সম্পদ বিবরণী দাখিলের বিধান প্রতিপালন হোক

দেশে উন্নয়ন, সুষম সম্পদ বণ্টন ও বৈষম্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে মানুষ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কাক্সিক্ষত সেবা পান না। ফলে ব্যক্তিগত অনেক উদ্যোগ বিকশিত হয় না। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনে। এই দুর্নীতি প্রতিরোধের অংশ হিসেবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব সরকারি কর্মচারীর সম্পদ বিবরণী দালিখের নির্দেশ দিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব হবে তা নির্ভর করছে আমলাতন্ত্রেও সদিচ্ছার ওপর। কারণ অতীতে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। এবারের উদ্যোগটি যাতে সফল হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হবে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দিতে হয়। এরপর পাঁচ বছর অন্তর সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির বিবরণী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দেয়ার নিয়ম। দুর্নীতি রোধ এবং চাকরিজীবীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আচরণবিধিমালায় এমন নিয়ম থাকলেও কাগজের এই নিয়ম মানা হয় না। এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি দিলেও অগ্রগতি হয়নি।
বাংলাদেশের সরকারি চাকরিজীবীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। ফলে তারা নানা কৌশলে তাদের ওপর আরোপিত বিধানগুলো পরিপালন থেকে দূরে থাকেন।

এমনকি উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও উপেক্ষা করার নজির রয়েছে এবং বিচার বিভাগের ওপর আমলাতন্ত্রের প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি গোপন কোনো বিষয় নয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দাখিলের বিধান পরিপালন করা অত্যন্ত দুরূহ বটে। বিগত সরকার গণতন্ত্রকে পাশ কাটিকে আমলাতন্ত্র ও পুলিশের ওপর ভর করে ক্ষমতায় টিকেছিল বলে কথিত রয়েছে। ফলে আমলাদের যেসব নিয়ম-কানুন পরিপালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেগুলো তাদের মানতে সরকার বাধ্য করতে পারেনি।

উল্টো সরকারকেই চাকরিজীবীরা নানাভাবে চাপে রেখেছেন। বর্তমান সরকারের সে ধরনের কোনো সমস্যা এ ক্ষেত্রে নেই। তাছাড়া পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে একটি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। কাজেই যেসব প্রত্যাশা নিয়ে মানুষ গণ-অভ্যুত্থানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেসব জন-আকাক্সক্ষা পূরণে বর্তমান সরকারকে কাজ করতে হবে। এসব জন আকাক্সক্ষার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা। দুর্নীতি রোধের কৌশল হিসেবে সব সরকারি কর্মচারীর সম্পদের হিসাব দাখিলের যে বিধান চালু করা হয়েছে সেটি প্রতিপালন হওয়া আবশ্যক। সরকার এ বিষয়টি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০