Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 10:22 pm

সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ডিজির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সমুদ্রসম্পদ আহরণের বিষয়ে জ্ঞান সৃষ্টির জন্য ২০১৫ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া স্বতন্ত্র আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বাংলাদেশ সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বরি)। কিন্তু শুরু থেকেই যেন নানা অনিয়ম পিছু ছাড়ছে না প্রতিষ্ঠানটির। নিয়োগ বাণিজ্য, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে জালিয়াতি, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা কেলেঙ্কারি লেগেই রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। বর্তমানে সংস্থাটির মহাপরিচালকের (ডিজি) দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেট্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তিনি। যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একর পর এক নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে।

জানা যায়, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। যদিও সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে তার চেয়ে অনেক যোগ্য প্রার্থী সে সময় ছিল। নিয়োগের পর থেকেই তিনি তার ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন কোম্পানিকে প্রতিষ্ঠানের কাজ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এ বিষয়টির সঙ্গে তার স্বামী নিজে যুক্ত। এরই মধ্যে একটি কোম্পানিকে ৯ কোটি টাকার একটি কাজ দেয়া হয়েছে। যে কাজের জন্য শুধু সেই কোম্পানিটিই আবেদন করেছে। যদিও সরকারি ক্রয়বিধিমালা অনুসারে একাধিক আবেদনের মধ্য থেকে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে কাজ দেয়ার কথা।

এছাড়া ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে তিনি নিয়ম-বহির্ভূতভাবে সীমা রানী নামের এক কর্মকর্তাকে অপসারণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাকে চাকরি চ্যুতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ওই পদের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি থাকা আবশ্যক। কিন্তু সীমা রানীর তা নেই। তবে সীমা রানী দাবি করেছেন তার পিএইচডি ডিগ্রি আছে। তিনি অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরির আবেদন করেছিলেন এবং পরবর্তীতে মূল সার্টিফিকেটের অনুলিপি প্রতিষ্ঠানে জমা দিয়েছেন। কিন্তু কৌশলে সীমা রানীর ফাইল থেকে পিএইচডি সনদের অনুলিপি গোপনে সরিয়ে ফেলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা নাটক সাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি এই চাকরিচ্যুতির ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি ড. তৌহদা রশীদ। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগও দেয়া হয়নি এবং তাকে যে অপসারণ করা হয়েছে সে বিষয়ে ভুক্তভোগীকে অবহিতও করা হয়নি।

প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আওয়ামী লীগ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা বলে তিনি ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তটস্থ রাখতেন। এমনকি ভীতি প্রদর্শনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিজের তোলা ছবি প্রদর্শন করতেন। তাছাড়া ইনস্টিউিটের মূল কার্যালয় কক্সবাজারে হলেও তিনি ঢাকা অফিসেই সবসময় অফিস করেন। ইনস্টিটিউট যেন তার কাছে এক প্রমোদ ভ্রমণের স্থান। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তিনি তার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে যান এবং ইনস্টিটিউটের সব ধরনের সুবিধা ব্যবহার করেন। এ কারণে ইনস্টিটিউকের কক্সবাজার কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে পারেন না। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে টু শব্দও করতে সাহস পাননি। কারণ তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের খুবই ঘনিষ্ঠ।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইল ড. তৌহিদা রশীদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সীমা রানীর নিয়োগটাই ছিল অবৈধ। সীমা রানী যে পদে চাকরি করতেন সেই পদে নিয়োগের সময় পিএইচডিসহ যে যে যোগ্যতার কথা বলা হয়েছিল তার সে যোগ্যতা ছিল না। পরে যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, তার পিএইচডির সনদ নেই।’
এ বিষয়ে সীমা রানী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটির একজন সদস্য। আমার পিএইচডি ডিগ্রির সনদ ও অন্যান্য ডকুমেন্টের ঘাটতি থাকলে আমি কীভাবে এ কমিটির মেম্বার হলাম?’ তিনি বলেন, ‘ইনস্টিটিউটের চাকরির প্রবিধানমালা অনুযায়ী, এসব বিষয়ে দেখার দায়িত্ব বোর্ড মেম্বার ও যাচাই-বাছাই কমিটির। একজন মহাপরিচালকের না। তাছাড়া বর্তমান মহাপরিচালক আমার নিয়োগের অনেক পরে দায়িত্ব পেয়েছেন। কাজেই তিনি আমার নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গেই ছিলেন না। তারা নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে তিনি নিয়ম-বহির্ভূতভাবে আমাকে অপসারণ করেছেন। অপসারণের আগে আমাকে কোনো ধরনের কারণ দর্শানো হয়নি। এমনকি চাকরি থেকে অপসারণের চিঠির কোনো অনুলিপিও দেয়া হয়নি।’

এর আগে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব সাইদ মাহমুদ বেলাল হায়দার। তার বিরুদ্ধেও নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে বেশকিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে তাকে সেখান থেকে অপসারণ করা হয়। বেলাল হায়দারের স্থলাভিষিক্ত হয়ে তৌহিদা রশীদ একই ধরনের অনিয়ম অব্যাহত রেখেছেন বলে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল জানিয়েছে।