নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদ্যুৎচালিত রিকন্ডিশন্ড মোটরগাড়ি পরিবেশবান্ধব হলেও তার আমদানি হচ্ছে না দেশে। সম্পূরক শুল্কের কারণে দাম বেশি হওয়ায় এটি আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে এ ধরনের গাড়ির আমদানি মূল্যের ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা আছে। আগামী বাজেটে এ ধরনের গাড়ির আমদানি বৃদ্ধিতে সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে আমদানিকারকরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আনুষ্ঠানিক প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ প্রস্তাব দিয়েছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডা। আগামী অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে গতকাল রোববার থেকে এনবিআর সম্মেলন কক্ষে খাতভিত্তিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। প্রথম দিনেই রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে এ বৈঠকে এনবিআরের কাস্টমস পলিসি, ভ্যাটনীতি ও আয়কর-বিষয়ক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে বারভিডার সভাপতি হাবিবউল্লাহ ডন, মহাসচিব হাবিবুর রহমান, সাবেক সভাপতি আবদুল হকসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া এ সময় বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব গাড়ি আমদানি বৃদ্ধির জন্য আমরা চেষ্টা করব। তবে দেশের ভেতরে গাড়ি সংযোজন করে অনেক প্রতিষ্ঠান। তারা ধীরে ধীরে যাতে গাড়ি নির্মাণ শিল্পে রূপ নিতে পারে সেদিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। এজন্য আমদানি-নির্ভরতা কমানো দরকার। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
বারভিডার দাবির প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘শতভাগ শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি আপনারা করবেন না। কারণ আমাদের বাজেটের আকার বাড়ছে। রাজস্ব আয়ও বাড়াতে হবে। রাজস্ব আয় না বাড়লে ট্যাক্স-জিডিপির হারে অসামঞ্জস্য সৃষ্টি হবে, যা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। আমরা আপনাদের দাবিগুলোর মধ্যে অবচয় সুবিধার পুনর্বিন্যাস, রিকন্ডিশন্ড ও হাইব্রিড গাড়ির জন্য বাস্তবসম্মতভাবে আলাদা আলাদা সিসি সø্যাব নির্ধারণ ও বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য শুল্ক হ্রাসের বিষয়টি বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখব।’ এ বিষয়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের তথ্যানুসন্ধানের নির্দেশনাও দেন তিনি।
বারভিডার প্রস্তাব উত্থাপন করে হাবিবউল্লাহ ডন বলেন, ‘মানসম্মত হওয়ায় দেশের ৯০ শতাংশ ক্রেতাই জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কেনেন। কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থায় পাঁচ বছরের চেয়ে পুরোনো গাড়ি কেনার সুযোগ নেই আমাদের। যে পাঁচ বছরের সুযোগ আমাদের দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যেও প্রথম দুই বছর আমরা কোনো অবচয় বা মূল্যহ্রাসের সুবিধা পাই না।’
তিনি তার প্রস্তাবে বলেন, চলতি বছরে তৈরি হওয়া গাড়ির জন্য আমরা অবচয় সুবিধা চাই না। তবে এক বছরের পুরোনো গাড়ির জন্য ১০ শতাংশ অবচয় প্রয়োজন। আর ৫ বছরের পুরোনো গাড়িতে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ অবচয়ের প্রস্তাব করেন তিনি, বর্তমানে যা ৪০ শতাংশ রয়েছে।
হাইব্রিড গাড়ি আমদানির প্রসঙ্গে বারভিডার নেতারা বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী গত পাঁচ বছর ধরেই ব্র্যান্ড নিউ হাইব্রিড গাড়ির আমদানির সুযোগ দিয়ে আসছিলেন, কিন্তু তাতে দেশে পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানিসাশ্রয়ী এ গাড়ির আমদানি হয়নি। কিন্তু গত বছর প্রথমবারের মতো হাইব্রিড রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়। এর পরই গত ছয় মাসে দুই হাজার হাইব্রিড গাড়ি বাংলাদেশে এসেছে। তবে হাইব্রিড গাড়ির ইঞ্জিনের সর্বনিম্ন সিসি-সø্যাব ১৬০০সিসি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অবাস্তব। এ ধরনের গাড়ির সিসি-সø্যাব সর্বনিম্ন ১৮০০সিসি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। এ ধরনের গাড়িতেও সম্পূরক শুল্কের হার পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব করা হয়। এতে সর্বনিম্ন শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ সময় বারভিডার সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক আবদুল হক বলেন, শুধু রাজস্বের দিকে না তাকিয়ে শিল্প ও বাণিজ্যকে উৎসাহিত করুন। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে। তাছাড়া পরিবেশবান্ধব গাড়ির প্রতি সুদৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। মাইক্রোবাসের মতো নিরাপদ পরিবহনের ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপিত রয়েছে, অথচ হিউম্যান হলারের মতো বিপজ্জনক গড়িকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। এটা দুর্ঘটনা বৃদ্ধির কারণ।
প্রবীণ এ গাড়ি ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘দেশি শিল্পকে সহায়তা দেওয়া ভালো। কিন্তু দেশে এখনও কোনো গাড়ি উৎপাদিত হচ্ছে না। শতভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশি নি¤œমানের গাড়ি এনে সংযোজন (অ্যাসেম্বল) করা হচ্ছে। সংযোজন কোনো শিল্প নয়। ৩০ শতাংশও যদি নিজস্ব উৎপাদন হতো তাহলে তাদের সুবিধা দেওয়া যেত।’