত। তাদের দলের নেতা বিদেশে বসে তাদের পেইড এজেন্ট দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। আর কিছু ভুঁইফোঁড় অনলাইনের মাধ্যমে অপপ্রচার চালায়। সেই অপপ্রচারে আমাদের দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হয়। এগুলো কিন্তু দেশের ভাবমূর্তি বিনির্মাণের জন্য বড় অন্তরায়। এগুলোর বিরুদ্ধে মেইনস্ট্রিম মিডিয়াকে কাজ করতে হবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নাই। দেশকে পজিটিভলি তুলে ধরতে হবে। দেশকে পজিটিভলি তুলে ধরার ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি এখন শুরু করেছে ভারতীয় পণ্য বর্জন। নেতারা সন্ধ্যায় ভারতীয় পেঁয়াজ দিয়ে পেঁয়াজু খায়, রাতে ভারতীয় গরুর মাংস দিয়ে সাহরি খায়। বউকে নিয়ে যখন বাইরে যায় তখন বউ ভারতীয় শাড়ি পরে বের হয়। আর ওনারা (বিএনপি) বলে ভারত বর্জনের কথা।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) এই ধরনের রাজনীতি দেশের জন্য কোনো মঙ্গল বয়ে আনে না। সরকারে থাকলে সমালোচনা হবেই। সমালোচনাহীন সমাজ তো গণতান্ত্রিক সমাজ হতে পারে না, বহুমাত্রিক সমাজ হতে পারে না। কিন্তু তা যখন দেশ বিধ্বংসী সমালোচনা হয়, সেটি কখনও কাম্য নয়।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশকে নেতিবাচকভাবে বিশ্ব পরিমণ্ডলে তুলে ধরা কিছু ব্যক্তি বিশেষের পেশায় রূপান্তরিত হয়েছে। এটি করে তারা তহবিল সংগ্রহ করে এবং সেই তহবিল নিজেদের মতো খরচ করে। দেশের কোনো কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বাংলাদেশকে এমন নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে, সেটি কিন্তু পরে ক্ষতি হয়। কোনো নেতিবাচক সংবাদ যদি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় সেটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যত কলেবরে প্রচারিত হয়, তার থেকে চারগুণ বেশি কলেবরে আমাদের দেশে প্রকাশ করে।’
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ভারতের কাশ্মীরে যখন পাকিস্তানি সৈন্যের আক্রমণে ভারতীয় সৈন্যরা হতাহত হলো তখন ভারতের প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী সোনিয়া গান্ধী সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিলেন যে এই সংকট মোকাবিলায় আমরা সরকারের পাশে আছি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও সরকারের পাশে থাকার অভিপ্রায় ব্যক্ত করল। আর আমাদের দেশে যখন পাশের দেশ মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা পালিয়ে আসে, তখন বিএনপি নেতারা বিবৃতি দেয় নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে ওরা পালিয়ে এসেছে। আরে ওখানে গোলাগুলি হচ্ছে ওরা (মিয়ানমার সৈন্য) প্রাণভয়ে পালিয়ে এসেছে। এর সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির কী সম্পর্ক?’
আইআরএফ সভাপতি হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক সুজনের সঞ্চালনায় এ সময় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাংবাদিক নেতা ওমর ফারুক, সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল প্রমুখ।