শেয়ার বিজ ডেস্ক: স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ‘কপ২৬’ জলবায়ু সম্মেলনে জীববৈচিত্র্য রক্ষার প্রতিশ্রুতির ‘ফুলঝুরি’ দিচ্ছেন বিশ্বনেতারা। সম্মেলনের শুরুতেই বন উজাড় কার্যকলাপ শূন্যে নামিয়ে আনা, মিথেন গ্যাস হ্রাস এবং সমুদ্র রক্ষার অঙ্গীকারসহ বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশ্বনেতারা। তবে পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এসব প্রতিশ্রুতি ধোপে টিকবে না। কারণ অতীতের অনেক প্রতিশ্রুতিই এখনও বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। খবর: রয়টার্স।
গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৫টি দেশ তাদের জলসীমার পরিবেশ সুরক্ষায় নেয়া পদক্ষেপ আরও বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছে। তবে তাদের এ প্রতিশ্রুতিতে সমুদ্রে চলমান ধ্বংসযজ্ঞ পাল্টে দেয়ার আকাক্সক্ষা নেই বলে অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তাপমাত্রার চেয়ে সর্বোচ্চ দেড় ডিগ্রি ওপরে রাখার লক্ষ্যকে ধরে রাখতে গ্লাসগোয় জলবায়ু সম্মেলনে মিলিত হওয়া বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত যেসব প্রতিশ্রুতি এসেছে, সমুদ্র রক্ষার প্রতিশ্রুতি তার মধ্যে একটি।
সম্মেলনে বিশ্বনেতারা যেসব সমঝোতায় পৌঁছেছেন তার মধ্যে রয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে বন বিনাশের অবসান এবং ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন গ্যাস নির্গমন ২০২০ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ কমানোর অঙ্গীকারও। বিজ্ঞানী ও পরিবেশকর্মীরা জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন ‘কপ২৬’-এ অংশ নেয়া দেশগুলোর প্রতি। টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনা পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে বলে যুক্তি তাদের।
গ্লাসগোয় মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু-বিষয়ক দূত জন কেরি ১৫তম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সমুদ্রসীমা রক্ষার অঙ্গীকারে’ স্বাক্ষর করার ঘোষণা দেন। ইন্দোনেশিয়া, জাপান, কেনিয়া, চিলি ও নরওয়ের মতো সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো আগেই এ অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করেছিল।
সমুদ্র রক্ষার এ প্রতিশ্রুতিতে সমুদ্রভিত্তিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিল্পকারখানার কার্বন নিঃসরণ হ্রাস ও গবেষণায় আরও বিনিয়োগের কথা বলা হয়। কিন্তু এতে মাছ ধরা শিল্পের মতো সমুদ্রের সম্পদ শুষে নেয়া বিভিন্ন খাতে সরকারগুলোর বার্ষিক বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি তুলে দেয়ার কথা উল্লেখ না থাকায় পরিবেশকর্মীদের উদ্বেগ কমছে না। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা গ্রিনপিস এ প্রতিশ্রুতিকে ‘দুর্বল’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে।
গ্রিনপিস বলছে, ‘আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে সামুদ্রিক অভয়ারণ্যের একটি নেটওয়ার্ক তৈরিতে পদক্ষেপ দেখতে চাই, যার মধ্যে আমাদের সমুদ্রের অন্তত ৩০ শতাংশ থাকবে।’
গ্রিনপিস ইউকের লুইজা ক্যাসন বলেন, ‘আমরা চাই এমন এলাকা যেখান থেকে বাণিজ্যিকভাবে কিছু তোলা হবে না, যেখানে প্রকৃতি ও মাছের সংখ্যা পুনরুদ্ধারের কার্যক্রমও বাড়তে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইএসআরআ ই’র প্রধান সমুদ্রবিজ্ঞানী ডন রাইট রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনা নিয়ে পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে ‘কপ২৬’-এ অংশ নেয়া প্রতিনিধিদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, সমুদ্রে মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট কার্বন নিঃসরণকে আমরা এখন একেবারেই গুরুত্ব দিচ্ছি না।
পুতিন-জিনপিংয়ের সমালোচনায় বাইডেন: এদিকে জলবায়ু সম্মেলনে সরাসরি অংশ নেননি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দেশ দুটির সরকারপ্রধান উপস্থিত না থাকায় কঠোর সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার সম্মেলন চলাকালে এক বক্তৃতায় জো বাইডেন বলেন, জলবায়ুর মতো বড় ইস্যুতে রাশিয়া ও চীনের প্রেসিডেন্ট উপস্থিত নেই।
জো বাইডেন বলেন, বিশ্বের মোড়ল হিসেবে চীন নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে অন্যান্য দেশের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করছে বেইজিং। কিন্তু জলবায়ু সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতি একটি বড় ভুল। আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সমালোচনায় বাইডেন বলেন, রাশিয়ার বনাঞ্চলগুলো পুড়ছে এবং সেসব বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নিশ্চুপ রয়েছেন। অবশ্য উভয় দেশই এ সম্মেলনে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে।