সম্পাদক পরিষদের আপত্তি নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনার সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আটটি ধারা নিয়ে লিখিত আপত্তি ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ উপস্থাপন করেছে সম্পাদক পরিষদ। আইনটি সংসদে পাস হলেও রাষ্ট্রপতি এখনও স্বাক্ষর না করায় বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে সম্পাদক পরিষদের আপত্তিগুলো মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করার কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
গতকাল তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে তথ্য মন্ত্রণালয়ে সম্পাদক পরিষদের নেতাদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী (আইসিটি) মোস্তাফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সম্পাদক পরিষদ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবীর, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ইনকিলাব সম্পাদক বাহাউদ্দিন আহমেদ এবং সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম জানান, বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা সম্পর্কে আপত্তি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। এসব ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। এসব ধারার বিরুদ্ধে আপত্তি ও কিছু সুপারিশ সরকারের তিন মন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আইনটির ২১ নম্বর ধারা সম্পর্কেও আপত্তি জানানো হয়েছিল। তবে সরকারের ব্যাখ্যায় সম্পাদকরা সন্তুষ্ট।
তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের একটি আইন হোক তা আমরা চাই, কিন্তু তা যেন স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি না করে। সংসদে পাস হওয়া এ আইনটি বাতিল নয়, আমরা সংশোধন চাই। সে কারণে এই আইনের বিষয়ে আমাদের আপত্তিগুলো আমরা লিখিত আকারে দিয়েছি। আইনটি সংসদে পাস হওয়ার আগে আমরা মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটির সঙ্গে বসেছিলাম এবং অনেক পথ এগিয়েছিলাম। সংসদীয় কমিটির সঙ্গে দুই দফা আমরা বসেছি। তবে কথা থাকলেও তৃতীয় দফা আর বসা হয়নি। সংসদীয় কমিটি আমাদের সঙ্গে তৃতীয় দফা না বসে কেন আইনটি সংসদে পাস করেছে সেটা আমরা জানি না। তবে তথ্যমন্ত্রী আবারও আইনটির বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বসার উদ্যোগ নিয়েছেন, তার এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কয়েকটি ধারার বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের লিখিত সুপারিশ পেয়েছি। এখানে আমরা সবাই একমত হয়েছি যে, পরবর্তী মন্ত্রিসভার বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও আইসিটিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে সঙ্গে নিয়ে এই লিখিত সুপারিশগুলো আমি উপস্থাপন করব। মন্ত্রিসভা বৈঠকের অনুমোদনসাপেক্ষে আমাদের দেওয়া টার্ম অব রেফারেন্স (টিওআর) অনুযায়ী পরবর্তীতে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে আবারও আমরা আলাপ-আলোচনায় বসব। জাতিসংঘে অধিবেশনে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী সোমবার দেশে ফিরবেন। ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠক আছে। কিন্তু ওই বৈঠকে অতিরিক্ত এজেন্ডা থাকায় এটি উপস্থাপন সম্ভব হবে না। এরপরের বৈঠকে এটি উপস্থাপন করা হবে।’
তিনি জানান, ২১ ধারা যেভাবে আছে সেভাবে থাকবে, বাকিগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইনটির বিষয়ে সম্পাদক পরিষদ যে উদ্বেগ জানিয়েছে সেই উদ্বেগের বিষয়ে আমরা শ্রদ্ধাশীল। তাদের দেওয়া আপত্তিগুলো বোঝার চেষ্টা করেছি, লিপিবদ্ধ করেছি। তবে তাদের আপত্তিগুলো আরও পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য তাদের সঙ্গে আরও কয়েকবার বৈঠক করতে হতে পারে। সরকার মনে করে গণমাধ্যমের কর্মীদের নিরাপদ রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আইনটি সংসদে পাস হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতির দরবারে এটি এখনও যায়নি। রাষ্ট্রপতির সই না হওয়ায় আইনটি এখনও কার্যকর নয়। তবে দেশে ডিজিটাল অপরাধ বেড়ে গেছে। এসব এখন আপদ, বিপদ এবং উৎপাতে পরিণত হয়েছে। এর থেকে রক্ষা পেতেই এই আইন করা হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাক-স্বাধীনতা রক্ষায় সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সম্পাদক পরিষদ এ আইন নিয়ে যে উদ্বেগ ও আশঙ্কা জানিয়েছে তা দূর করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার।’
আইনটি নিয়ে সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে সরকার আরও বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই এখনই কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। তার এ মন্তব্যের পর সম্পাদকরাও এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০